ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শামসুল আরেফিন খান

পঞ্চম বাহিনী নির্মূল করার সময় এখনই

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

পঞ্চম বাহিনী নির্মূল করার সময় এখনই

‘ষষ্ঠ বাহিনী’ কথাটা ‘পঞ্চম বাহিনী ও কুইসলিং’ শব্দ দুটির সঙ্গে পরম্পরায় যুক্ত। রাশিয়ার রেড আর্মি, চীনের পিপলস আর্মি, ইরানের বিপ্লবী গার্ড এবং দেশে দেশে বিপ্লবের ভ্যানগার্ড হয়ে যারা পঞ্চম বাহিনী ও কুইসলিংদের প্রতিরোধ করেছে তারা ষষ্ঠ বাহিনী অভিধার দাবিদার। ১৯৭১ সালে বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি। বাংলাভাইর নতুন সংস্করণ আল কায়দার সহযোগী আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের কথিত ড্রোন দিয়ে হাসিনা হত্যার পরিকল্পনা এবং হাঁটুভাঙ্গাবিরোধী দলের আস্ফালন বলে দিচ্ছে পঞ্চম বাহিনী এবং কুইসলিংদের নির্মূল করার সময় হয়েছে। কিন্তু বাঙালী ষষ্ঠ বাহিনী কই? আওয়ামী পরিবারে অনুপ্রবেশ করে যারা খাই খাই করে হানাহানি করছে তারাই বা কারা? পঁচাত্তরের বিভীষণ নয় তো? ’৭২ সালে ঝিনেদায় ‘সপ্ত ডিঙ্গা’ খ্যাতি পাওয়া এক নব্য ধনীর নেতৃত্বে কুচক্রীরা যারা আওয়ামী লীগকে কমিউনিস্ট লীগ বলে বিষোদ্গার করছে তারাই বা কার তাঁবেদার বা অনুচর? অতি বিপ্লবী ধাক্কা দিয়ে যারা গণজাগরণ মঞ্চের ঐক্য মিসমার করল : সময়ের সাহসী সন্তানদের ম্রিয়মাণ করল; তাদেরও চেনা দায়! সত্যিই পোড়া কপাল বাঙালীর! ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায়। মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বদেশের মানচিত্রখচিত পতাকার শক্তি নিয়েই ন’মাসের যুদ্ধে অকুতোভয় ও দুর্বিনীত হয়েছিল। সেই পতাকা উড্ডীন রাখতেই ৩০ লাখ শহীদ অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। প্রায় চার লাখ বীর নারী বিসর্জন দিয়েছিলেন আপন সত্তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কপাল দোষে পেশাদার রূপোপজীবীরাও সেদিন স্বেচ্ছায় মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হয়েছিল। হানাদারদের সম্ভোগ শয্যাতলে মাইন পেতেছিল। পানপাত্রে মরণনেশা ঢেলেছিল। কিন্তু ঘসেটি বেগমের পর বিলাস শয্যায় গা ভাসানো আর একজন মাত্র ভোগবাদী রমণীই কেবল কলঙ্কিত করেছিল প্রীতিলতার বংশধর সংগ্রামী বঙ্গ ললনাদের শতাব্দী লালিত বীরোচিত আত্মত্যাগের মহান ঐতিহ্যকে। জাতির জনক ক্ষমা করেছিলেন তাকে অশ্রুসজল শকুন্তলা মূর্তিতে দেখে। রক্ষা করেছিলেন ক্ষুব্ধ স্বামীর রোষানল থেকে। হানাদারদের বর্বর নির্যাতনের শিকার অন্য সব অসহায় নারীকে তখন তিনি নিজ সন্তানের মর্যাদা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস কী ক্ষমা করবে সেই ‘বাচ্চালান’ নারীকে? দুর্ভাগ্য জাতির না সেই কৃতঘœ জানানার? জানি না। এক আকাশ আপত্যের প্রতিদানে তিনি এখন নারকীয় উল্লাসে কেক কেটে ১৫ আগস্ট নিজের ‘তিন নম্বর’ জন্মদিন পালন করেন তখন লজ্জায় মহীয়সী বঙ্গললনাদের মাথা কাটা যায়। সেই কলঙ্কিনীর গর্ভজাত অর্বাচীন পুত্র অমার্জনীয় ধৃষ্টতায় মিথ্যার বেসাতি করে জাতির জনকের অবমাননা করছে। অসম্মান করছে। আর নিজের পাপের বোঝা ভারি করে চলেছে। শেখ হাসিনার ভাষায় ‘জানোয়ারের মতো আচরণ’ করছে। অথচ সারাবিশ্বের বাঙালী অসীম সহনশীলতার সঙ্গে সেই নির্বোধের বোধোদয়ের প্রতীক্ষা করে চলেছে। বাঙালী পাঞ্জাবের শিখদের মতো প্রতিশোধ পরায়ণ জাতি নয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় ১৪ এপ্রিল ১৯১৯ অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা সংঘটিত হয়। নিরমম সেই হত্যাকা- অনুমোদন করেন পাঞ্জাবের লে. গবর্নর স্যার মাইকেল ও’ডায়ার (ঝওজ গওঈঐঅঊখ ঙ’উডঊজ)। ১৩ মার্চ ১৯৪০ লন্ডনের কিংসটন প্যালেস মিলনায়তনে প্রতিশোধ পরায়ণ ‘শহীদে আজম’ বিপ্লবী উধাম সিংয়ের গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ ভারতীয় বীরকে অভিনন্দন জানান। