ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টানা অবরোধ-হরতালে অর্থনীতির বিপদঘণ্টা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

টানা অবরোধ-হরতালে অর্থনীতির বিপদঘণ্টা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অনির্দিষ্টকালের অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন জ্বালাও- পোড়াও অব্যাহত ঠিক তখনই রাজধানী ঢাকাসহ ১৪ জেলায় হরতালের ডাক অর্থনীতির বিপদঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। রাজনীতির এই অস্থিরতাকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, এতে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হবে। তাদের মতে, আবারও হরতাল-অবরোধের আগুনে পুড়ছে অর্থনীতি। ছয় দিনের টানা অবরোধে ইতিমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে কৃষিজাত খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে পারছে না কৃষক এবং প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ঢাকার বাজারে। এদেকি অবরোধকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ায় রফতানিমুখী শিল্পপণ্যের পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদনও কমেছে শিল্প কলকারখানাগুলোতে। গত ছয় দিনে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতে। একদিকে অবরোধকারীরা শত শত বাস-ট্রাক ভাংচুর করায় ও জ্বালিয়ে দেয়ায় যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি আন্তঃজেলা পরিবহন সংগঠনগুলো যাত্রী পরিবহন করতে না পারায় লোকসান গুনছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। বিকেলে রংপুরের মিঠাপুকুরে অবরোধকারীরা অবলীলায় ভেঙ্গেছে প্রায় দুই শতাধিক গাড়ি। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, বগুড়া, ঢাকায় অর্ধশতাধিক গাড়ি পুড়েছে অবরোধের আগুনে। বাস-ট্রাক পোড়ানো এখনও অব্যাহত। এসব ঘটনায় হতাহত হয়েছে বহু মানুষ। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ২৪ ঘণ্টার হরতালে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। শ্রম ঘণ্টা, শ্রম, উৎপাদন এবং বাণিজ্যেও বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় এই ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাবে। শীর্ষ বণিক সমিতি এফবিসিসিআইর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতি ১২ ঘণ্টা হরতাল-অবরোধে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অর্থনীতির উন্নয়ন সূচকগুলোর গতি থমকে যায়। উন্নয়ন কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হয়। এফবিসিসিআইর সহসভাপতি ও রাজধানীর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, লাগাতার অবরোধ-হরতালে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে অর্থনীতির। দেশের উন্নয়ন করতে হলে বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অবরোধ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ এই বণিক সংগঠনটির সভাপতি কাজী আকরাম হোসেন। তিনি বলেছেন, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না চাইলে অবরোধ প্রত্যাহার করা উচিত। রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেছেন, অবরোধ হরতালে মূলত শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয় বেশি। এই আর্থিক ক্ষতি অব্যাহত থাকলে তা অর্থনীতির জন্য খুবই সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। মালিবাগ বাজারের কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে যেসব রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধ ডাকে তাদের স্বার্থের চেয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয় বেশি। তিনি বলেন, আমাদের মতো বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই অবরোধে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। পণ্য সরবরাহ কম থাকায় একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে নানা পণ্যের বিক্রি-বাট্টায়।
×