ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছেন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়া  মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছেন

(১১ জানুয়ারির পর) একথা তিনি বোঝেন না যে, একাত্তর ছিল স্বাধীনতার জন্য লড়াই, মুক্তির যুদ্ধ। মাদাম তো নিরাপদ দূরে থেকে স্বচ্ছন্দে জীবন ভোগ করেছেন। তিনি তো বুঝবেন না মুক্তি কি? কেন এই মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছিল এবং কারা আমাদের শত্রু ছিল। যদি এই অনুধাবনের জ্ঞানসম্পন্ন রাজনীতি করতেন তিনি তাহলে কি জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে এতদিন নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে যেতেন? জামায়াত তো মহিলা নেতৃত্ব মানে না। তাহলে খালেদা জিয়াকে কেন নেতা মেনেছে? কি তাদের উদ্দেশ্য? কেন এতটা বছর একইসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত সখ্যতা অব্যাহত রয়েছে? কেনই বিএনপি জামায়াতের মাঝে মাঝে বিএনপিকে টপকে নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করে সভা-সমাবেশে ছাত্র শিবিরের স্থান দখল, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদের মুক্তির দাবিতে ফেস্টুন নিয়ে সভাস্থল সয়লাব করে দেয়।... বেগম সাহেবা বোঝেন না এরা কারা! এদের উদ্দেশ্য কী! বোঝেন। কিন্তু তাদের ‘তালাক’ দেয়ার মতন সাহস নেই। জামায়াত যে গাছেরও খাচ্ছে, তলারও কুড়োচ্ছে। তাকি তাঁরা বোঝেন না? শুধু কি তাই, লন্ডনে বসে অভিজাত পরিবেশে বসবাস, সভা-সমিতি, জীবনযাপন সব কিছুই করছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টও হয়েছে সে। কিন্তু পলাতক জীবন কাটাচ্ছে, যা বহুল আলোচিত, প্রচারিত, তা সত্ত্বেও ব্রিটিশরা তাকে আগলেই রেখেছে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাতের মামলায় ওয়ারেন্টও ইস্যু হয়েছে। কিন্তু তারপরও ব্রিটেন নিরুত্তাপ...তারেক রহমান রাজনীতিতে ইনভলব ছিল না। পড়াশোনাও করেনি। কিন্তু পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজবংশীয় দৃষ্টান্তে পুত্রকেই পরবর্তী দলনেতা, দলনেতাই নয়Ñ দেশের ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাহির করা হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা বক্তৃতাবাজিও করছে। অথচ লন্ডনে বসে সে ‘মামদোবাজি‘ করে চলেছে। সভা-সমাবেশে-সেমিনারে বক্তৃতা তো নয়, গলাবাজি করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ও জনসাধারণ্যে স্বীকৃত জাতির পিতাকে যা খুশি বলার মতন ঔদ্ধত্য-স্পর্ধা দেখাচ্ছে। ঢাকা থেকে রিজভী মার্কা নেতারা লন্ডনে ‘বাজার’ করতে যাচ্ছেন। কিনে আনছেন তারেকের পরামর্শ। বেচারা খোকা আটকে গেছেন লন্ডনেই, তার নাকি কঠিন রোগ দেখা দিয়েছে। ভাগ্যিস লন্ডন গিয়েছিলেন খোকা। রোগটা এতদিন ঢাকায় ধরা পড়েনি। অবশ্য খোকার সঙ্গে তারেকের তেমন হৃদ্যতা নেই। তবে খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়েছিলেন এর মধ্যেই। সেখানে আবার তারেক-কোকো দু’ভাই মায়ের স্নেহ পেয়েছেন। একত্রে কথা বলেছেন। দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদ বেশ বাক্যবাগীশ। ট্রেনিং তার ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল পথে। তিনি অবশ্য নয়াপল্টন অফিসটা দখলে রেখেছেন। মাঝে মধ্যেই ওখানে বসে বসেই সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন। তবু তারেক রহমানের মন জয় করতে পারছেন না। হায়রে বিধি, তুমিই বাম। মির্জা সাহেবতো ‘বাম’ই ছিলেন, এখন গিয়ে নকল জাতীয়তাবাদীদের দঙ্গলে ভিড়েছেন, তাও আবার সামরিক জেনারেলের অর্ধাঙ্গিনীর সঙ্গে। মা আর ছেলের ‘রাজনীতি’র কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এরা তিনজনই সরকারকে ধমকাচ্ছে, শাসাচ্ছে আর দেশের মানুষগুলোকে ‘বেকুব’ ভাবছে। ভাবছে, যা তারা বলছে, জনগণ তাই বোধহয় মেনে নিচ্ছে। একবারও ভাবছে না জনগণ যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির-আলবদর, আলশাম্্স সকলকে