ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৩:০৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধি

রোগশোক বলে কয়ে আসে না। সীমিত আয়ের কেউ কেউ বিপদ আপদের জন্য সামান্য বাজেট বরাদ্দ রাখে চিকিৎসা খাতে। চিকিৎসাব্যয় উর্ধমুখী হলে ওই বাজেটে আর কুলোয় না। অসুখ-বিসুখ জীবনে তখন বিরাট দুর্যোগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জনকণ্ঠে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে চিকিৎসাব্যয় ও ওষুধের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত যে চিত্র উঠে এসেছে তা উদ্বেগজনক। এভাবে বাড়তি খরচ গুনতে গেলে বহু মানুষের পক্ষেই চিকিৎসা অসমাপ্ত রাখা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। চিকিৎসা এবং শিক্ষকতা এ দুটি পেশাকে এখনও সমাজ উচ্চ মর্যাদা দিয়ে থাকে। এসব পেশার লোকেরা বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভরসার পাত্র। বেশিরভাগ চিকিৎসকের কাছে বর্তমানে মানবসেবার তুলনায় অর্থবিত্ত উপার্জনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত এটা সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠিত। তবে শুধু চিকিৎসকদের অভিযুক্ত করলে অন্যায় হবে, এর জন্য পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকেই দুষতে হবে। এটি এক বিরাট চক্র বা চেইন। একটির সঙ্গে অন্যটি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ডাক্তারই নির্দিষ্ট করে দেন কোন্্ প্যাথলজিতে রোগী টেস্টগুলো করাবে। সেই সঙ্গে কোন কোম্পানির ওষুধ তিনি লিখবেন সেটাও নির্দিষ্ট থাকে। এখানে বলির পাঁঠা হলেন রোগী। ডাক্তার এখানে অন্যায্য বৃত্তের কেন্দ্র। তাকে ঘিরে আছে প্যাথলজি ল্যাব, ওষুধ কোম্পানি এবং হাসপাতাল ক্লিনিক। পদে পদে কমিশন। এই কমিশন বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তে থাকে রোগীর ব্যয়ের অঙ্ক, যা মেটাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞান যত আধুনিক হচ্ছে ততই বিবিধ পরীক্ষার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। আগের মতো রোগীর নাড়ি টিপে কিংবা লক্ষণ বিচার করে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয় না। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অধিকাংশই এখন একাধিক পরীক্ষা ব্যতিরেকে ওষুধ দিতে চান না। আবার এটাও বাস্তবতা যে কেবল কমিশনের প্রলোভনে অনাবশ্যকভাবে একগাদা টেস্ট লিখে দেন কোন কোন ডাক্তার। শতভাগ সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হলে প্যাথলজি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফলাফল জানা অত্যাবশ্যক। এসব পরীক্ষা করানোর জন্য দেশে প্যাথলজি সেন্টারের অভাব নেই। কিন্তু এসবের কত ভাগ মানসম্পন্ন সেটা বড় প্রশ্ন। এ সব কিছুর পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরের। সংস্থাটির উদ্যোগে যখনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয় তখনই ধরা পড়ে অনিয়ম-অনৈতিকতা। আর ওষুধপত্রেও নানা ভেজাল চলে আসছে। অভিযান পরিচালিত হলেই কেবল সামনে চলে আসে মানহীন ও ভেজাল ওষুধের বিপুল উপস্থিতি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর প্যাথলজি চার্জ কমিয়ে আনার ব্যাপারে একবার উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের জনমুখী স্বাস্থ্যসেবা নীতির প্রতিষ্ঠা তথা মানুষের উপকারের কথা ভেবে অতিসত্বর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সমাজে এমন বিবেকসম্পন্ন চিকিৎসকের দৃষ্টান্তও রয়েছে যাঁরা রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। কোম্পানির মুনাফা বা নিজের কমিশন প্রাপ্তির দিকটি বিবেচনা না করে রোগীর সামর্থ্যরে বিষয়টি আমলে নেন এবং সেভাবে স্বল্পমূল্যের ন্যূনতম অনিবার্য ওষুধ ও টেস্টের কথা প্রেসক্রিপশনে লেখেন। ভুলে গেলে চলবে না রোগগ্রস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ ডাক্তারদের ওপরই ভরসা করেন।
×