ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আর কিছু নয়। ক্ষমতা চাই। শুধু ক্ষমতা। এই ক্ষমতার লোভ যেন মানুষকে মানুষ থাকতে দিচ্ছে না। এক একজন হিংস্র হায়েনা হয়ে উঠছে। শাপ-শকুন- শেয়ালের চেহারায় দৃশ্যমান হচ্ছে মানুষ। এই মানুষগুলোর একটি মাত্র ব্যবসা রাজনীতি। রাজনীতির নামে এরা নিরীহ নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করছে। যাদের জীবন এমনিতেই দুর্বিষহ, বহু ব্যথা বেদনায় জীবন্মৃত যারা, তাদের হত্যা করা হচ্ছে প্রতিদিন। জলজ্যান্ত মানুষের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে! কি ভয়াবহ! কত নির্মম এই রাজনীতি! রক্ত মাংসের মানুষ পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। সবার চোখের সামনে ধরফর করে মরছে। নারী-শিশুও এই নির্মম মৃত্যুর ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট এখন পরিপূর্ণ। প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসছে অগ্নিদগ্ধ শরীর। পুড়ে যাওয়া প্রাণ। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম মৃত্যু যেন এখানে। বৃহস্পতিবারও মারা গেছে একজন। নামÑ আবুল কালাম হাওলাদার। অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় আহত গাড়িচালক দুপুরে শেষ বিদায় নেন। গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাড়ির ভেতরে থাকা অবস্থায় আক্রমণের শিকার হন তিনি। এরপর থেকে বার্ন ইউনিটে। কালামের শ্বাসনালি, হাত-পা ও মুখম-লসহ শরীরের ৩৩ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। বার্ন ইউনিটে ভর্তি বাকিদের কারও মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওসব মুখে কোন কথা নেই। অভিশাপ, শুধু অভিশাপ দিচ্ছে। অথচ খুনীরা নির্বিকার। তাদের মনে পৈশাচিক আনন্দ। টেলিভিশনে দাঁত কেলিয়ে বলছে, এটা আন্দোলন! গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন! বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধপরাধীদের জোট রাস্তায় নেমে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়তে এদের হাত একবার কাঁপছে না। বিএনপির ডাকা অবরোধের মধ্যে বুধবার ভরদুপুরে গুলিস্তান হকি স্টেডিয়ামের সামনের এলাকায় বন্ধন পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। প্রায় একই সময়ে ধানম-ির ২৭ নম্বরের মতো ব্যস্ত সড়কে একুশে পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়। আসাদগেটে আড়ংয়ের সামনে একটি প্রাইভেট কার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। বৃহস্পতিবারও ছোট-বড় একাধিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। রাজধানীবাসী দিব্য চোখে দেখছেন এসব কারা করছে। এরপর টেলিভিশনের সামনে এসে খুনীরা দাঁত কেলিয়ে বলছে, সব সরকারের কাজ! হাস্যকর যুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে জমে উঠছে টকশো। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা শুদ্ধ বাংলায় কোমলমতি চেহারা করে বলছেনÑ এর নাম আন্দোলন! গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন! রাজধানীবাসী এমন ভ-ামোর নিন্দা জানাচ্ছে। অলিতে গলিতে চায়ের দোকানে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছেন, এই দেশের কি হবে? গত কয়েকদিনের ঘটনায় অনেকেই যারপরনাই ক্ষুব্ধ। ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছে। শাহবাগে এ অংশটির কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল তাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার কি পদক্ষেপ নেয় তা দেখতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এ পর্যায়ে মনে করছেন, অনেক হয়ে গেছে। সহসাই তাঁরা পথে নামতে চান বলে জানান আরিফুল নামের একজন। বলেন, এভাবে মরার কোন মানে হয় না। মরার আগেই মরতে হবে। তবেই কেবল বাঁচা সম্ভব। এদিকে, টানা অবরোধের মাঝেও জীবন থেমে থাকে না। আর তাই যথারীতি চলছে অফিস-আদালত-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হচ্ছে। রাস্তার যানজটও নিয়মিত। বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে গিয়ে দেখা গেল, সরকারী বেসরকারী সব অফিস কর্মমুখর। শাপলা চত্বরের ঠিক পাশে একদল নারী শ্রমিক। চোখ সেখানে আটকে গেল। এই নির্মাণ শ্রমিকরা আপন মনে কাজ করে চলেছেন। হাড়ভাঙা খাটুনি। খেতে হবে। আর কাজ করলে তবেই খাওয়া। মাথায় তাই ইটের বোঝা। অবরোধ তাঁদের থামাতে পারেনি। এমন দৃশ্য সত্যি আশাবাদী করে তোলে। এবার মাঘের কথা। পৌষ শেষে শুরু হয়েছে শীতের দ্বিতীয় মাস মাঘ। বাংলা মাসের আজ তৃতীয় দিন। হ্যাঁ, শীতেই গেছে পৌষ। তবে ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ বলে কথা। মাঘে বরাবরই বেড়ে যায় শীত। রাজধানী ঢাকায় সে লক্ষণ স্পষ্ট। শীতের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। এখন দিন কিছুটা সহনীয় বটে। রাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, যে কোন সময় বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা। এদিকে, ১ ও ২ মাঘ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পৌষ সংক্রান্তি। এ উপলক্ষে পুরনো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন। ১ মাঘ সকালবেলায় ঘুড়ি নিয়ে বিভিন্ন বাড়ির ছাদে ওঠে দূরন্ত কিশোরের দল। বুধবার গে-ারিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের আমেজ। আকাশে উড়ছিল রঙিন ঘুড়ি। একই দিন শাহবাগের গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে পৌষ সংক্রান্তির বিশেষ ঘুড়ি র‌্যালি বের করে ঢাকাবাসী। শিশু-কিশোররা ঘুড়ি নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে র‌্যালিতে অংশ নেয়। এ সময় ছিল বাদ্যবাজনাও। ফলে উৎসব ছড়িয়ে পরে আশপাশের এলাকায়।
×