ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ ঘোষণা ফ্রান্সের

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধ ঘোষণা ফ্রান্সের

ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভলজ তার দেশের রাজধানী প্যারিসে তিন দিনের রক্তক্ষয়ী হামলার পর মুসলিম চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এসব হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপে বসবাসরত জঙ্গীরা আরও সহিংসতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতাবস্থায় রাখা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের হামলাগুলোতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফ্রান্সজুড়ে প্রায় সাত লাখ লোক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। একটি ব্যঙ্গ পত্রিকার অফিস, পুলিশ অফিসার ও এক ইহুদী সুপার মার্কেটে পরিচালিত ঐসব হামলায় ১৭ ব্যক্তি নিহত হয়। খবর বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট ও হাফিংটন পোস্ট অনলাইনের। ম্যানুয়েল ভলজ শনিবার রাতে এক ভাষণে বলেন, আমরা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি, কিন্তু তা কোন ধর্মের বিরুদ্ধে, কোন সভ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই নয়, বরং তা আমাদের সর্বজনীন মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই। তিনি বলেন, এটি সন্ত্রাসবাদ ও ইসলামী চরমপন্থীর বিরুদ্ধে, ভ্রাতৃত্ববোধ, স্বাধীনতা ও সংহতি বিনষ্ট করতে চায় এমন সব কিছুর বিরুদ্ধে এক লড়াই। ভলজ প্যারিসের দক্ষিণে এভরিতে দেয়া ঐ ভাষণে হামলাগুলোর ফলে বিভাজিত হয়ে না যেতে ফরাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশবাসী নাগরিকরা যারা ধর্ম ও কৃষ্টির দিক দিয়ে মুসলিম তারাও সন্ত্রাসবাদের শিকারে পরিণত হয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিভ্রান্তিতে না পড়াই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। জিহাদীরা ঐ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। নীরব শোভাযাত্রাকালে কোন কোন প্রতিবাদী ‘আমি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে’, ‘ঐক্য’ বা ‘আমিই শার্লি’ তুলে ধরেন। ‘শার্লি’ বলতে ব্যঙ্গ সাময়িকী শার্লি হেবদোর প্রতিই ইঙ্গিত করা। বুধবার দু’ভাই শেরিফ ও সৈয়দ কুয়াশি ঐ পত্রিকার প্যারিস কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছিল। এ হামলায় আট সাংবাদিক ও দু’পুলিশ অফিসারসহ ১২ ব্যক্তি নিহত এবং ১১ জন আহত হন। আরেক বন্দুকধারী আমেদি কুলিবালি শুক্রবার প্যারিসের এক সুপার মার্কেটে কয়েকজনকে জিম্মি হিসেবে আটক করে। পরে চার জিম্মিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার প্যারিসের দক্ষিণাঞ্চলে এক মহিলা পুলিশকে হত্যার পেছনেও কুলিবালির হাত ছিল বলে মনে করা হয়। ঐ সুপার মার্কেটের বাইরে বড় সমাবেশে ম্যানুয়েল ভলজ বলেন, আজ আমরা সবাই শার্লি, আমরা সবাই পুলিশ অফিসার, আমরা সবাই ফ্রান্সের ইহুদী। পুলিশ তাদের হাতে নিহত ঐ তিন বন্দুকধারীর সহযোগীদের খুঁজে বের করতে তল্লাশি চালাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আমেদি কুলাবির গার্লফ্রেন্ড হায়াত বুমেদিনের (২৬) খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারে যে, তিনি তুরস্কে পালিয়ে যান এবং বুধবার প্যারিসে সংঘটিত প্রথম হামলার কয়েক দিন আগেই সম্ভবত সিরিয়ায় চলে যান। বুধবার পুলিশের সন্দেহ এক বা একাধিক হামলার ঘটনায় ঐ মহিলার হাত থাকতে পারে। সাপ্তাহিক পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। পত্রিকাটি ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন ছেপেছিল। সিরিয়ার সঙ্গে এ সংযোগ ইসলামপন্থী জঙ্গী দলগুলোর সঙ্গে ঘাতকদের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। বুমোদিনের পার্টনার আমেদি কুলিবালি শুক্রবার বলেন যে, তিনি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সহযোগিতায় তার হামলাগুলো চালিয়ে ছিলেন। নৃশংস বিদ্রোহী সংগঠন আইএস সিরিয়া ও ইরাকের বিরাট বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউরোপে জন্মগ্রহণকারী হাজার হাজার নাগরিক এক গৃহযুদ্ধে অংশ নিতে গোপনে সিরিয়ায় চলে গেছে বলে মনে করা হয়। এ গৃহযুদ্ধ থেকেই বিশ্বজুড়ে ইসলামপন্থী জঙ্গীবাদের উৎপত্তি ঘটেছে। শনিবার ফ্রান্সের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা ফ্রান্সে জন্ম নেয়া বুমোদিনকে খুঁজে বের করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেন। তিনি তাঁর পার্টনারের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে তাঁরা মনে করেন। এক উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাঁকে খুঁজে বের করতে আমাদের সাধ্যমতো সব কিছুই করব। তিনি বলেন, বুমোদিন সিরিয়াতে থাকলেও ফরাসী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ফাঁকি দিতে পারবেন না। আমরা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি এবং আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেব। ঐসব হামলা ও পরবর্তী ঘটনা ফরাসী ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও তাঁর সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ওলাঁদ ও তাঁর সরকার মুসলিমদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন একটি দেশে গভীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের সম্মুখীন হচ্ছে এবং একই সময় দেশের নিরাপত্তার প্রতি ইসলামী চরমপন্থীদের সৃষ্ট হুমকির মোকাবেলা করছে। আইএসের পাশে লড়াই করতে বহু সংখ্যক ফরাসী নাগরিক সিরিয়া ও ইরাক যাচ্ছে। ওলাঁদ মুসলিমদের শত্রু হিসেবে দেখার বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
×