ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেলিফোনের দামী কেবল চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

টেলিফোনের দামী কেবল চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীতে মাটির নিচে স্থাপিত টেলিফোনের দামী কেবল চুরি কিছুতেই ঠেকাতে পারছে না বিটিসিএল। রাজধানীর ধানম-িতে ৫ দিনের ব্যবধানে দুই দফা কেবল চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিকল হয়েছে ৮শ’ টেলিফোন। প্রথম দফায় দেড় হাজার টেলিফোন বিকল হয়। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কেবল বা তার চুরির কারণে হাজার হাজার ল্যান্ড ফোন বিকল হয়ে থাকছে দিনের পর দিন। তার চুরির পেছনে বিটিসিএলের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংঘবদ্ধ কেবল চোরচক্র মাটির নিচ থেকে কেবল চুরির ভাগ তাদের কে দিচ্ছে। কেবল চুরিতে গুটিকয়েক লোক লাভবান হলেও গ্রাহকদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা, মগবাজার ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিটিসিএলের কয়েক হাজার মিটার ‘আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল’ চুরি হয়েছে। কেবল চুরির ব্যাপারে থানায় বেশকিছু মামলা হলেও ওই সব মামলায় কোন আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আর এসব মামলার তদন্তও হয় না। সোমবার রাতে শের-ই-বাংলা নগর এক্সচেঞ্জের আওতাধীন ধানম-ি আবাহনী মাঠ সংলগ্ন সাত মসজিদ রোড এলাকার রোড নম্বর- ৮/এ, ১০/এ, ১২/এ এর প্রায় ৮শ’ চালু টেলিফেন বিকল হয়ে পড়ে। এই এলাকায় গত ৯ ডিসেম্বরও ১৭০ মিটার কেবল চুরি হয়েছিল। তখন ৫শ’ টেলিফোন বিকল হয়ে যায়। ওই টেলিফোন লাইন স্থাপন কাজ শেষ করার একদিন পরই একই এলাকায় আবার কেবল চুরির ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনায় ধানম-ি থানায় (মামলা নং- ১১) দায়ের করেছে বিটিসিএল। নতুন করে জরুরী ভিত্তিতে কেবল প্রতিস্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। বিটিসিএল বলছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন টেলিফোন সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। বিটিসিএলের পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) মীর মোহাম্মদ মোরশেদ জানিয়েছেন, কেবল চুরির কারণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার প্রায় ৭০০ টেলিফোন গত ৪ দিন ধরে বিকল হয়ে আছে। যাত্রাবাড়ী টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতাধীন রায়েরবাগ এলাকার ম্যানহোলের ঢাকনা ভেঙ্গে ২০০ মিটার ভূগর্ভস্থ কেবল চুরি হওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার টেলিফোনসমূহ বিকল হয়ে পড়ে। এ চুরির ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। কেবল প্রতিস্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে বিকল টেলিফোনগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। এ কারণে গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, আন্ডার গ্রাউন্ড কেবলের দাম অনেকটা সোনার দামের মতো। বিদেশ থেকে এই কেবল কিনতে হয়। একশ’ মিটার কেবলের দাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এই একশ’ মিটার তারের মধ্যে রয়েছে কয়েকশ’ কেজি ‘কপার’ বা তামা। বর্তমানে তামা বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বিটিসিএল আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল স্থাপন করার সময় ২শ’ মিটার অন্তর অন্তর জোড়া রাখে। কারণ কখনও যদি কোন এলাকায় টেলিফোনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকার কেবল বদল বা মেরামত করা হয়। এ জন্য প্রতিটি জোড়ার মাথা একটি করে ম্যানহোল রয়েছে। সমস্যা হলে এই ম্যানহোলে নেমেই টেলিফোন বিভাগের প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন। চোরেরাও প্রকৌশলীদের মতো ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে কেবল কেটে দেয়। পরে ওই কেবলের সঙ্গে মোটা রশি বা লোহার শিকল বেঁধে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যায়। পেছনে পেছনে কেবলও বের হয়ে আসে। তারা একবারেই দুইশ’ মিটার কেবল বের করে নিতে পারে। পরে এগুলো খ- খ- করে বস্তায় ভরে। খ- খ- কেবলগুলো গলিয়ে তামা এবং প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। এই কেবল গলানোর বেশকিছু কারখানা রয়েছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বাজারে তামার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়। দুই মিটার কেবলের মধ্যে কম করে ৪ থেকে ৫শ’ কেজি তামা রয়েছে। ৫শ’ কেজি তামার দাম ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কোন কোন কেবলের ক্ষেত্রে দুইশ’ মিটার কেবল থেকে তামার পরিমাণ আরও বেশি পাওয়া যায়। মাটির নিচে সাধারণত কেবলগুলো স্থাপন করা সেগুলোতে চার থেকে ছয় হাজার জোড়া তার থাকে। দুইশ’ মিটার তার কিনতে বিটিসিএলকে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। যখন কোন এলাকার কেবল চুরি হয় সেটি প্রতিস্থাপন করতে আরও নতুনের চেয়ে বেশি খরচ পড়ে। তার জোড়া লাগাতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। জোড়া লাগালেও সব টেলিফোন সাবেক অবস্থায় ঠিক হয় না। অর্ধেকের বেশি টেলিফোন বছরের অনেক সময় খারাপ থাকে। ধানম-ি এলাকায় দুইশ’ মিটার কেবল চুরির কারণে চার হাজার টেলিফোন বিকল হয়ে গেছে।
×