ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহী ক্লাবগুলো না খেলার সিদ্ধান্তে অনড়

হকিতে আবার বিদ্রোহ!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

হকিতে আবার বিদ্রোহ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আশা করা হয়েছিল নতুন হকি মৌসুমে জটিলতা কাটবে। কিন্তু কোথায় কি, জটিলতা আরও বেড়েছে। হকি ফেডারেশনের বর্তমান নির্বাচিত কমিটির অধীনে যেকোন ধরনের হকি কার্যক্রম বয়কট করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তথাকথিত ‘বিদ্রোহী’ দলগুলো, তাদের সেই সিদ্ধান্ত এখনও অটুট আছে এখনও। মঙ্গলবার ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ক্লাব প্রাঙ্গণে এক অঘোষিত সংবাদ সম্মেলন (বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের ভাষায়Ñ মতবিনিময় সভা) অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই জানানো হয় তাদের বর্তমান এই সিদ্ধান্তের কথা। সভায় উপস্থিত ছিলেন মোহামেডানের ডিরেক্টর-ইন-চার্জ লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য সাজেদ-এ-আদেল, মেরিনার্স ইয়াংস ক্লাবের হকি বদরুল ইসলাম দীপু, বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হুমায়ুন, সাংগঠনিক সম্পাদক এহ্তেশাম হোসেন এবং ওয়ারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজিউর ইসলাম নাজু। সভায় ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে যা জানানো হয়, তার সার সংক্ষেপ হচ্ছেÑ গত ১০ ও ১২ জানুয়ারি হকি ফেডারেশনের লীগ কমিটি থেকে ‘বিদ্রোহী’ ক্লাবগুলোর কাছে পরপর দুটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে ক্লাবগুলোকে আসন্ন হকি লীগে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তারা সাফ জানিয়ে দেয়Ñ বর্তমান এই ‘অবৈধ’ কমিটির অধীনে তারা হকির কোন কার্যক্রমেই অংশ নেবে না। প্রয়োজনে তারা আইনের আশ্রয় নেবে। গত মৌসুমে বিদ্রোহী দল ছিল ছয়টি (মোহামেডান, মেরিনার, বাংলাদেশ স্পোর্টিং, ওয়ারী, ওয়ান্ডারার্স ও এ্যাজাক্স)। তাদের ছাড়াই লীগ আয়োজন করেছিল বর্তমান কমিটি। অংশ নিয়েছিল আবাহনী, ঊষা, সাধারণ বীমা, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ পুলিশ ও এ্যাজাক্স। শেষ মুহূর্তে বিদ্রোহী গ্রুপ থেকে সরে লীগে অংশ নেয় এ্যাজাক্স (গুঞ্জন ছিল, ফেডারেশনের চাপে বাধ্য হয়ে লীগে অংশ নেয় তারা)। সেবার ওই লীগে কোন রেলিগেশন ছিল না। এবার রেলিগেশন থাকবে বলে যে গুজব বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্রোহী ক্লাবের ভাষ্য হচ্ছেÑ ‘তারা (ফেডারেশন এবার রেলিগেশন রাখবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার)। লোকমান হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা অবশ্যই লীগে খেলতে চাই। চাই সমস্যার সমাধান। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছি ফেডারেশনের সঙ্গে। কিন্তু আমাদের একটি দাবিও তারা মানেনি। অথচ আলোচনার সময় তারা বলেছে এক কথা, কিন্তু বাইরে এসে বলেছে ভিন্ন কথা! এমনকি আমরা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীর সঙ্গেও ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তারা সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেননি। বরং আমরা মনে করি এ ব্যাপারে তাঁদের আন্তরিকতার অভাব ছিল।’ লোকমান আরও যোগ করেন, ‘সৃষ্ট সমস্যার কোন সমাধান না করেই তারা কিভাবে আমাদের লীগে খেলার জন্য চিঠি দেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা তো হাস্যকর ব্যাপার!’ এবার ছয় দল নয়, বিদ্রোহী ক্লাব হিসেবে আছে চার দল। এ্যাজাক্স ও ওয়ান্ডারার্স নেই। বিদ্রোহী ঐক্যজোটের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে ... এ নিয়ে অবশ্য মোটেও ভাবিত নন বিদ্রোহী ক্লাবের কর্তারা। তারা জানান, তাদের শক্তি বরং আরও বাড়বে! কিন্তু তাদের শক্তি বাড়লে যে লীগের জৌলুস কমবেÑ তা নিয়ে হকিপ্রেমীরা আছেন কষ্টে। সবচেয়ে কষ্টে আছেন এসব ক্লাবের প্রায় দেড় শ’ হকি প্লেয়ার। এদের সবাই কেই হকি খেলতে পারছেন না, আয়ের পথও বন্ধ। ফলে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য কোন পেশা। কেন হকির বর্তমান কমিটি অবৈধÑ এর ব্যাখ্যাও দিলেন বিদ্রোহী ক্লাবের কর্মকর্তারা, ‘নিয়ম হচ্ছে আম্পায়ার এ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। কাজেই এটা তো সুস্পষ্ট অবৈধ নির্বাচন। তারা অবশ্য আপাতত একটি সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন, ‘এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এডহক কমিটি গঠন করা হোক। সেই কমিটিতে যাকে খুশি তাকে রাখা হোক, আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।’ কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে চলা বিবদমান অচলাবস্থা কি কাটবে বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর এমন প্রস্তাবে? সময়ই বলে দেবে, আইনী লড়াইয়ে তারা অবতীর্ণ হবে কি না।
×