ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ী বাঙালী সংঘর্ষ থামাতে কার্ফু

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ী বাঙালী সংঘর্ষ থামাতে কার্ফু

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি, ১১ জানুয়ারি ॥ রাঙ্গামাটিতে রবিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পাহাড়ি বাঙালী সংর্ঘষ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাত ৭টার সময় শহরে কার্ফু জারি করেছে। এই কার্ফু সোমবার ৮টা পর্যন্ত বলবত থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করে বলা হয়েছে। কার্ফু জারির পর শহরে কয়েক স্থানে মানুষ জটলা করে থাকতে দেখা গিয়েছে। তবে, শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে। রবিবার সন্ধ্যায় এই সংঘর্ষে প্রাথমিকভাবে উভয় দলের ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই রিপোর্ট লিখা (রাত ৮টা) পর্যন্ত রাঙ্গামাটি হাসপাতালে ৩ জন বাঙ্গালী ও ২জন পাহাড়ি ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে শহরের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান। এর আগের খবরে বলা হয় : রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দুই গ্রুপের মধ্যে আবারও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার সময় থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রশাসন এই সংর্ঘষ থামানোর জন্য তৎক্ষণাৎ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় পাহাড়ী বাঙালী বেশ কিছু লোক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উভয় সম্প্রদায়ের কয়জন লোক আহত হয়েছে তা পুলিশ জানাতে পারেনি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন বিকেলে বনরূপা বাজারে কিছু ভাসমান দোকানদার দোকান খুলতে গেলে কতিপয় পাহাড়ী যুবক বাধা দেয়। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। যা শহরের কয়েক স্থানে ছড়িয়ে পড়লে শহরে পাহাড়ী বাঙালীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়। এদের মধ্যে সমরেশ নামে এক ব্যক্তিকে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও শাসক দলের মধ্যে দফা দফায় সংঘর্ষ হয়। যার কারণে শনিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শহরের পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক শাসসুল আরেফিন রবিবার বিকেলে তাঁর সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেন। বৈঠকে রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার এমপি ও মহিলা সংসদ জেএফ আনোয়ার চিনুসহ শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভা চলাকালীন আবারও নতুন করে পাহাড়ী বাঙ্গালী সংঘর্ষের খবর আসায় উপস্থিত সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। শনিবারের ঘটনাটি শাসক দলের সঙ্গে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের হলেও। তা পরবর্তীতে পাহাড়ী বাঙালী রূপ নেয়ায় শহরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সেনা, বিজিবি ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। শহরবাসীকে শান্ত থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বারবার মাইকিং করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি সদর জোন থেকেও রাতে সকলকে শান্ত থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। প্রশাসনের শক্ত অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। হঠাৎ করে রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নতুন করে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ পাল্টা সংঘর্ষ হওয়ায় সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ডাকা হয়েছে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক। শনিবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। শনিবারের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ২০ ব্যক্তি আহত ও বেশ কিছু দোকান ভাংচুর হয়েছে। এই ঘটনার পরপর শহরে সেনা, বিজিবি ও পুলিশ এবং ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম শহরে টহল দেয়া শুরু করে। ফলে সংঘর্ষ থেমে যায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন সকাল থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ছাত্ররা মেডিকেল কলেজ স্থাপন না করার দাবিতে জেলা প্রশাসকের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখে। সকাল ৯ ঘটিকার সময় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের দাবিতে সরকার সমর্থক একটি দল মিছিল নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে যেতে গেলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সঙ্গে এদের সংঘর্ষ লেগে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে এই সংঘর্ষ বনরূপা চম্পক নগর ও ফরেস্ট কলোনি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় ১১ জন আহত হয়েছিল। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সঙ্গে কথা বললে তারা আইনশৃঙ্খল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে বলে জানান।
×