ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসানে দুগ্ধ খামারী

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

লোকসানে দুগ্ধ খামারী

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৩ জানুয়ারি ॥ জেলার দুগ্ধ খামারীরা অবরোধের কবলে দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অবরোধের কারণে বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ ঢাকাতে দুধ স্বাভাবিক সরবরাহ করতে না পারায় দুগ্ধ খামারীরা দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। ৫৫ টাকা লিটার দুধ হাটেবাজারে ১৫/২০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই খামারীদের ১০-১২ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। জানা গেছে, বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা কারখানা, প্রাণ. এমো মিল্ক, আফতাব, কোয়ালিটি, আড়ং, টাট্কা, আকিজসহ বেশ কয়েকটি দুধ চিলিং কেন্দ্রকে ঘিরে জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুরা, চাটমোহর, সুজানগর উপজেলা ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়ায় হাজার হাজার দুগ্ধ খামার গড়ে ওঠে। এসব দুগ্ধ খামারে প্রতিদিন ৫ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। উৎপাদিত এ দুধের সিংহভাগই বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটায় বিক্রি করা হয়। এসব দুধ বিভিন্ন কারখানায় প্রক্রিয়াজাতকরণ ও শীতলীকরণের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। খামারীরা জানিয়েছে, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট অবরোধ ডাকায় বাঘাবাড়ি মিল্কভিটাসহ অন্যান্য বেসরকারী চিলিং সেন্টারগুলো ঠিকমত দুধ কিনছে না। তাই খামারীরা প্রতিদিনের উৎপাদিত দুধ বিক্রি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। একবেলা মিল্কভিটা দুধ কিনলেও অন্যবেলা কিনছে না। তাই বিপুল পরিমাণ দুধ খোলা বাজারে ১৫/২০ টাকাতেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার ভাঙ্গুড়া বাজার, কালিবাড়ী বাজার, জগাতলা, ভেড়ামারা ও অষ্টমনিষা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দুগ্ধ খামারীদের দুধ নিয়ে বিক্রয়ের জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে। দুগ্ধ খামারী চরভাঙ্গুড়ার কিয়াম উদ্দিন, ভবানীপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম জানান, উৎপাদিত দুধ ব্র্যাক চিলিং সেন্টার, মিল্ক ভিটা ও আকিজ চিলিং সেন্টার কোথাও সরবরাহ করতে না পারায় বাজারে ১৫/২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। খামারীরা দুঃখ করে বললেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে গরু পালা সম্ভব হবে না, অচিরেই গোয়ালের সব গরু বিক্রি করে দিতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামছুল আলম জানান, এ উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুধ সরবরাহ করে শিশু খাদ্যের যোগান দেয়া হয়। অবরোধের কারণে দুগ্ধ খামারীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীরা জানিয়েছেন, মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ কোন কারণে দুধ না কিনলে তাদের মারাত্মক লোকসান গুনতে হয়। বাঘাবাড়ি দুগ্ধ শিল্পকেন্দ্রিক খামারীদের শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকলেও খামারীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর নেই বলেও অনেক খামারী অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীরা দাবি করেছেন, বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার ২ লাখ লিটার পাউডার দুধ উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি কারখানা স্থাপন করা হলে তাদের দুধ বিক্রি নিয়ে সমস্যা থাকবে না। বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুন জানিয়েছেন, বর্তমানে বাঘাবাড়ি, মোহনপুর ও ভাঙ্গুরায় মিল্কভিটার কারখানায় প্রতিদিন ২ লাখ লিটার খাঁটি গরুর দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ দুধ বাঘাবাড়ি কারখানায় শীতলীকরণের মাধ্যমে ঢাকার মিরপুর কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কিন্তু ২০ দলের টানা অবরোধের কারণে মিল্কভিটা ঢাকায় স্বাভাবিকভাবে দুধ পাঠাতে পারছে না।
×