ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃহস্পতিবার এলসিজি এক্সকম গ্রুপের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা

চার বছর পর বসছে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

চার বছর পর বসছে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দীর্ঘ চার বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে হচ্ছে দাতাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক। আগামী এপ্রিল মাসের শেষ দিকে বৈঠক অনুষ্ঠানের সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। কাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে দাতাদের সমন্বি^ত সংস্থা লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) ডিপি এক্সকম গ্রুপের সঙ্গে প্রস্তুতি সভায় বসছে ইআরডি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠেয় সভায় কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও এক্সকম গ্রুপের চেয়ার ইউএসএইডের ইয়ানিনা জেরুজালেসকি। এক্সকম গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন- বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাজুহিকো হিগুচি, ডিএফআইডির সারাহ কোকি (এক্সকমের ভাইস চেয়ার), কইকার কিম বুক হি, এসডিসির ডেরেক মুলার এবং ইউনাইটেড নেশনসের ক্রিস্টা রাডার। ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, সাধারণত এ গ্রুপটিই পুরো দাতাদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক নিয়ে এই প্রথম এক্সকম গ্রুপের সঙ্গে সভা করা হচ্ছে। এই সভায় আলোচনার পর বিডিএফ বিষয়ে জোর প্রস্তুতি শুরু হবে। কেননা ইতোমধ্যেই বিডিএফ বসার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি পাওয়া গেলেও আনুষ্ঠানিক বৈঠক এটিই প্রথম। তাছাড়া এক্সকম গ্রুপ যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ীই কাজ করা হবে। বাংলাদেশে কর্মরত অন্য দাতা সংস্থা ও দেশগুলোও সাধারণত এক্সকম গ্রুপের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে থাকে। তিনি জানান, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে তৈরি হতে যাওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি তুলে ধরা হবে এবং এটিই হবে মূল আলোচনার বিষয়বস্তু। এর সঙ্গে অন্যান্য এজেন্ডাও থাকবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০২ সালে প্যারিসে বাংরাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এখন থেকে প্যারিসে নয় উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। সেই হিসেবে ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে ঢাকাতেই বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরোমের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর আর বৈঠক হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এ ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সরকারের জনভিত্তি না থাকায় উন্নয়ন সহযোগীরা বিডিএফ বৈঠকে বসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। এরপর দীর্ঘ ৫ বছর পর ২০১০ সালে এসে বর্তমান সরকার আগের মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাতীয় নির্বাচন- এই তিন ইস্যুতেই এতদিন আটকেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিডিএফ বৈঠক। এখন দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঝুলে থাকা বিডিএফ বৈঠকের বিষয়ে নতুন করে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিডিএফ বৈঠক বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, এই সময়ে বিডিএফ হওয়াটা জরুরি। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দাতাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠক যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই ভাল। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৪ জুন অনুষ্ঠিত লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠক হয়। বৈঠকে দাতা সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিডিএফ বৈঠকের প্রস্তাব করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর দাতারা একমত হয়ে সম্মতিও দিয়েছিল। দাতারা বলেছিল, তারা কেন্দ্রীয় অফিসের সঙ্গে কথা বলে এ বৈঠক কবে হবে তা ইআরডিকে শীঘ্রই জানাবে। সে মোতাবেক ওই বছরের নবেম্বর অথবা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিএফ বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল ইআরডি। কিন্তু এরপর দাতারা আর কিছু জানায়নি। প্রথমদিকে পদ্মা সেতু নিয়ে টানাপড়েন ও পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ বৈঠক পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ইআরডি সূত্র জানায়, বিডিএফ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যেই বেশকিছু কাজ শুরু করেছিল ইআরডি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ এবং ১৪ জুন পর পর দুটি এলসিজি বৈঠক। যৌথ সহযোগিতা কৌশলপত্র (জেসিএস) বাস্তবায়নে এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি। এইড পলিসি বিষয়ে একটি ওয়ার্কিং ব্রিফ তৈরি ও এর ওপর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ১৮টি খাতে এলসিজির ওয়ার্কিং গ্রুপের কাজ চলছে, এক্ষেত্রে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সমন্বয়ের কাজ করছে। বাংলাদেশের জন্য প্রথম ডেভেলপমেন্ট রেজাল্ট ফ্রেমওয়ার্ক করা ইত্যাদি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশনা নিয়ে এজেন্ডা তৈরির কাজও শুরু করেছিল ইআরডি। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েনের কারণে এ কাজগুলো এক সময় স্থগিত হয়ে পড়েছিল বলে সূত্র জানায়। ইআরডির দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর দাতাদের সঙ্গে বিডিএফ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত চার বছর ধরে তা হচ্ছে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, দাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, পলিসিগত নানা বিষয় ও বৈদেশিক অর্থছাড় বাড়ানোসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিডিএফ বৈঠক হওয়াটা জরুরি।
×