ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় সংবর্ধনায় এ্যাটর্নি জেনারেল

যুগান্তকারী রায়ে চির স্মরণীয় থাকবেন বিচারপতি মোজাম্মেল

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

যুগান্তকারী রায়ে চির স্মরণীয় থাকবেন বিচারপতি মোজাম্মেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিলেন বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। আইনজীবী ও বিচারপতি হিসেবে উচ্চ আদালতে ৩৬ বছর কাটিয়েছেন তিনি। আনুষ্ঠানিক বিদায় নিলেও আজ শুক্রবার পর্যন্ত তিনিই দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে থাকবেন। পরে আগামীকাল শনিবার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের আনুষ্ঠানিক বিদায় উপলক্ষে সুপ্রীমকোর্টের এক নম্বর বিচারকক্ষে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। হরতাল- অবরোধের মধ্যেও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল উচ্চ আদালতের এক নম্বর বিচারকক্ষ। আইনজীবীদের মধ্য থেকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল বাসেত মজুমদার সংবর্ধনায় বক্তব্য রাখেন। বিদায়ী বক্তব্য দেন বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। ১৯৪৮ সালের ১৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ১৯৬২ সালে কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৪ সালে গুরু দয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী পান ১৯৭০ সালে। ১৯৭১ সালে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করেন। ওই বছরই নিম্ন আদালতে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত হন। এর পর যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রী লাভ করেন। শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। নাইজিরিয়ার মাইডিগুরি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন। পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে ঢাকার সিটি ল্য কলেজ ও ধানম-ি ল্য কলেজে কাজ করেন তিনি। জনাব মোজাম্মেল হোসেন ১৯৯৮ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই আপীল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের ১৮ মে তিনি দেশের ২০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিদায় সংবর্ধনায় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন ইকবাল হলে তার কক্ষ পাকিস্তানী সৈন্যরা পুড়িয়ে ফেলে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ৫ম সংশোধনী মামলা, ৭ম সংশোধনী মামলা, জেলহত্যা মামলা, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা, মানি লন্ডারিং মামলাসহ (তারেক রহমান) বিভিন্ন মামলায় বিচারক হিসেবে ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন। যুদ্ধাপরাধের আপীলে কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায়ও তিনি বিচারক হিসেবে ছিলেন। মামলাগুলো ঐতিহাসিক মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধান সমুন্নত রাখার প্রয়াসে আপনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। যুগান্তকারী রায় প্রদানের মাধ্যমে আপনি নিজেকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। তিনি বলেন, আমরা এই আসনে আপনাকে আর দেখব না। কিন্তু একজন বিচারক হিসেবে আপনার কার্যাবলী আমাদের সর্বদা স্মরণ থাকবে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা আপনার রায় ও সিদ্ধান্তের শরণাপন্ন হব এবং সর্বদাই আমাদের মানসলোকে আপনার উপস্থিতি অনুভব করব। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন বিচারক বেঁচে থাকেন তাঁর প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের সাংবিধানিক স্কিমে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমান ভূমিকা রয়েছে। এই তিন অর্গানের মধ্যে চেক এ্যান্ড ব্যালেন্স রাখতে হবে। কেউ তাদের সীমা অতিক্রম করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, তিন অর্গানের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়ক। অনুষ্ঠানে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এবং সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীরাও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিডিনিউজ জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের বিদায় সংবর্ধনায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা অনুপস্থিত ছিলেন।
×