ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতায় জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

নাশকতায় জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চলছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত সারাদেশে চলমান অভিযানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ও দলটির নির্বাহী সদস্য বেলাল আহমেদ, ফেনীতে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে হামলায় বিচারকসহ দুইজন আহত হওয়ার ঘটনায় ফেনী জেলা জামায়াতের আমিরসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই নাশকতামূলক কর্মকা-ে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার আসামি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী। এছাড়া বিএনপি নেতা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে মিরপুর মডেল থানায় যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ৫ জানুয়ারি নিরাপত্তাজনিত কারণে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী আর বিভিন্ন জেলায় জেলায় হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করেন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া। কর্মসূচীর কবল থেকে রক্ষা পায়নি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম উম্মাহ ধর্মীয় মহাসমাবেশ বিশ্ব এজতেমা। এমনকি আখেরি মোনাজাতের দিনেও এমন কর্মসূচী ছিল। কর্মসূচীতে বিএনপি-জামায়াত নেতারা মাঠে থাকছেন না। তবে ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটছে। ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে একের পর এক চোরাগোপ্তা হামলা করে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে কর্মসূচী আহ্বানকারীরা। ইতোমধ্যেই গত ৬ জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন অন্তত শতাধিক। দগ্ধদের অনেকের অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। আহত হয়েছেন পুলিশ, পথচারীসহ নানা শ্রেণীর পেশার অন্তত দুই হাজার মানুষ। দগ্ধদের অনেককেই চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হতে পারে। অবরোধ আর হরতালে লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল খানিকটা বিঘিœত হয়েছে। আতঙ্কের মধ্যেও চলছে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। সোমবার সন্ধ্যা থেকে সারাদেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নামানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার আনসার ভিডিপি সদস্য। তারপরও নাশকতা থেমে নেই। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ চলাকালে পর পর তিনটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বাংলা একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠলে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। এছাড়া বোমা ও পিস্তলসহ সমাবেশস্থলে প্রবেশের চেষ্টাকালে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, দেশব্যাপী চলমান নাশকতার ধারাবাহিকতায় বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটতে পারে। সমাবেশ ভু-ুলসহ আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হতে পারে। এদিকে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা চালানোর ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সোমবার ভোরে রাজধানীর গুলশান-১ থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ও নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদকে আটক করে র‌্যাব। নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে জানান, সরকারবিরোধী চক্রান্ত এবং দেশব্যাপী চলমান নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গুলশান মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের গুলশান থানায় দায়েরকৃত যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আজ তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে সোর্পদ করার কথা রয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার রাতে ফেনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কাদির মিয়ার গাড়িতে হামলায় ও ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুর রহমানের স্ত্রী সাঈদা আফরীন মুস্তারি আহতের ঘটনায় সোমবার ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির একেএম সামছুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে অভিযান চালিয়ে থানাটির জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারসহ ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া সোমবার ভোরে রাজশাহী বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। যদিও তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। মিনু ছাড়াও রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা- ও অপতৎপরতায় জড়িত অনেকেরই বাসায়ই তল্লাশি চালানো হয়েছে। তারা পলাতক। প্রসঙ্গত, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৯ জানুয়ারি গ্রেফতার হয় বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে চলমান নাশকতায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারনামীয় আসামি এবং আসামিদের ইন্ধনদাতা, অর্থদাতাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা মোতাবেক গ্রেফতার অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশ কিছু পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে। পেশাদার অপরাধীরা ভাড়ায় যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালিয়ে থাকে। রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত সারাদেশে চলমান অভিযানে দুই শতাধিক নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা ও আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
×