সঙ্গে নিয়ে তারা যে মুক্তিযুদ্ধেরই বিরোধিতা করছে তা তারা জ্ঞানপাপির মতন চেপে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলছে এবং তুলেছেন। যুদ্ধপরাধীদের স্থানীয় সহযোগী ঐ জামায়াতীদের মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। তদন্ত চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। তারপর মামলা গঠন করা হলে সাক্ষী-সাবুদ নেয়া হচ্ছে। বিচারক রায় দিচ্ছেন। কিন্তু খালেদা-ফখরুলরা গ্রহণ করতে পারছেন না। যে রায়ই হোক না কেন, জামায়াত অসার হরতাল ডাকবেই। বিএনপি তাতে সমর্থন দেবে ঘরে বসে বসেই। তবে ছেলে-ছোকরা কিংবা মস্তান-ক্যাডারদের মধ্যে কেউ না কেউ রাস্তায় হঠাৎ নেমে মিছিল তো বেশিক্ষণ করতে পারবে না, তো রাস্তায় পেট্রোল বা কেরোসিন ঢেলে তাতে দিয়াশলাইয়ের কাঠি ছেড়ে দেবে। যাত্রীসহ রিক্সা উল্টে দেবে, তারপর সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেবে না। আগুনে বোমা ছুড়বে। যাত্রীবাহী বাসে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করবে। পোড়াবে শিশু-বৃদ্ধকে। বেপরোয়া আগুন দেয়া যেন এক খেলা। মানুষ মরলে মরুক, তাতে কি? দলের নেতারা তো আছেই, ধরা পড়লে মামলা লড়বে। ওদের মামলার রায় হয়েছে, ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষ আজ এককাট্টা। এটা বিএনপি জেনেও জনগণের সদিচ্ছাকে উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য দরদে উতলে উঠছে। কারণ জামায়াতকে হাতছাড়া করা যাবে না। ক্ষমতায় যেতে হলে তাদের সমর্থন বিএনপির চাই চাই-ই। তাই তো জামায়াতের ডাকা যে কোন হরতালকে বিএনপি সমর্থন করবেই। বিএনপি নেতারা যখন বক্তৃতা করেন, তখন গালভরা বক্তৃতা করেন, চিৎকার করে বলেন, বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। মেনে নিলাম। তাহলে অপেক্ষাকৃত ছোট দল আওয়ামী লীগ অথবা ২০ দলের তুলনায় ১৪ দলের ক্ষমতাকে এত ভয় পান কেন? ‘অবৈধ সরকার’ ‘স্বৈরাচারী সরকার’ ‘তথাকথিত সরকার’ ইত্যাদি কত না শব্দের বিশেষণে আখ্যায়িত করেন; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনে যেতে সাহস পান না। জনগণের কোন দাবি, তাঁদের দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা একবারও চিন্তা করেন না। চিন্তা করেন কেবল কি করে ক্ষমতায় আসা যায়, কেমন করে নির্বাচন হবে। এটাই বিএনপির গণতন্ত্র! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার নানা পাঁয়তারা করেন খালেদা জিয়া। কারণ ওদের চটানো যাবে না, ওরা চটলে হরতালে, বিক্ষোভে, সমাবেশে পিকেটিং, লোকজমায়েত এবং সহিংসতা করার পার্টনার পাবেই বা কোথায়? তাই ‘মেরেছ কলসীর কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’Ñ এই নীতি নিয়েই বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কসরত করেই যাচ্ছে। এ জামায়াত যত কিছুই অপছন্দের ঘটনা, জামায়াতের গোয়ার্তুমি, সমাবেশে নিজামী-মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন হাতে উপস্থিত হওয়া, তাদের ছবিসহ বেলুন উড়িয়ে সমাবেশের সামনে বসা নিয়ে যতই মারধর করুক না কেন, জামায়াতকে কোন কারণেই ছাড়তে পারছে না। যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি সহ্য করতে আপত্তি নেই। মাঝে মধ্যে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রচ- ক্ষোভ, ক্রোধ এমনকি সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়, তাতে বিএনপি বেশ মার খেয়েও হজম করে যায়। তাই তো বর্তমান সরকারকে ফেলে দেয়ার কত পদ্ধতিই না আবিষ্কার করেছে বিএনপি। তাসের ঘরের মতন উড়িয়ে দিতে যে খালেদা জিয়া ভাড়া করে নিয়ে আসা মানুষগুলোকে চেঁচিয়ে বাহবা পান আর সমর্থকরা প্রচার করেন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের কথা, সবই যে তাসের ঘর সেটা বোঝার মতন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাদের আছে বলে মনে হয় না। টেনে এ সরকারকে নামাতে গিয়ে কেবলমাত্র বাকোয়াসের মধ্যেই আটকে আছে গত ছয়-ছয়টা বছর। যারা