ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বব্যাংকের আউটলুক প্রকাশ নতুন বছরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ, চাঙ্গা হবে বাংলাদেশ ও নেপালের প্রবাসী আয়

বৈশ্বিক অর্থনীতি চার ঝুঁকির মুখে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

বৈশ্বিক অর্থনীতি চার ঝুঁকির মুখে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিশ্বব্যাংক বলছে, নতুন বছরে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনীতি ভাল হবে। গত বছর যেখানে উন্নয়নশীল দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪.৪ শতাংশ। চলতি বছরে তা দাঁড়াবে ৪.৮ শতাংশ। তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার পূর্বাভাসের চেয়ে কমে যাবে। এ বছর (২০১৫) বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে তিন শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশে ও নেপালে আগামী দিনগুলোতে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স প্রবাহ আরও চাঙ্গা হবে বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক শুধু চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের হার কমিয়ে-ই দেয়নি। একই সঙ্গে সতর্কও করে দিয়েছে যে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এককভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক বুধবার বাংলাদেশে তাদের গ্লোবাল আউটলুক প্রকাশ করে। এই আউটলুকে নতুন বছরের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান ৪ ঝুঁকির কথাও বলেছে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে চারটি প্রধান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য দুর্বলতা, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সুদের হার নিয়ে আর্থিক জটিলতা। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো কতটুকু তেলের দাম কমাবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এবং ইউরো জোনে অর্থনৈতিক মন্দা না কাটতেই জাপানে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু। এই চারটি ঝুঁকি মোকাবিলা করাই এ বছর বিশ্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিম বলেন, ‘বিশ্বে বর্তমানে অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত সামাজিক খাতে সম্পদ বিনিয়োগ বাড়ানো। সেই সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে জনমুখী বিনিয়োগ বৃদ্ধি।’ আউটলুকে বলা হয়েছে, চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ ও আগামী বছরে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০১৭ সালে তা দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। গত জুনে বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাসের হার ছিল চলতি বছরে ৩.৪ শতাংশ এবং আগামী বছরে ৩.৫ শতাংশ। তবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য আশার বাণী শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে। চলতি বছরে এসব দেশের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে; ২০১৫ সালে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে; ২০১৬ সালে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে; আর ২০১৭ সালে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে। নতুন বছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ২০১৪ সালে সাড়ে পাঁচ শতাংশ উন্নীত হবে। যা ২০১৩ সালে গত দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪.৯ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। এ অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতও ঘুরে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে বাড়বে প্রবৃদ্ধি। ২০১৭ সালে এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৬.৮ শতাংশ। ভারতের সরবরাহ প্রতিবদ্ধকতা হ্রাস পাবে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক সহিংসতা কমবে, বাংলাদেশ ও নেপালের প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স প্রবাহ আরও চাঙ্গা হবে। এতে পুরো অঞ্চলের রফতানি আয় বাড়বে। তবে এ অঞ্চলের প্রধান ঝুঁকি হলো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক স্থিরতা থাকলে এবং সংস্কার অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের একজন প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু জানিয়েছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি এককভাবে এগিয়ে নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের একার পক্ষে এর প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব না। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় কিছু দেশ লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি। কৌশিক বসু আরও বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে তেলের অব্যাহত দরপতন বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দিবে। যাতে করে উন্নত দেশগুলোতে সুদের হার বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এতে করে চীন ও ভারতের মতো তেল আমদানিকারক দেশগুলো লাভবান হচ্ছে। ২০১৬ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করেন তিনি। তবে তেলের দাম কম হওয়ার কারণে রাশিয়ার মতো দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সাল নাগাদ রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম হ্রাসে তেল রফতানিকারক দেশগুলো থেকে আয় তেল আমদানিকারক দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হবে। এতে মধ্য আয়ের দেশগুলো বেশি সুবিধা পাবে। বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তুরস্কের মূল্যস্ফীতি কমে যাবে এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি হ্রাস পাবে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অর্থনীতিও এতে শক্তিশালী হবে। তেল আমদানি বাবদ খরচ কমে যাওয়ায় এই দেশগুলোর সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সেবা খাতের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হবে। সেই সঙ্গে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিও শক্তিশালী হবে। ২০১৫-১৭ মেয়াদে এই দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের ঘরে অবস্থান করবে।
×