ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্ষুব্ধ উত্তরের কৃষকরা

‘বিএনপি হামাগের পেটত লাথি মারে’

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

‘বিএনপি হামাগের পেটত লাথি মারে’

সমুদ্র হক ॥ বিরোধী দলের অবরোধে মহাস্থানগড় এলাকার একজন কৃষক উৎপাদিত সবজি ফেলে দিয়ে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে সাফ বললেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার হামাগেরক ফসল ফলাবার ব্যবস্থা করে দেয় আর বিএনপি সেই ফসল বেচপের (বিক্রি করতে) না দিয়ে হামাগেরে পেটত লাত্তি মারে...।’ এই কথা বলার সঙ্গে আরও ক’জন কৃষক দলবদ্ধ হয়ে একই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এই দৃশ্য সোমবার সকালের। গেল ক’বছরে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে ধানসহ সবজির এতটাই ফলন হয়েছে যে, এই ফসল বেচেই তারা দারিদ্র্যের অভিশাপ অনেকটাই লাঘব করেছেন। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে চণ্ডীহারা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই ধারে নিত্যদিন সবজি ও কাঁচকলার যে বেচাকেনা হয় তা অর্থনীতির কর্মকাণ্ডকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। এসব সবজি ও কলা দেশের পূর্বাঞ্চলে যায় ট্রাকের পর ট্রাকে করে। তারপর অনেক সবজি বিশেষায়িত হিমাগারে রেখে রফতানি করা হয়। হালে উদ্বৃত্ত চালও রফতানি শুরু হয়েছে। অবরোধ ও হরতালে উৎপাদিত পণ্য সবজি বেচতে না পেরে কেউ তা পানির দরে বিক্রি করছেন। কেউ ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিরোধী দলের এই অহেতুক অবরোধের ওপর এতটাই ক্ষুব্ধ যে, এখনই বলাবলি হয় এবার আসুক ভোট চাওয়ার জন্য! কয়েকজন তো আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ওদের ক্ষমতা দেখা আছে। শুধু হুঙ্কার দিয়ে গলা ফাটিয়েই লেজ গুটিয়ে পালানো। গ্রামের মানুষ আরও ভালভাবে বুঝে গিয়েছে বিএনপি কতটা মিথ্যাচার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়। শিক্ষিতজনেরা টিভির খবরে ও সংবাদপত্রে এসব পড়ে শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করেন, ‘ছিঃ- এর নাম বিএনপি!’ দৃশ্যপট-২ : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইলেকট্রনিকের অনার্সের শিক্ষার্থী নোশিতা নওরীন তৌষিসহ কয়েকজন সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়ে ক’দিনের জন্য বগুড়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অবরোধের কারণে ঢাকা ফিরতে পারছেন না। এসব শিক্ষার্থীর অনেক মূল্যবান ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে। তাদের কণ্ঠেও ক্ষোভ। একজন তো বলেই ফেললেন, বিএনপি কি লেখাপড়া ঠিকমতো করতে দেবে না? ঢাকা ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রিপল ই বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহা নূর নওরীনসহ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনালের একটি বিষয়ের পরীক্ষা শুধুই পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, এরা কতটা ভাল ফল করতে পারবে সেই ভাবনায় পেয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে যারা মেধাবী এবং পরীক্ষায় ভাল ফল করে তারা ওয়েভার (বৃত্তি) পায়। এই বৃত্তিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের কিছুটা সাশ্রয় হয়। এসব শিক্ষার্থী বলাবলি করে, বিরোধী রাজনীতিকরা কি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে না! আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। জীবনের প্রথম এই পাবলিক পরীক্ষা নিয়েও কিশোর-কিশোরীরা চিন্তিত। তারা প্রশ্ন করছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা তো ঠিকমতো হবে! ওই সময়ে বিরোধী দল তো কোন অবরোধ ও হরতাল দেবে না। দিলে তো পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ে রেজাল্টের ওপর বড় প্রভাব পড়বে! কচি মনের এসব ভাবনা কি প্রবীণ রাজনীতিকরা খেয়াল করেন? কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মন্তব্য, বিএনপি লেখাপড়া চায় না। তারা মূর্খ বানাতে চায়। বিএনপি-জামায়াতের ‘বিজ্ঞ’ রাজনীতিকরা কি এসব কচি মায়াবী শিশুমুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন! দেশকে কী নিদর্শন দিয়ে যাচ্ছেন আপনারা। কিভাবে আশা করেন এসব নিষ্পাপ কচি মুখ আপনাদের ভালবাসবে! ওদের ভালবাসা না পেলে আপনারা যে তার উল্টোটা পাবেন তাও কি ভাবেন! কোনটা নেবেন সেই ভাবনা এখন আপনাদের। অবশ্য যদি আপনারা সত্যিকার অর্থে রাজনীতি করেন।
×