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাযজ্ঞ থেকে দৈবাৎ বেঁচে যাওয়া ১১ বছরের বালক উধাম সিং ২১ বছর পর প্রতিশোধ সংকল্প পূরণ করে ফাঁসিকাষ্ঠে জীবন বিসর্জন দিয়ে অমর হয়েছেন। বাঙালীর রক্তে প্রতিশোধের সেই আগুন থাকলে ১৯৭১ ও ১৫ আগস্ট পঁচাত্তরের ঘাতকরা রেহাই পেত না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই। হতভাগ্য বাঙালী তাঁকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে পারেনি। একাত্তরের ‘কুইসলিং’ আর ‘পঞ্চম বাহিনী’ দেশে-বিদেশে আবার সক্রিয় হয়েছে বহুগুণ শক্তি নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই নিষ্ক্রিয় ছিল না। তারা ইতিহাস বিকৃতির মচ্ছব করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি বিক্ষত করছে। তারা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য নানাবিধ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বলে রাখা দরকার যে, নরওয়ের ‘মীরজাফর’ ভিডকুন কুইসলিং (ঠওউকটঘ ছটওঝখওঘএ) স্বদেশ দখলকারী, হানাদার জার্মানির তাঁবেদার পুতুল সরকারের শিরোমণি হয়ে জন্মজননীর পায়ে শিকল পরিয়েছিল। তারই নামানুসারে গাদ্দার অর্থে কুইসলিং শব্দটির জন্ম হয়েছে। ১৯ এপ্রিল ১৯৪০ ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দি টাইমস’ সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছিল, ‘কুইসলিং শব্দটি লেখকদের কাছে ঈশ্বরের দান। তাদের যদি বলা হতো, দেশদ্রোহী শব্দের একটা প্রতিশব্দ রচনা কর। তারা এমন যুৎসই মোক্ষম শব্দ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হতো।’ তেমনি একটি অনন্য অতুলনীয় বিকল্পহীন বচন বুঝি ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।’ মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘কুইসলিংদের’ সবাইকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। পঞ্চম বাহিনীর প্রধান কুশীলবেরও মুখোশ উন্মোচন হয়নি। তার গায়ে এবং কিছু অনুসারীর গায়ে মুক্তিযোদ্ধা লেবাজ থাকায় জনগণ বিশেষ করে প্রজন্ম গোয়েবলসীয় কামানদাগা মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হচ্ছে। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। রাখে আল্লাহ মারে কে? তবুও জাতির স্বার্থে দেশের স্বার্থে বাঙালীর শেষ আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনাকে হায়েনার থাবা থেকে রক্ষা করা আমাদের অলঙ্ঘনীয় পবিত্র কর্তব্য। আমাদের বলতে সবার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির প্রতিটি মানুষের। মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের এবং তাদের সন্তান ও স্বজনদের। বিশেষ করে নবজাগৃতির পথিকৃৎদের। নবীন প্রজন্ম এবং তরুণদের। যাদের মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিয়ে বাঁচার সুযোগ করে দিয়ে জাতির জনক জীবন দিয়েছেন। শিশু রাসেল প্রাণ দিয়েছে। যাদের জন্য একটা সুন্দর সুখী ভবিষ্যত গড়তে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার জন্যেই প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। শাহবাগ চত্বরে তারাই ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগান উচ্চারণে অনীহ হয়ে যখন আত্মহননের পথে হাঁটে তখন ১ জানুয়ারি ’৭৩-এর কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বামচাপে বস্তুগত পরিস্থিতি অপরিপক্ব থাকতেই বঙ্গবন্ধু কিভাবে ভুল পথে পা রেখেছিলেন। ইন্দোনেশিয়ার ড. সুকর্নো কিভাবে নিজের জীবন এবং বিপ্লবের ফসল জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। চিলির আলেন্দে বাম রোমান্টিকতায় মগ্ন হয়ে কিভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন ! একাত্তরের মিত্ররা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। এখন বৈশ্বিক পরিসরে শেখ হাসিনার মিত্র সংখ্যা হয়ত বেড়েছে। সাম্রাজ্যবাদ প্রকৃত অর্থেই কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। সেখানে সুবিধাবাদীদের হাট বসেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন তাঁর দলে স্থায়ী সরকারী দল এবং বহুকথিত ‘প্রেজেন্ট গবর্নমেন্ট পার্টির’ -পি জি পি –র স্থায়ী সদস্যদের উপস্থিতির কথা। বঙ্গবন্ধু ‘যখন যেমন তখন তেমন’ বহুরূপীর গল্পটা বার বার বলতেন পঞ্চাশ দশকের বিভিন্ন জনসভায়। একাত্তর পরবর্তীকালের জনসভায় বলতেন ‘চাটার দলের’ কথা, বলতেন চোরের খনির কথা। সে গল্প আজও শেষ হয়নি। কুচক্রী ও মতলববাজরা মহামানবের সেই সরলুক্তির কুব্যবহার করছে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে ’৭২-৭৫ সময়কালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঘরের অলিন্দে প্রকোষ্ঠে উঠোনে গোয়ালে কুইসলিং ও ৫ম বাহিনী এবং মেষের ছাল গায়ে হিংস্র নেকড়েরা বাসা বেঁধেছিল। বঙ্গবন্ধু বাস্তু গোখরোদের দুধকলা দিয়েছেন।আস্তিনের নিচে ইচ্ছানাগের অস্তিত্ব টের পাননি। স্নেহ ভালবাসা এবং আপত্যে অন্ধদেবতায় পরিণত হয়েছিলেন। আলামতে বুঝতে পারি, শেখ হাসিনা নাগিনীদের গরল নিঃশ্বাসের ছ্যাঁকা অনুভব করছেন। সে সম্পর্কে সজ্ঞান ও সচেতন রয়েছেন। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু সতর্ক থাকছেন কতটা সেটা জানি না। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘আমারে মারবে কেডা?’ শেখ হাসিনা বলছেন, ‘বাবাকে হারিয়েছি, মাকে হারিয়েছি, ভাইদের হারিয়েছি, সোনামনি রাসেলকে হারিয়েছি আমার আর হারাবার আছে কী’? সেটাই বড় ভয়। তাঁর রক্তে বেপরোয়াভাবটা জেনেটিক! শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা আর কোন শকুনিকে খামচে ধরতে দেব না। শহীদের রক্তভেজা পতাকা প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে রক্ষা করব, আজ এটাই আমাদের শপথ’। তাঁর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রজন্মকেও একই সঙ্গে শপথ নিতে হবে। বলতে হবে, ‘আমরাও বুকের রক্ত দিয়ে ১৫ আগস্ট ও ২৪ আগস্ট-এর রূপকারদের প্রতিহত করব’। ১৯৭৫ আর ২০১৪’র মধ্যে পার্থক্য ৩৯ বছরের। এর মধ্যে পদ্মা মেঘনা যমুনার অনেক জল সাগরে গড়িয়েছে। লক্ষ কোটি টন পলি গড়িয়েছে গঙ্গা-যমুনা দিয়ে। ২২ হাজারের জায়গায় কোটিপতির সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অপ্রদর্শিত কালো টাকার পরিমাণ সরকারী হিসাবেই ৮ লক্ষ কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে। ওভার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে একমাত্র পোশাক শিল্প থেকেই ২৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে প্রতিবছর। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এক কোটি বাঙালীর শ্রমসিক্ত ১৫-২০ বিলিয়ন ডলার দেশে এসে জমা হচ্ছে। তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। পোশাক শিল্প ২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ স্থির করে স্বপ্ন পূরণের জন্যে কাজ শুরু করেছে। পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। পঞ্চম বাহিনীও বলবান হয়েছে জনবলে মনোবলে, অর্থবলে। বলে রাখা দরকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনিস্টন চার্চিল ২১ জুন ১৯৪১ সেন্ট জেমস প্রাসাদে মিত্র বাহিনীর প্রতিনিধি সভায় এবং ২৬ ডিসেম্বর ১৯৪১ মার্কিন কংগ্রেসের উভয় হাউজের