ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেশিরভাগ স্লুইসগেট অবৈধ দখলে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

বেশিরভাগ স্লুইসগেট অবৈধ দখলে

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের অধিকাংশ স্লুইসগেট প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। এর পাশাপাশি প্রভাবশালীরা বেড়িবাঁধ কেটে যত্রতত্র নিজেদের মর্জিমতো বাঁশ কাট বেড়া দিয়েও স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে। এগুলো দিয়ে তারা তাদের ইচ্ছামতো নদী-খালের পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। শুধু মাছ চাষের সুবিধার জন্য প্রভাবশালীরা এ কাজ করলে কৃষকদের জন্য তা সর্বনাশ বয়ে এনেছে। মাত্রাতিরিক্ত লবণ পানি ঢোকানোর কারণে ধানসহ রবিশষ্য চাষাবাদে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছে। এছাড়া, যেখানে সেখানে বাঁধ কাটার কারণে পুরো এলাকার বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে করে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতার আশঙ্কাও বেড়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার উদ্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে মাটির উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু গত দু’দশকে বাগদা চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ চাষের প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে স্লুইসগেট দখল ও যত্রযত্র দুর্বল অবকাঠামোর স্লুইসগেট নির্মাণের সর্বনাশা কর্মকা-। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাগরপাড়ের চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চারদিক ঘেরাও করে নির্মিত ৩৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাঁচটি স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে। এগুলো যেমন প্রভাবশালী মৎস্য চাষীরা দখল করে নিয়েছে। এর পাশাপাশি প্রভাবশালীরা নিজেদের উদ্যোগে আরও ১৮টি স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে। এগুলোর অধিকাংশই নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশ কাঠ টিনের বেড়া দিয়ে যেমন তেমনভাবে। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ ইট রড সিমেন্ট দিয়েও ইচ্ছামতো স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে। এগুলো নির্মাণে যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন ধরনের অনুমতি নেয়া হয়নি। একইভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ডিজাইন অনুসরণ করা হয়নি। যার যেমন খুশি তেমনি নির্মাণ করেছে। গণহারে স্লুইসগেট নির্মাণ ও দখল করার কারণে একদিকে পুরো এলাকার বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মাছ চাষের সুবিধার জন্য পানি সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কর্তৃত্বে নেয়ায় কৃষকরা পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছে। কৃষকের যখন পানি প্রয়োজন, প্রভাবশালীরা তখন স্লুইসগেট আটকে রাখে। আবার প্রয়োজন না হলে তখন কৃষকদের ক্ষেত-খামার, বাড়িঘর পানি দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এতে করে এলাকায় গোটা কৃষি খাত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য লবণ পানি কৃষিতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় বয়ে এনেছে। প্রভাবশালীরা বাগদা চিংড়ি চাষে সহনশীল মাত্রার চেয়ে অধিক মাত্রার লবণ পানি ব্যবহার করছে। এতে কৃষির পাশাপাশি ভূপ্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং জীবন জীবিকাসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চরমোন্তাজ ইউনিয়নে যারা স্লুইসগেট দখল করেছে এবং যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে, তারা প্রায় সকলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা। কেউ কেউ নির্বাচিত প্রতিনিধিও। তাদের দাপটের কাছে জনগণ থেকে শুরু করে প্রশাসনও অসহায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করেছে। কিন্তু তাতে কোন সুফল মেলেনি। সরকারী অর্থ ব্যয়ে নির্মিত স্লুইসগেটগুলো হয়নি দখলমুক্ত। অপসারণ হয়নি ব্যক্তি উদ্যোগে যত্রতত্র নির্মিত দুর্বল অবকাঠামোর স্লুইসগেট। একইভাবে রাঙ্গাবালী, ছোটবাইশদিয়া, বড়বাইশদিয়া ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের স্লুইসগেটগুলোও বেদখল হয়ে আছে। সে সব জায়গাতেও নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু ব্যক্তি উদ্যোগে স্লুইসগেট। সেগুলোর বিষয়েও কর্তৃপক্ষ চরম উদাসীন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সফিউদ্দিনের মতামত জানতে বার বার ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
×