ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চালকের হদিস নেই ॥ পরিবারও মামলা করেনি

রিয়াজ রহমানকে গুলি করা নিয়ে নানা প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

রিয়াজ রহমানকে গুলি করা নিয়ে নানা প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিভ্রান্তি কাটছে না। অদ্যাবধি চালকের হদিস মেলেনি। চালক সম্পর্কে রিয়াজ রহমানের পরিবার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে সুস্পষ্ট কোন তথ্য জানা যায়নি। আহত রিয়াজ রহমান স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়াসহ কথাবার্তা বলছেন। ঘটনার দিন হামলার প্রাথমিক বর্ণনা দেয়ার পর আর কোন বক্তব্য দেননি রিয়াজ রহমান। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট রিয়াজ রহমানের চিকিৎসকদের কাছ থেকে ও ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়ের না করায় পুলিশকে বাদী হয়ে মামলা করতে হয়েছে। এমন নানা কারণে রিয়াজ রহমানের উপর হামলার ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তদন্তকারী সূত্রগুলো বলছে, ঘটনাস্থলে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় অনেক দূরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ইন্ধনদাতাসহ হামলাকারীদের গ্রেফতারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবিহউদ্দিনের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং রিয়াজ রহমানকে গুলিবিদ্ধ করার পর তাঁর গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা একসূত্রে গাঁথা। দুইটিই পরিকল্পিত হামলা। রিয়াজ রহমানকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করা হয়নি, সে বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন কর্মসূচী চাঙ্গা করার ইস্যু তৈরি করতেই ঘটনা দুইটি ঘটানো হয়েছে। বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত শামসুদ্দিন দিদার জনকণ্ঠকে বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে রিয়াজ রহমান একাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে যান। সাক্ষাত শেষে রিয়াজ রহমানকে গুলশান ৯০ নম্বর সড়ক পর্যন্ত এগিয়ে দেই। তিনি একাই হেঁটে গাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রিয়াজ রহমানের মেয়ে আমেনা রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে সাক্ষাত করে গাড়িতে ফেরার পর হামলার ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরের দক্ষিণ দিকের ৪৬ নম্বর সড়কের ১০ তলা বিলকিস টাওয়ারের নিচে ঢাকা ব্যাংকের সামনে ঘটনাটি ঘটে। তিনটি মোটরসাইকেলে ৮ জন সেখানে হাজির হন। তারা রিয়াজ রহমানকে গাড়ি থেকে বের করে কোমরের কাছে ও হাঁটুর কাছাকাছি গুলি করে। এরপর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। চালক দ্রুত নেমে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ আহত রিয়াজ রহমানকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ১৪ জানুয়ারি বুধবার ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অপারেশন বিভাগের পরিচালক ডাঃ দবির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, রিয়াজ রহমানের ক্ষতস্থান দিয়ে কিছু রক্ত ঝরছিল এবং রোগীকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। ক্ষতের মুখগুলো অনেকটা পুড়ে যাওয়া। কোন তপ্ত ধাতব পদার্থ বিদ্ধ হয়ে ভেদ করে বের হওয়ার মতো। রোগীর শরীরে ধাতব পদার্থ না থাকায় অপারেশনের প্রয়োজন নেই। শুধু ক্ষতস্থান পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। রোগী পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত। বুলেট বা কোন ধাতব পদার্থ রোগীর হাড় ভেদ করেনি। রক্তনালী ভেদ করলে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক হাঁটাচলা খানিকটা ব্যাহত হতে পারে। যদিও সে সম্ভাবনা খুবই কম। সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরের কাছেই বাম দিকে সড়কটির অবস্থান। রাস্তার দুই পার্শ্বে অধিকাংশ সময়ই গাড়ি পার্কি করা থাকে। ঘটনাস্থলের পাশে আটতলা সেবা ভবন। তার পাশেই একটি ছয়তলা ভবনে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। রাস্তাটি আবার টার্ন করে ডরিন টাওয়ারের সামনের রাস্তায় গিয়ে মিশেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিয়াজ রহমান যেখানে হামলার শিকার হয়েছেন, সেখানকার কোন ভবনে সিসিটিভি ছিল না। সরেজমিনে দেখা গেছে, ডরিন টাওয়ারের সামনে যে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে, সেখান থেকে ঘটনাস্থল দেখা যায় না। ঘটনাস্থলটি সিসিটিভি থেকে পুরোপুরি আড়ালে। শুধু গোলচত্বরসহ রাস্তার খানিকটা অংশ সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। তারপরও তিনটি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা চলছে। ফুটেজগুলো খুবই ঝাপসা। রাত ও গাড়ি আর রাস্তার আলোর কারণে ফুটেজগুলো একেবারেই ঝাপসা। ঝাপসা ফুটেজে চারটি মোটরসাইকেলের অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে তিনটি মোটরসাইকেলে থাকা আরোহীদের সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। কিন্তু মোটরসাইকেলের গতি সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর পর সাধারণত যেমন গতি থাকা স্বাভাবিক তেমন নয়। মনে হচ্ছে, রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলা মোটরসাইকেল। সূত্রগুলো বলছে, ঘটনার পর থেকেই চালকের হদিস নেই। তার সন্ধান চলছে। চালকের ঠিকানা জোগাড় করে তার গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চালকের পরিবারের তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোন অভিযোগও জমা পড়েনি। রিয়াজ রহমান আশঙ্কামুক্ত নয় দাবি করে তাঁর ছোট ভাই বেসরকারী ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওমর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ভাইয়ের বিষয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, ভবিষ্যতে ভাইয়ের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। গাড়িটির চালকের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি আপত্তি করেন। তিনি বলেন, তার ভাইয়ের গাড়ির চালক সম্পর্কে তার তেমন কিছুই জানা নেই। চালকের পরিবারের সঙ্গে বা চালকের পরিবারের তরফ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টিও এড়িয়ে যান তিনি। ঘটনার পর থেকেই চালক পলাতক বলেও তিনি দাবি করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, রিয়াজ রহমানের উপর হামলার স্থান ও ধরন পরিকল্পিত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে রিয়াজ রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়নি। সেটি তদন্তে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। রিয়াজ রহমানের উপর হামলার পর তার গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আরেক উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিনের গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা একসূত্রে গাঁথা। রাজনৈতিক মাঠ গরমের পাশাপাশি চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতেই পরিকল্পিতভাবে ঘটনা দুইটি ঘটানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়ে ডিএমপির গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, চালকের কোন হদিস মেলেনি। রিয়াজ রহমানের সঙ্গে ঘটনার দিনই কথা হয়েছে। এরপর আর হয়নি।
×