যৌথ জার্মানীর চরদের কুইসলিং বলে চিহ্নিত করায় শব্দটিকে ইংরেজি রাজনৈতিক পরিভাষায় যুক্ত হয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। আর আর্নেস্ট হেমিংওয়ে স্পেনের জাতীয়তাবাদী জেনারেল এমিলিও মোলার কাছ থেকে ধার করে বোমা বিদ্ধস্ত মাদ্রিদের প্রেক্ষাপট নিয়ে পঞ্চম বাহিনী শিরোনামের একমাত্র নাটকটি রচনা করেন। কুইসলিং এবং পঞ্চম বাহিনীর সাথে সম্যক পরিচয় না ঘটলে একাত্তরের ছদ্মবেশী গাদ্দারদের মুখোশ উন্মোচন করা সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের দ- কার্যকর করতে জনগণের সাহায্য কামনা করে বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, রায়ও কার্যকর হবে’। ওদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্যে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা গেছে ১৭ জানুয়ারি ১৯৬১ কালো আফ্রিকার উদয়ের কবি স্বাধীন কঙ্গোর প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বার মৃত্যু পরোয়ানায় যুক্ত স্বাক্ষর করেছিলেন বেলজিয়ামের তদানীন্তন রাজা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। হত্যাকা-টি ঘটানো হয়েছিল। রাজনীতির কবি বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু পরোয়ানায় কে বা কারা স্বাক্ষর করেছিলেন সে কথা ইতিহাস এখনও বলেনি। কিন্তু শেখ হাসিনার মৃত্যু পরোয়ানা স্বাক্ষরকারী নিজেই ধরা দিয়েছেন। খুনের হুকুম প্রত্যাহার করে বলেছেন, ‘হাসিনা হত্যার দরকার নেই, আল্লাহর গজবেই শেষ হবেন।’ (জনকণ্ঠ শিরোনাম, ১৪ ডিসেম্বর ’১৪) অক্ষমের আস্ফালন বা বাচালের প্রগলভতা বলে অবজ্ঞা করলে মূর্খের স্বর্গবাস হবে। বিশাল ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। জাতির সামনে অন্ধকার ভবিষ্যত নেমে আসবে। সমৃদ্ধির ধারা থমকে যাবে। বাঙালী সমুদ্র বিজয়ের ফসল থেকে বঞ্চিত থাকবে শতবর্ষ। লুমুম্বার পরে রতœগর্ভ কঙ্গোয় আজও কোন নেতা আসেননি। মিশরে নাসেরের, তুরস্কে কামাল আতাতুর্কের শূন্যতা পূর্ণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর শূন্যতাও পূরণ হওয়ার নয়। শেখ হাসিনা শূন্য গ্লাসের অর্ধেকটা হলেও পূর্ণ করতে পেরেছেন। একদিন ছিল স্বর্ণ সূতার দেশ। এখন হয়েছে ব্ল্যাক ডায়মন্ডের দেশ, তরল সোনার দেশ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ তলদেশে ছড়িয়ে আছে কালো হীরা। লুকিয়ে আছে অফুরন্ত তরল সোনা। সুদূর প্রসারিত সমুদ্র সৈকতের বিস্তীর্ণ বালুচরে ছড়িয়ে আছে মহামূল্যের ইউরেনিয়াম। এটা কোন রূপকথার গল্প না। চন্দ্র-সূর্যের মতো বাস্তব। এই সম্পদ আঁচ করেই বাংলার আকাশে শকুনিরা পাখা ঝাপটা দিচ্ছে। ঈগল পাখা বিস্তার করেছে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু কেবল গর্জন করে তর্জন করে বা কেবল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিপদকে বিতাড়িত করা যাবে না। আপদ হয়ত দূর হবে। বিপদ কাটাতে হলে এবার হুজি, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম প্রভৃতি কুইসলিং এবং পঞ্চম বাহিনী নির্মূল করতে আধুনিক প্রশিক্ষণে ঋদ্ধ দেশপ্রেমিক ‘ষষ্ঠম বাহিনী’ তৈরি করতে হবে যারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘জানোয়ার’ দমন করবে । ১৫ আগস্ট ’৭৫, ২১ আগস্ট ২০০৪ এবং ২০১৩’র রক্তাক্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করে উন্নয়নের ধারা নির্বিঘœ রাখবে। শোষকের গণতন্ত্রের বিপরীতে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করবে। চলমান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ অর্জন করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে। লেখক : ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট
×