ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাটি চালান দিয়েও বরিশালে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখা মিলছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

বাটি চালান দিয়েও বরিশালে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখা মিলছে না

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের রাজপথে টানা অবরোধের মধ্যে বাটি চালান দিয়েও বিএনপির নেতৃস্থানীয় কাউকে রাজপথে পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে অবরোধের পক্ষে হয়নি কোন প্রকাশ্য মিছিল কিংবা সমাবেশ। এমনকি তৃণমূল নেতাকর্মীরাও সহিংস আন্দোলনকে বর্জন করেছেন। যে কারণে বরিশাল বিএনপির দুর্গ তা পুরোপুরি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। সূত্রমতে, গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচী নিয়ে বরিশালের শীর্ষ নেতাদের রাজপথে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকদের সমর্থন না পাওয়ায় ওইদিন বরিশালের রাজপথে দেখা মেলেনি বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। অথচ বরিশাল বিএনপিতে রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল, জেলা বিএনপির সভাপতি ওবায়দুল হক চাঁন, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আকন কুদ্দুসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানসহ প্রভাবশালী অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতা। এসব নেতা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বরিশালের রাজপথে এখনও প্রকাশ্য চলমান অবরোধ কর্মসূচীতে মাঠে নামতে পারেননি। তৃণমূল বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, কেন্দ্র থেকে কী কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে তা বড় কথা নয়; বড় কথা হচ্ছে হরতাল-অবরোধের মতো কোন সহিংস আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি না। নেতাকর্মীরা আরও বলেন, কারও হুকুমে আর নয়; আগে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে নামবেন, তারপর আমরা ভেবে দেখব মাঠে নামার কর্মসূচী দেয়া হয়েছে কিনা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজপথে নামাতে ব্যর্থ হয়ে কতিপয় নেতার ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা চলমান অবরোধ কর্মসূচী চলাকালীন গত কয়েকদিন ধরে গভীর রাতে কিংবা ভোররাতে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচী পালন করে ফটোসেশন অব্যাহত রেখেছে। যে কারণে সহিংস আন্দোলন বর্জনকারী তৃণমূলের নিষ্ক্রিয় বিএনপির নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে চোখের শূল হতে হচ্ছে। নামমাত্র জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন কর্মসূচী পালনকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও ইতোমধ্যে বিএনপির নিষ্ক্রিয় অসংখ্য নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে অর্থ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। সূত্রমতে, অবরোধ কর্মসূচী চলাকালীন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর বাটাজোরে একটি টেম্পো ও ফায়ার সার্ভিস অফিসসংলগ্ন এলাকায় একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কতিপয় অনুসারী। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গৌরনদী থানা পুলিশ হয়রানির উদ্দেশ্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল হোসেন মিয়া, নলচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি (সংস্কারপন্থী হিসেবে দীর্ঘ সাত বছর ধরে দলে নিষ্ক্রিয় সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী) আলহাজ জামাল উদ্দিন ফকির, উপজেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি (কাউন্টার শ্রমিক) জাকির হোসেন কবিরাজসহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতারের পর মামলায় না জড়ানোর অজুহাতে পুলিশ আটককৃতদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েও একাধিক মামলায় আসামি করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ফলে সহিংস আন্দোলনকে বর্জন করা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলমান অবরোধ কর্মসূচী সম্পর্কে সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদার জানান, বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিক মামলার আসামি হয়েছি। নতুন করে আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবর রহমান নান্টু বলেন, আমরা কৌশলে আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠে রয়েছি। বিএনপির চলমান অবরোধের মাঝেও প্রতিনিয়ত দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার গাড়ি চলছে দাবি করে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি বলেন, অবরোধের নামে যারা গুপ্ত হামলা করছে, নাশকতা চালাচ্ছে ও গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এজতেমার মধ্যে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচী, এটা কোনো আন্দোলন নয়; এটা একটা সহিংসতা। তবে তিনি নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি না করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও উল্লেখ করেন।
×