ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এই বিনিয়োগ আনতে সরকারের ৩১ দফা কর্মপরিকল্পনা;###;ইতোমধ্যে পাঁচ ইপিজেডে ৪ শিল্প প্লট সংরক্ষণ করা হয়েছে জাপানী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য

বাংলাদেশে বড় মাপের বিনিয়োগে আগ্রহ জাপানের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশে বড় মাপের বিনিয়োগে আগ্রহ জাপানের

এম শাহজাহান ॥ জাপানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব হচ্ছে বাংলাদেশে। বিগ-বি ইনিশিয়েটিভের আওতায় বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে এই শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে জাপানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের মধ্যে যাতে জাপানের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসতে পারে সেলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও মনিটরিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। জাপানী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য পাঁচটি ইপিজেডে ৪০টি শিল্প প্লট ও ২টি কারখানা ভবন সংরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে যেসব আলোচনা ও চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তা বাস্তবায়নে ৩১ দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় জাপানের সঙ্গে ৭২০ কোটি ডলারের যে চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নেও সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশকে সম্ভাবনার ভূমি হিসেবে দেখছে বহুদিনের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান। কম খরচের এই দেশটিতে তাই তারা বিনিয়োগ ক্ষেত্র করতে চায়। এদেশের বহুমাত্রিক শিল্পায়নে সহায়তা করতে চায় এশিয়ার অন্যতম এই অর্থনৈতিক শক্তি। বিনিয়োগ বোর্ড জানিয়েছে, জাপানের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বড় মাপের কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আসিয়ানসহ চীন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে তাদের গার্মেন্টস কারখানাগুলোও তারা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আগ্রহ দেখিয়েছে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ এবং অপেক্ষাকৃত সস্তায় জনশক্তি পাওয়া যায়। জাপানের আগ্রহকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মে মাসে টোকিও সফরের সময় শুধু জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে ৫০০ একরের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। সে সময় রফতানি প্রস্তুতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (জেট্রো) একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। সে চুক্তি অনুসারে, জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য পাঁচটি ইপিজেডে ৪০টি প্লট ও দুটি ভবন জাপানের জন্য করা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশকে জাপান বড় ধরনের ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এ ঋণের অর্থে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের প্রস্তাব আছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে আছে গঙ্গা ব্যারাজ, যমুনা নদীর নিচে টানেল, যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো শুধু রেলের জন্য আরেকটি সেতু, বহুমুখী ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস ও ঢাকার চারপাশে থাকা চার নদীর জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার মতো বৃহৎ অর্থায়নের প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোই বাছাই, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির জন্য যৌথ কাঠামো চাইছে জাপান। একই সঙ্গে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প ও রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্পেও অর্থায়ন করছে জাপান। জানা গেছে, দেশে ৫টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্যে পছন্দসই যেকোন একটি বেছে নিতে পারবেন জাপানী বিনিয়োগকারীরা। জাপানের বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ইতোমধ্যে এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এদিকে, আগামী ১৪ জানুয়ারি জাপানের বিনিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে নৌ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহু পুরনো। তবে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জাপান বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গড়ে তুলতে চায়। তিনি বলেন, এছাড়া জাপান দেশের বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করে যাচ্ছে। সরকার জাপানী বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সূত্রমতে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে পাশে পেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক শক্তি জাপান। আসিয়ানে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বাংলাদেশ প্রধান মি. মিকিও হাতেদা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার জাপান ॥ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার জাপান। জাপান প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর জাপানে মাত্র ৭৫০ মিলিয়ন মূল্যমানের পণ্য রফতানি করা হয়। দু’দেশের মোট বাণিজ্য মাত্র ২ দশমিব ৫ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যিক ভারসাম্য জাপানের অনুকূলে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে জাপানী বিনিয়োগ ও জাপানী শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এই অসমতা দূর করা সম্ভব। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড এ্যাসোসিয়েশন (জেট্রো) জাপানের জন্য বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহৎ লাভজনক ব্যবসায়িক স্থান মনে করে। এ কারণে শতকরা ৮৭ ভাগ জাপানী ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
×