ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়া খনি থেকে দিনে ৪ হাজার টন পাথর উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৩:০১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

মধ্যপাড়া খনি থেকে দিনে ৪ হাজার টন পাথর উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) খনি থেকে তিন শিফটে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মে.টন পাথর উত্তোলন করছে। এতে করে মধ্যপাড়া পাথর খনি দিন দিন লাভের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যা দেশে পাথরের চাহিদা পূরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত এক বছর আগেও মধ্যপাড়া পাথর খনি এলাকায় মরুভূমির মতো অবস্থা ছিল। সেখানে আজ যেন মরুভূমির বুকে মরুদ্যান। খনি থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন উত্তোলিত পাথরের মজুদ হতে থাকায় ভূ-উপরস্থ খনি সীমানার অভ্যন্তরে প্রায় ৯টি স্থানে পাথরের পাহাড় গড়ে উঠেছে। জিটিসির মাধ্যমে এই উৎপাদনের রেকর্ড ইতোপূর্বে কোরীয়ানদের তত্ত্বাবধানে উত্তোলিত পাথরের প্রায় ৫ গুণ বেশি। যা মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ইতিহাসে একটি নতুন রেকর্ড বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। মূল প্রতিষ্ঠান হলো পেট্রোবাংলা। কোম্পানিটি জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানি নামনাম-এর সঙ্গে ৬ বছর মেয়াদী একটি উন্নয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুসারে প্রতিদিন ৫ হাজার ৫শ’ মে.টন হিসেবে বছরে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। কোরীয় নামনাম কোম্পানি তাদের চুক্তির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে না পারায়, পেট্রোবাংলা আবার উন্নয়ন কাজ তদারকির জন্য পোলিশ কোম্পানি ‘কোপেক্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করে। একই সঙ্গে নামনামের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়। ২০০৬ সালে প্রায় ৯ বছর পর মধ্যপাড়া পাথর খনিতে স্থানীয় খনি শ্রমিক নিয়োগ করে স্বল্প আকারে উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে বাণিজ্যকভাবে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। এরপর প্রায় ৭ বছর ধরে দৈনিক মাত্র এক শিফটে গড়ে প্রায় ৭শ’ থেকে ৮শ’ মে.টন পাথর উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) সূত্র জানায়, সরকারের সঙ্গে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর কঠিন শিলা খনির ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উৎপাদন চুক্তি করা হয়। এই চুক্তির আলোকে তারা মৃত প্রায় এই খনিতে বিদেশী ও দেশী খনি বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষ খনি শ্রমিক নিয়োগ করে। এর ফলে খনিটির বহু আকাক্সিক্ষত তিন শিফটে নিয়মিত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ হাজার মে.টন পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। যা কোরীয়ান কোম্পানির অধীনে উৎপাদনের প্রায় ৫ গুণ বেশি। জিটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে খনির ভূগর্ভে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ নতুন স্টোপ নির্মাণ করা হয়েছে। উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি করে তাদের বাৎসরিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং চুক্তি অনুসারে ৬ বছরে ৯ দশমিক ২ মিলিয়ন টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে তারা আশা করছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশীয় কোম্পানির দ্বারা দেশের খনিজ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলে তারা মনে করছেন।
×