ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুপ্রীমকোর্টে বোমা উদ্ধার প্রমাণ করে আদালত তাদের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

সুপ্রীমকোর্টে বোমা উদ্ধার প্রমাণ করে আদালত তাদের টার্গেট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এজলাস থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনার পর সংশ্লিষ্টরা বলছেন সুপ্রীমকোর্টকে টার্গেট করা হয়েছে। এর ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতই এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় রক্ষায় দ্রুত নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে বলেও দাবি করেন তাঁরা। সোমবার এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অতীতে সারাদেশে বোমা হামলা হয়েছে। আদালতেও বোমা হামলা হয়েছে। গাজীপুরের আদালতে বোমা হামলায় আইনজীবীরা মারা গেছেন। ঝালকাঠির আদালতে মারা গেছেন বিচারক। তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে, জঙ্গীবাদীদের প্রধান টার্গেট আদালত। কারণ তারা প্রচলিত আইনে বিশ্বাস করে না। আর আদালত তাদের মত অনুসারে চলে না। এর ফলে তারা আদালতকেই টার্গেট করে। তিনি আরও বলেন, আদালত শঙ্কার ভেতরে আছে। আমরাও ঝুঁকির মধ্যে আছি। এ বিষয়ে আমরা পুলিশের সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করছি। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আরেকটা বিষয় আমাদের দেখতে হবে, আমাদের আদালতে জনগণের যে ভিড় থাকে তা কোন দেশের আদালতে নেই। সে সব দেশে আদালতে ঢুকতে হলে পাস নিয়ে ঢুকতে হয়। এটাও বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, বোমা রাখার বিষয়টি দুশ্চিন্তার বিষয়। আদালতকে ভয় দেখানোর জন্য এটা হতে পারে। বিচারকে ব্যাহত করার জন্য তারা এটা করতে পারে। এ্যাটর্নি জেনারেল জানান, প্রথমে যে আদালত (এনেক্স ৯) থেকে বোমা উদ্ধার হয় সেই আদালতে একটি মামলার শুনানি হচ্ছে। বাঁশের কেল্লা সমর্থনকারীদের একটি টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে একটি মামলা রয়েছে। যার মালিকানায় বিএনপি নেতার পরিবারের সদস্য রয়েছেন। এই মামলা যাতে ওই আদালতে না চালানো হয় এ জন্য তারা একটি আবেদনও করেছে। মামলাটি বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, শঙ্কাগ্রস্ত করার জন্যই এটা করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যারা জঙ্গীবাদী তাদের বিচার হবে জঙ্গীবাদের অভিযোগে। এটা আদালত অবমাননাতো বটেই। তাদের কাছে আদালত অবমাননা অর্থহীন। আদালতের প্রতি সামন্যতম শ্রদ্ধা না থাকলে তাদের আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচার হবে কিভাবে। অবমাননাতো বটেই কিন্তু জঙ্গীবাদ আরও বড় অপরাধ। তিনি বলেন, এর আগে জঙ্গীরাই আদালতে এই ধরনের কাজ করেছে। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের কাজ তারাই করছে। শিশু হত্যা, ফ্রান্সের হামলা তারাই করেছে। অবরোধ সফল করতে এরা রাস্তায় গাড়িতে ইট ছোড়ে। এটা অবরোধ সার্থক করার প্রয়াসও হতে পারে। অবরোধকারীরা কেন এ ধরনের কাজ করবে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আদালতে এটা করলে হয়তো বিচারক বসবে না। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার এসএম কুদ্দুস জামান সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালতকে টার্গেট করা হয়েছে। এই প্রথম সুপ্রীমকোর্টে বোমা নিয়ে কেউ ঢুকে পড়েছে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের কোন ঘটনা যেন না ঘটে এ জন্য সুপ্রীমকোর্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে আরও পুলিশ চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে ১১টি সিসি ক্যামেরা ও ৪টি মেটাল ডিটেক্টেট আর্চওয়ে রয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরাগুলো অত্যন্ত দুর্বল মানের। আর্চওয়ে কয়টি সচল আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, এজলাসের গেটে নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে অতিরিক্ত ১০ জন নিরস্ত্র পুলিশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদালতে প্রবেশের সময় সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বিচারপ্রার্থী, সাংবাদিক ও সিনিয়র আইনজীবীদের যেন হয়রানির শিকার হতে না হয়, সে বিষয়েও নজর রাখা হবে বলে তিনি জানান। রেজিস্ট্রার আরও বলেন, বিচারকক্ষের নিরাপত্তা জোরদারে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকদেরও দৃষ্টি রাখতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। রবিবার হাইকোর্ট থেকে বোমা উদ্ধারের পরই হাইকোর্টের ফুলকোর্ট সভায় প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের বিচারপতিদের এ কথা বলেন। হাইকোর্টে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা কমিশনারের নিকট অতিরিক্ত পুলিশ চেয়েছিলাম। রবিবার বোমা পাওয়ার পর অন্যান্য দিনের চেয়ে অতিরিক্ত ২০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সুপ্রীমকোর্টে। বর্তমানে ১৫০ পুলিশ সদস্য সুপ্রীমকোর্টের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
×