ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল অবরোধ ॥ ওরা গাজীপুরে পুড়িয়ে মারল হেলপারকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল অবরোধ ॥ ওরা গাজীপুরে পুড়িয়ে মারল হেলপারকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি না থাকলেও বিছিন্নভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ কিছু নাশকতামূলক ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে টানা অবরোধের মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচী পালন করেছে বিএনপি জোট। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা বাসে ঘুমন্ত হেলপার তোফাজ্জল হোসেনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এদিকে আন্দোলন কর্মসূচীর নামে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও খেটেখাওয়া মানুষকে বিপদে ফেলায় বিএনপি জোটের প্রতি ফুঁসে উঠেছে দেশের মানুষ। অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের অফিস ঘেরাও করতে যায় দিনমজুররা। এ সময় তারা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে সেøাগান দেন ‘ভাত দে, কাপড় দে, অবরোধ তুলে নে।’ টানা অবরোধের মধ্যে হরতাল কর্মসূচী থাকলেও বৃহস্পতিবার রাজধানীতে যানবাহন চলাচলসহ সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। তবে গত ক’দিন ধরে সারাদেশে ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকা-ের কারণে জনমনে আতঙ্কের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল কিছুটা কম ছিল। কিছু কিছু জেলার দূরপাল্লার বাসও চলতে দেখা যায়। লঞ্চ, ট্রেন ও বিমান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সচিবালয় ও মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাসহ রাজধানীর সব অফিস-আদালতেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে খালেদা জিয়ার অফিস ঘেরাও করতে যায় দিনমজুরা ॥ টানা অবরোধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়ায় এবার ক্ষেপেছেন খেটেখাওয়া মানুষ। অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার শতাধিক দিনমজুর গুলশানে খালেদা জিয়ার অফিস ঘেরাও করতে যায়। তবে পুলিশের বাধায় গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরে সমাবেত হয়ে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী বন্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা হরতাল-অবরোধ দিয়ে নাশকতামূলক কর্মকা- অব্যাহত রাখায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে। বেলা সাড়ে ১১টায় দিনমজুর শ্রমজীবী জনতা লীগের ব্যানারে শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে বনানী মাঠ থেকে গুলশান খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দিকে রওনা দেয়। তাদের মিছিলটি গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরের কাছে পুলিশ আটকে দেয়। পরে সেখানে অবস্থান করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা প্রায় আধাঘণ্টা বিক্ষোভ করে মিছিল করতে করতে আবার বনানীর দিকে চলে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের খবর- গাজীপুর ॥ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হরতাল-অবরোধ সমর্থিত বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছে এক বাসের ঘুমন্ত হেলপার। আগুনে বাসটিও পুড়ে গেছে। নিহত হেলপারের নাম তোফাজ্জল হোসেন (১৭)। সে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের নারায়ণতলা এলাকার ওয়াহেদ আলীর ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের মতো স্থানীয় এক কারখানার শ্রমিক পরিবহন শেষে বুধবার দিবাগত রাতে কালিয়াকৈর উপজেলার মহিষবাথান বটতলা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে একটি বাস পার্কিং করে রেখে বাড়ি যায় ওই বাসের চালক সেলিম মিয়া। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে হেলপার তোফাজ্জল দরজা আটকে বাসেই ঘুমিয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার ভোরে ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ সমর্থিত বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পেট্রোল ঢেলে ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ঘুমন্ত হেলপারসহ পুরো বাসকে গ্রাস করে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে বাসের ভেতরে আটকা পড়ে হেলপার তোফাজ্জল আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং বাসটির সিংহভাগ পুড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসের ভেতর থেকে আগুনে দগ্ধ ওই হেলপারের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। বাসের মালিক কালিয়াকৈর উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও স্থানীয় বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের গ্রন্থাগারিক খন্দকার মফিজুর রহমানের দাবি, আগেরদিন বুধবার হরতাল ও নাশকতাবিরোধী সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখার জেরে হরতাল সমর্থকরাই ওই বাসে আগুন দিয়েছে। তার বাসটি বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক আনানেয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো। এদিকে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৮ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে শিবির ক্যাডার আলী আজগরকে ২ বছরের কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপরদিকে নাশকতা এড়াতে ও বিশ্ব এজতেমার মুসল্লিরা যাতে নির্ভয়ে এজতেমাস্থলে আসতে পারে সেজন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এজতেমাস্থল ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিন প্লাটুন বিজেপি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করেছেন। ময়মনসিংহ ॥ বুধবার রাতে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের শম্ভূগঞ্জ বাজার সংলগ্ন আলালপুর নামকস্থানে হরতাল সমর্থকরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চালবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে নাশকতা চালিয়েছে। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আগুন নেভায়। এর আগেই হোন্ডারোহী দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ এই ঘটনায় বুধবার রাতে জাহাঙ্গীর ও লিটনসহ এজাহারভুক্ত ১৫ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/১৬ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করে। তবে এই মামলায় কোন গ্রেফতার নেই। এদিকে অবরোধে যানবাহন ভাংচুরসহ নাশকতার মামলায় পুলিশ ফুলবাড়িয়া পৌর জামায়াতের আমির ডাঃ শহীদুল ইসলাম কাকনসহ জেলায় ৭ জনকে গ্রেফতার করে। নাটোর ॥ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মদপুর বাজার এলাকায় একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এসময় হরতাল সমর্থকদের হামলায় ট্রাকের ড্রাইভারসহ দুজন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক আহম্মদপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে ৭/৮ হরতাল সমর্থক রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয়। এসময় ট্রাক ড্রাইভার অজয় কুমার এবং হেলপার রণজিতকে মারপিট করে নগদ ২০ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
×