ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোর বাপ-দাদির এই অবস্থা কাই করিলরে...

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

মোর বাপ-দাদির এই অবস্থা কাই করিলরে...

মানিক সরকার মানিক, রংপুর থেকে ॥ আশা ছিল বিশ্ব এজতেমার ময়দানে বাদাম বুট বিক্রি করে বাড়তি কিছু রোজগারের টাকা নিয়ে স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছু কেনাকাটা করে ঘরে ফিরবেন বাদাম বিক্রেতা রহিম বাদশা। আর তাইতো বৃদ্ধা মা রহিমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় ‘খলিল স্পেশাল’ নামের একটি বাসে চেপে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধর্মভিত্তিক নোংরা অপরাজনীতির পেট্রোল বোমা তার সে স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। কিছু কেনাকাটা নয়, বরং মা ও ছেলে উভয়েই ফিরেছেন জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে রংপুরের মিঠাপুকুরে অবরোধকারীদের পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই যে চারজন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরই দু’জন মা রহিমা বেগম আর ছেলে রহিম বাদশা। রহিম বাদশার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের বিজয়রাম তবকপুর গ্রামে। তার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে লিটন ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে নিম্ন আয়ের চাকরি করে। ছোট ছেলে লিমন স্থানীয় দাঁড়িকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আর একমাত্র মেয়ে রুমি স্থানীয় তবকপুর ফাজিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। স্থানীয় হাটবাজারে বুট বাদাম বিক্রি করেই কোন রকমে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদেরও লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন তিনি। বুধবার রাতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ নিতে আসা তার এক আত্মীয় রুবেল মিয়া জানালেন, কিছুদিন আগে অনেক কষ্ট করে মাথা গোঁজার জন্য মাত্র দুই শতক জমি কিনেছিলেন রহিম বাদশা। সেই জমির কিছু টাকা এখনও বাকি থাকায় এবং সেই বাকি টাকার যোগান দেয়ার উদ্দেশ্যেই এজতেমার মাঠে বাড়তি কিছু আয়ের উদ্দেশ ছিল তার ঢাকা যাত্রা। পরিকল্পনা ছিল মা রহিমা বেগমকে ঢাকায় কর্মরত বড় ছেলের বাসায় রেখে নিজে বিশ্ব এজতেমার ময়দানে বুট বাদাম বিক্রি করে বাড়তি যা আয় হবে তা দিয়েই স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছু কেনা এবং জমির বাকি টাকা পরিশোধ করবেন তিনি। সেজন্যই মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন রহিম। কিন্তু কে জানতো পথিমধ্যে অবরোধের এই পেট্রোল বোমা তাদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেবে। রংপুরের মর্গে রুবেলের সঙ্গে থাকা রহিমের ছোট ছেলে লিমন তার বাবা এবং দাদির অঙ্গার দেহ দেখে রীতিমতো দাপাতে থাকে। আহাজারি করে বলতে থাকে ‘মোর বাপ দাদির এই অবস্থা কাই করিলরে....। লিমনের আহাজারির এমন দৃশ্য প্রকৃত অর্থেই যেন তা ছিল না দেখার মতো। নিহতদের লাশ দাফন স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, খলিল স্পেশাল নামের যাত্রীবাহী নাইট কোচে অবরোধকারীদের নিক্ষেপ করা পেট্রলবোমায় নিহত রহিম বাদশা ও তার মা রহিমা বেগমের পুরে যাওয়া লাশ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় নিজ গ্রাম দড়িচর পাঁচপাড়া গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। একই গ্রামের ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী জেসমিন বেগমের লাশ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত রংপুরের মিঠাপুকুর থানা পুলিশ তাঁর স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেনি। অন্যদিকে একই কোচের যাত্রী উলিপুর সীমান্তবর্তী কাশিম বাজার লখিয়ার পাড়া গ্রামের জহিরন বেওয়ার (৬৫) লাশ এখনো তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেনি। সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জহিরনের ভাই রোস্তম আলীর বাড়িতে কবর খুড়তে দেখা যায় হবিবর রহমান ও জাবেদ আলীকে।
×