ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫ জন আটক ॥ ফরিদপুরে রূপালীর ভল্ট থেকে খোয়া যাওয়া টাকার বেশিরভাগই উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

৫ জন আটক ॥ ফরিদপুরে রূপালীর ভল্ট থেকে খোয়া যাওয়া টাকার  বেশিরভাগই  উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ১১ জানুয়ারি ॥ ফরিদপুর রূপালী ব্যাংকের প্রধান শাখার ভল্ট থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়া এক কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশিরভাগই উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের অফিস সহকারী আবুল কালামের শহরতলীর মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুরের ঘন শ্যামপুরের বাড়ি থেকে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আটককৃত আবুল কালাম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, চুরি করা টাকা তার বাড়ির উঠানে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। পরে রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ সুপার জামিল হাসানের নেতৃত্ব একটি টিম আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে উঠানের মাটি খুঁড়ে একটি প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করে। পুলিশ সুপার জামিল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, টাকা চুরির ঘটনার সঙ্গে শুধু অফিস সহকারী আবুল কালামই নয়, আরও লোকজন জড়িত রয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, রূপালী ব্যাংকের ভল্টে থাকা দুই কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা চুরি গিয়েছিল। জানা গেছে, প্রধান ফটকের সব তালা বন্ধ, বন্ধ কলাপসিবল গেটের তালাও। ঘরের মধ্যে শুয়েছিলেন এক আনসার সদস্য। এর মধ্যে ভল্ট থেকে উধাও হয়ে গেল প্রায় দেড় কোটি টাকা। রহস্যজনক ও অভিনব এ ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী মহল্লার মুজিব সড়কের আরজু সুপার মার্কেটের দোতলায় অবস্থিত রূপালী ব্যাংকের ফরিদপুর শাখায়। পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যাংকের এক অফিস সহকারী, একজন নৈশপ্রহরী ও তিনজন আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোতোয়ালি থানায় নিয়ে গেছে। এ খবর লেখার সময় তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে একটি সূত্র জানায়, আটককৃতরা হলো ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম, ফারুক, আনসার সদস্য রফিক, আশিক ও লুৎফর। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুই দিন শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকার পর রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ব্যাংকে হাজির হন ব্যবস্থাপক এজিএম খান শহীদুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। ১০টা থেকে লেনদেন শুরু হওয়ার কথা। ব্যবস্থাপক ব্যাংকের এক কোণায় দেয়ালের ভেতরে আবদ্ধ ভল্ট খুলতে যান। খান শহীদুল ইসলাম পুলিশকে জানিয়েছেন ভল্ট খুলতে গিয়ে তিনি দেখতে পান ভল্টের আলমারিটি খোলা শুধু দরজা ভেজানো ছিল। আলমারি খুলে ভল্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন সেটিও খোলা এবং তার ভেতরে কোন টাকা নেই। এদিকে দুই দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার সকালে ব্যাংকে বরাবরই গ্রাহকদের চাপ বেশি পড়ে। রবিবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু সকাল থেকে কোন লেনদেন করতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে গ্রাহকদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। খবর পেয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার জামিল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় বসাকসহ পদস্থ কর্মকর্তাগণ ব্যাংকে হাজির হন। পুলিশ ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব জব্দ করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাতে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংকের এক অফিস সহকারী, একজন নৈশপ্রহরী ও তিনজন আনসার সদস্যকে। রূপালী ব্যাংকের বক্তব্য ও তিন সদস্যেও তদন্ত কমিটি গঠন ॥ অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান, ফরিদপুর শহরের নিলটুলী মুজিব সড়কের রূপালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা থেকে চুরি হওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকাই উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। রবিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘটনার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের সহযোগিতায় পুরো টাকাই উদ্ধার করা হয়। এদিকে এ ঘটনায় রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক শফিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের ফরিদপুরের কর্পোরেট শাখা থেকে গত শনিবার ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা চুরি হয়। ওই শাখার অফিস সহকারী আবুল কালাম আজাদ ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরি করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। রবিবার সকালে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন চুরির ঘটনা শুনেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বিস্তারিত অবহিত করেন। ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু আসাদকে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পাঠান। এছাড়া তিনি ব্যাংকের ভেতরে বসে সর্বক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে মনিটরিং করেন। পাশাপাশি বিষয়টি তিনি ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ জামিল হাসানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে পরামর্শ করেন টাকা উদ্ধারের বিষয়ে। এম. ফরিদ উদ্দিন এবং পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অবশেষে অফিস সহকারী আবুল কালাম আজাদের বাড়ির উঠানের গর্ত থেকে ড্রামভর্তি ১ কোটি ২২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা তার নিজ এ্যাকাউন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়।
×