ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বলির পাঁঠা বানাতেই কী রিয়াজের ওপর হামলা!

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

বলির পাঁঠা বানাতেই কী রিয়াজের ওপর হামলা!

শংকর কুমার দে ॥ পর্দার অন্তরাল থেকে অদৃশ্য সুতার টানে কলকাঠি নেড়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের আগুনে আরও লাশ ফেলার মাধ্যমে ফায়দা লোটার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশ-বিদেশে। এজন্য বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার বিষয়ে রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণে লাভ লোকসানের নানা হিসাব-নিকাশ কষছেন গোয়েন্দারা। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্র সঙ্গে ফোনালাপ কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেস সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনার রেশ না কাটতেই রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটিতে বেনিফিশিয়ারি হয়েছে কে? রিয়াজ রহমানকে বলির পাঁঠা করে বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবরোধ আন্দোলনকে চাঙ্গা করার ছক কষা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ যখন কোনভাবেই সচল ও সক্রিয় করা যাচ্ছিল না তখনই বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্র সঙ্গে ফোনালাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেস সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় বেশ বেকায়দায় পড়ে যায় তারা। এই ঘটনায় দেশ-বিদেশে যখন জোটের নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে বিএনপির ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয় তখনই ঘটে রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটি। রিয়াজ রহমানকে যে হত্যার উদ্দেশে হামলা করা হয়নি তা প্রাথমিক তদন্তে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। তার ওপর হামলার ঘটনাটিকে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা। রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার গভীর ষড়যন্ত্রে লাভ লোকসানের হিসাবে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির দাবি অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর হামলা হয়েছে। সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে, তার ওপর হামলা হবে কেনÑ সরকারের এতে লাভ কী? আর বিএনপির ডাকা অবরোধ যখন কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না তখন রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটি হালে পানি পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। ভারতে ফোনালাপ কেলেঙ্কারী ও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনা সামনে ধামাচাপায় ফেলে দিয়ে রিয়াজ রহমানের ঘটনাটিকে এনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে উদ্বেগ আদায় করা হয়েছে। বিএনপিতে এত পরিচিত ও ঝানু রাজনীতিক থাকতে একজন পেশাদার কূটনীতিক যিনি বিএনপির রাজনীতিতে সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত সেই রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার জন্য বেছে নেয়া হলো কেন? পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত রিয়াজ রহমানের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকায় দ্রুত তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচন, সংলাপের বিষয়ে প্রভাবশালী দেশগুলো থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি হবে। অবরোধ আন্দোলনের মধ্যে যারা সহিংসতা চালাচ্ছে তাদের মনোবল চাঙ্গা করা যাবে। আবার মাঠে ময়দানে তৎপরতার সুযোগ ঘটবে জামায়াতÑশিবিরের যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী গোষ্ঠীর। জামায়াতÑশিবিরের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধে বিদেশে যে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে তারাও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশে ব্যাপক অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় এই মহলের ফায়দা লোটার পথ প্রশস্ত হয়েছে তৃতীয় পক্ষের। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিএনপির কাঁধে ভর করে তৃতীয় পক্ষ নানা ধরনের ছক কষে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে বেড়াচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল হানিফ রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে খালেদা জিয়া এখন লাশের রাজনীতি শুরু করেছেন। একইদিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পাল্টা আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বলেন, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করার জন্য সরকার গুপ্তঘাতক নামিয়েছে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।
×