ছ’বছরে এতটুকুও নড়াতে পারেনি মহাজোটকে, তারা এখন আগের মতই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের বাতচিত করছে। সমস্বরে। কিন্তু কি দেখছি, ‘খালি কলসী বাজে বেশি’ বাংলার অনন্তকালের এই প্রচলিত বচনটি যে এ ক্ষেত্রে কতটা সত্যি তা বলে বোঝানো যাবে না। তাই তো দেখছি, ‘বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া, কিংবা ‘অসারের তর্জন-গর্জন সার’। অসার বলতে চাই না ‘ন্যুইসেন্স ভ্যালু’ কত নেই। মাঝে মধ্যেই ঝঞ্ঝাট বাধিয়ে মানুষকে যেমন বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে, তেমনি সরকারকেও। এখন তেমনি এক অভিনব সিচ্যুয়েশনের অবতারণা করেছেন। খালেদা জিয়া তো তাঁর জন্য নির্ধারিত অফিস ভবন একটা পোষেণ কারণ থাকেন গুলশানে। গুলশান থেকে সাধারণ সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট নয়াপল্টন অফিসে যান না। নিজস্বতা বজায় রাখতে গুলশানে আলাদা একটা দোতলা বাড়িতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের যে দফতর সাজিয়েছেন, তাতেই শনিবার থেকে (৩ জানুুয়ারি) তিনি থেকেই গেছেন। বলছেন তাঁর পারিষদরা যে, তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি তো রাজনৈতিক দলের নেত্রী, তবে কেন সেখান থেকে বেরুতে চেষ্টা করছেন না। শুধু কি তাই, শোনা যাচ্ছে, সেই যে শনিবার রাতে দোতলায় উঠেছেন, সেখানেই নাকি অবস্থান করছেন। নিচে নামছেন না। অজ্ঞ রাজনৈতিক দলের দু’একজন নেতা এসে দেখা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন দেখা করতে দেয়নি সরকার। কী চমৎকার রাজনৈতিক প্যাঁচ! মানুষকে ধোঁকা দেয়ার বাহাদুুরি কায়দা। কারণ এ অবস্থায় সরকারবিরোধীরা যা বলবেন, তাই তো লোকে বিশ্বাস করবেন। দেখা যাক, ‘মহামতি’ খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি কি করেন। ঘর থেকে বেরোন কিনা? তবে এটা সবাই বোঝেন, তিনি বেরুবার ভান করবেনÑ পুলিশ সামনে দাঁড়াবে। কথা একটু কাটাকুটি হবে, পুলিশের সঙ্গে কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি হবে। তারপর আটক। বিবৃতি। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখব আমরা। হাওয়াই বিবৃতি আসবে ‘টিভি, সংবাদপত্রে’ স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারের কী ভীষণ আচরণÑঅত্যাচার, ধরপাকড়।’ অথচ তারা যে জনগণের স্বাভাবিক জীবনে বেপরোয়া হামলা, নাশকতা, সহিংসতা সৃষ্টি করে দুর্বিষহ পরিবেশের সৃষ্টি করছে, তা বলতে গেলে সরকারকেই শতসহস্র মুখে ধোলাই করবে, তাতে কিছু আসে যায় না। দেশের জন্য নয়- এক খালেদা জিয়ার জন্য প্রশাসন, সরকার, পুলিশ-আর্মড পুলিশকে তো ব্যস্ত থাকতেই হচ্ছে, তার কোন বিচার নেই। এ কেমন বিধান? রাজনীতি যদি করতেই চান, তবে তার তো বিধিবিধান আছে, তাকে মানতে চেষ্টা করাটাই উচিত নয় কি? অথচ খালেদা জিয়া স্বেচ্ছা-অবরোধে আছেন তবু তাঁর সমর্থকরা রাস্তাঘাটে বাস, গাড়ি, সিএনজি পোড়ানোর সুযোগ নিতে ছাড়েনি। তাদের তিনি দোতলায় বসেও এসব বন্ধ করে সঠিক ধারায় রাজনীতির নির্দেশ দিচ্ছেন না। যেমন চলছে তেমনি চলুক, এতেই তাঁর যেন আনন্দ ‘নীরো’র মতন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বা যেতে চান দেশটাকে? দেশটা তো আমাদের সবার। আমরা জনগণ সবাই যে কষ্ট ভোগ করছি বর্তমান পরিস্থিতিতে, তা যে শুধুমাত্র আপনার জন্য, তা তো জেনেই আপনি দোতলায় বসে আছেন। আপনার বিলাসী জীবনের যা কিছু প্রয়োজন পিকআপ ভর্তি করে তা তো আপনার লোকজনই পৌঁছে দিয়েছে। খাবার ওরাই দিচ্ছে। প্রসাধনীর উপকরণের সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। দোতলায় শোবার আয়োজন ভালই তো। তা হলে শত শত লোকজনকে কেন শীতের রাতে-দিনে খোলা আকাশের তলায় জিম্মি করে রেখেছেন? এমন নিরাপদ আবাসনে কতদিন কাটাবেন? আপনিও আপনার সাঙ্গপাঙ্গরা যা বলছেন, তাতে ৫ জানুয়ারি ‘আন্দোলন’ শেষ করবেন না। চালাবেন নিশ্চয়ই। দেশ গোল্লায় যাক। জনগণ ভুগছে ভুগুক। জয়তু তারেক জিয়া! তাঁর পরামর্শেই চলতে চাইছেন তো। বুঝবেন! (সমাপ্ত)
×