ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আশঙ্কামুক্ত রিয়াজ রহমান-দেহ পরীক্ষা নিরীক্ষা ॥ ধাতব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

আশঙ্কামুক্ত রিয়াজ রহমান-দেহ পরীক্ষা নিরীক্ষা ॥ ধাতব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত। তাঁর দেহে কোন গুলি বা ধাতব পদার্থের অস্তিত্ব নেই। তিনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়াসহ কথাবার্তা বলতে পারেন। তবে শারীরিকভাবে খানিকটা দুর্বল। সন্ধ্যা সাতটায় রিয়াজ রহমানের (৭৪) ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েক সন্ত্রাসীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দারা বলছেন, আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল ছাড়াও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল, ব্যক্তিগত আক্রোশ বা আর্থিক লেনদেনের সূত্র ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে। যদিও রিয়াজ রহমানের পরিবারের তরফ থেকে হামলার কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরের দক্ষিণ দিকের ৪৬ নম্বর সড়কের ১০তলা বিলকিস টাওয়ারের নিচে ঢাকা ব্যাংকের সামনে রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। জায়গায়টি মূলত পার্কিং এলাকা। ঘটনাস্থলের পাশে সেবা ভবন নামের একটি ৮তলা ভবন রয়েছে। আশপাশে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখানে রিয়াজ রহমান তাঁর গাড়িটি পার্কিং করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যান। রাত আটটার দিকে তিনি খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বের হন। তাঁকে বিএনপির কয়েক নেতা এগিয়ে মেইনরোড পর্যন্ত দিয়ে যান। এরপর রিয়াজ রহমান হেঁটে গিয়ে পার্কিং করা গাড়িতে ওঠেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জনকণ্ঠকে জানান, তিনটি মোটরসাইকেলে আসা আটজন রিয়াজ রহমানকে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে বলেন। বেরিয়ে আসতে গেলেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আরও অন্তত ৩ রাউন্ড গুলি করে। পরে গুলশান মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান রিয়াজ রহমানকে রাজধানীর গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার বেলা আড়াইটায় ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অপারেশন বিভাগের পরিচালক ডাঃ দবির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালে আনার পর রিয়াজ রহমানের ক্ষতস্থান দিয়ে কিছু রক্ত ঝরছিল বলে মনে হচ্ছিল। রোগীকে বেশ দুর্বলও দেখাচ্ছিল। তাঁর শরীরের পেছনের বামদিকে কোমরের দিকে এবং হাঁটুর নিচে দুইটি ক্ষত রয়েছে। ক্ষতের মুখগুলো অনেকটা পুড়ে যাওয়া। কোন তপ্ত ধাতব পদার্থ বিদ্ধ হয়ে বের হয়ে যাওয়ার মতো। প্রতিটি ক্ষতের সম্মুখভাগের ব্যাস ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার আর পেছনের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার। আর বামপায়ের হাঁটুতে পড়ে গেলে যে ধরনের ক্ষত হয় ঠিক সে ধরনের ক্ষত রয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁর শরীরে কোন ধাতব পদার্থ পাওয়া যায়নি। বাম পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে। নড়াচড়া করতে পারছেন না। শরীরে কোন ধাতব পদার্থ না থাকায় অপারেশনের কোন প্রয়োজন নেই। শুধু ক্ষতস্থান পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। রিয়াজ রহমান দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিকের রোগী। তাঁর চিকিৎসায় ইউনাইটেড হাসপাতালের ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়েছে। পরে একান্ত আলাপকালে ডাঃ দবির উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, রিয়াজ রহমান পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত। এ ধরনের আঘাতের কারণে ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা তাৎক্ষণিকভাবে বলা কঠিন। বুলেট বা কোন ধাতব বস্তু রিয়াজ রহমানের হাড় ভেদ করেনি। এ জন্য আশঙ্কা একেবারেই কম। তবে যদি বুলেট বা ধাতব বস্তু কোন রক্তনালী ভেদ করে সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক হাঁটাচলা খানিকটা ব্যাহত হতে পারে। তবে এমন আশঙ্কাও খুব কম। এদিকে ঘটনার পর থেকেই আহত রিয়াজ রহমানের স্ত্রী নার্গিস রহমান, মেয়ে আমেনা রহমান ও ছোট ভাই বেসরকারী ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম ওমর রহমান হাসপাতালে অবস্থান করছেন। রিয়াজ রহমানকে দেখতে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমেদ চৌধুরী, ফারুক সোবহান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও রুহুল আলম চৌধুরীসহ অনেকেই হাসপাতালে যান। রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় মাহবুবুর রহমান বলেন, এমন হামলার ঘটনায় বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এদিকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের উস্কানিতেই রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রিয়াজ রহমানের মেয়ে আমেনা রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, তাঁর বাবা সেখানে কী করতে গিয়েছিলেন তা তিনি জানেন না। মামলা দায়েরের বিষয়ে তিনি কোন কিছুই জানাতে পারেননি। এদিকে বুধবার বেলা দুইটার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল ইউনাইটেড হাসপাতালে যান। চিকিৎসকদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেন। এছাড়া দলটি ঘটনাস্থল থেকেও আলামত সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল পাওয়া গেলেই হামলার ধরন ও হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ক্রাইম সিন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, হত্যার উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা হয়নি। মূলত আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হামলার জায়গা ও ধরন সেটিই প্রমাণ করে। এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াও চলমান আন্দোলন চাঙ্গা করা, ব্যক্তিগত রেষারেষি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল ও অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়াদির জেরধরে সাধারণত এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, হামলাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×