ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড়খেকোরা অপ্রতিরোধ্য

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

পাহাড়খেকোরা অপ্রতিরোধ্য

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বিভিন্ন আইনী জটিলতা ও ফাঁক ফোকরের কারণে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর। এতে দিনে দিনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে কক্সবাজার জেলার চিহ্নিত পাহাড়খেকোরা। ওসব পাহাড় খেকো ভূমিদস্যুরা শহরের ভূমিভাগের প্রায় ৭০ শতাংশ পাহাড় ইতোমধ্যে কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কয়েক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওসব পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের এখনই লাগাম টেনে ধরা দরকার হয়ে পড়ছে। প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে খাস খতিয়ানভুক্ত ও বনজসম্পদ রক্ষা এবং পাহাড় কাটা অনেকটা রোধ করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী নেতৃবৃন্দ। জানা যায়, কক্সবাজারে পরিবেশ অধিদফতর কার্যক্রম শুরু“ করে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় অখ্যাত শ্রেণীর ৭২ পাহাড় কর্তনকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কয়েক শ’ মামলা হলেও এর কোনটিই এখনও পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। পরিবেশ অধিদফতর কর্মকর্তা সর্দার শরীফুল ইসলাম জানান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব, এতিমখানা, মন্দির, লাইব্রেরিসহ আরও বিভিন্ন স্পর্শকাতর ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের নাম ভাঙিয়ে একের পর এক নিত্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করে পাহাড়খেকোরা নিয়মিত পাহাড় কেটে যাচ্ছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ বা সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এক রকমের অসহায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা সদরের পিএমখালী, ঝিলংজা ও পৌর এলাকায় প্রায় শতাধিক পাহাড়খেকো ভূমিদস্যু রয়েছে। যারা প্রতিদিনই পাহাড় কর্তন কাজে লিপ্ত থাকে। শীতকালীন রাতে পাহাড়খেকোদের জন্য আলাদা সুযোগ হয়েছে। অসংখ্য রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে রাতারাতি বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে সাবাড় করে চলছে। শহরের সাহিত্যিকা পল্লী, পাহাড়তলী, ঘোনারপাড়া, বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী, লিঙ্ক রোড, বাসটার্মিনাল, পাওয়ার হাউস খাদ্য গুদামের পেছনে, উত্তরণ গৃহায়ন এলাকা, ইসলামাবাদ, সমিতিবাজার, কলাতলির লাইট হাউস, আদর্শগ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, চন্দ্রিমাঘোনা, জর্জরি পাহাড়, গরুর হালদা সড়ক, ইউসুফ আলীরঘোনা, নতুন জেলখানার পার্শ্ববর্তী এলাকা, মাঠিয়াতলী এবং বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ঘোনারপাড়ায় পৃথকভাবে পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। স্থানীয়রা জানায়, শহরের পাহাড়তলী, কলাতলী ও ঘোনারপাড়া এলাকায় দুই বছর আগেও পাহাড় ছিল। এখন সেখানে আর কোন পাহাড় দেখা যায় না। পাহাড় কেটে শ’ শ’ ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে ওখানে। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়কে পরিবেশ অধিদফতরের কোন ধরনের ছাড়পত্র বা অনুমোদন না নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ ও দখল করে রেখেছে সাম্পান রিসোর্ট, হক বিস্কুটের মালিকের বাড়ি ও মারম্যাড রিসোর্টের মালিকের দ্বিতল ভবন। এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা সরদার শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাহাড়ে বসবাসের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এরা বসতি স্থাপন করতে গিয়ে শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে। এসবের নেপথ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলেও তিনি নিজের চরম অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজের যে পরিমাণ পাহাড় কর্তন করা হয়েছে- এর ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি অদূরভবিষ্যতে হিলটপ সার্কিট হাউস, আবহাওয়া অধিদফতরের রাডার স্টেশন ও লাইট হাউসের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনাও ধসে পড়তে পারে।
×