ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফোন কেলেঙ্কারি ও স্বাক্ষর জালিয়াতি যে কারণে করল বিএনপি

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

ফোন কেলেঙ্কারি ও স্বাক্ষর জালিয়াতি যে কারণে করল বিএনপি

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি যে কারণে ‘স্বাক্ষর জালিয়াতি ও ফোন কেলেঙ্কারির’ আশ্রয় নিয়েছে তার নেপথ্য কাহিনী উদঘাটন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। একদিকে অনির্দিষ্টকালব্যাপী অবরোধ অস্ত্র অকার্যকর হয়ে জনজীবন ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অপরদিকে সরকার চলে গেছে হার্ড লাইনে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা চলে গেছেন আত্মগোপনে। চোরাগুপ্তা হামলার জন্য দুর্বৃত্তায়নের আশ্রয় নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু স্থানে বোমাবাজি ও যানবাহনের আগুনে জনগণের মধ্যে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বিএনপি কার্যালয়ে নিজে অবরুদ্ধ থেকেও টানা অবরোধকে টেনে বেশিদিন এগিয়ে নিতে না পারার কারণে নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছিল না। নিরুপায় হয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্র সঙ্গে ফোনে বেগম খালেদা জিয়ার আলাপ না হওয়া সত্ত্বেও আলাপ হয়েছে বলে প্রচার করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেস সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিবৃতি দেয়ার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা প্রতিবেদনে বিএনপির স্বাক্ষর জালিয়াতি ও ফোন কেলেঙ্কারির নেপথ্যের ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে কাটাচ্ছেন স্বেচ্ছায়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে কালো দিবস বা গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে গুলশানের বিএনপির কার্যালয়ে আসেন ৩ জানুয়ারি। গুলশান কার্যালয়ে তিনি নিজেকে অবরুদ্ধ বললেও পুলিশী নিরাপত্তায় আছে বলে জানিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বেগম জিয়া যখন ইচ্ছে তখনই বাড়িতে চলে যেতে পারেন। তারপরও তিনি বাড়িতে যাচ্ছেন না কেন? গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী ও স্টাফ নিয়ে অবস্থান করছেন বেগম খালেদা জিয়া। গোয়েন্দাদের ভাষায়, যেন এটা এক মিনি পিকনিক চলছে প্রতিদিন। অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী ও স্টাফ নিয়ে অবস্থানকে কি অবরুদ্ধ বলা যায়? বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, বেগম জিয়া যদি এখনই গুলশানের বিএনপি কার্যালয় ছেড়ে গুলশানের নিজ বাসভবনে চলে যান তবে তার নেতা-কর্মীদের মনোবল আরও ভেঙ্গে যাবে এবং অবরোধ আন্দোলন মাঠে মারা যাবে। এ জন্যই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে চলেছেন স্বেচ্ছায়। স্বেচ্ছায় বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান করার কারণেও প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিক, বিদেশী রাজনীতিকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, যদিও বিদেশে বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিশ্ব এজতেমা উপলক্ষে অবরোধ কর্মসূচী চালু রাখায় লাখ লাখ মুসল্লির অসুবিধা বিবেচনা না করায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন বিএনপি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি মূলত ভারত বিরোধী দল। বিএনপির নেতারা এক সময়ে বলত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত হবে, ভারত এই দেশ নিয়ে যাবে, শঙ্খ ও উলুধ্বনি বাজবে ইত্যাদি বলে ভারতের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। এখন আবার সেই বিএনপিই দেখছে, কোনভাবেই ভারতকে পাশ কাটিয়ে বা তাদের রুষ্ট করে ক্ষমতায় আসা যাবে না। সেই জন্য ভারতের বিগত নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর তারা বিজেপির সঙ্গে সখ্য স্থাপনে তৎপর হওয়ার পর তাও ব্যর্থ হয়। বিএনপি এখন ভারতের সাহায্য সহানুভূতি না পেয়ে অনেকটা নিরুপায় হয়ে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্র সঙ্গে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়ার ফোনালাপ হয়েছে এবং বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন অমিত শাহ বলে প্রচার চালান। এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, অমিত শাহ্ ফোনালাপ করে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন। অথচ অমিত শাহ নিজেই ঢাকার বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেছেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁর কোন ফোনালাপ হয়নি। এটা ফেক নিউজ (ভুয়া খবর) ও রিউমার (গুজব)। তারপর আর মুখ রক্ষার জায়গা না পেয়ে লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে বিএনপি। বিএনপির একটি রাজনৈতিক দলের যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী দেশের কংগ্রেস সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি এবং ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্র ফোনালাপের মিথ্যাচারের কেলেঙ্কারি শুধুমাত্র অবরোধ আন্দোলনকে ব্যর্থতায় ঠেলে দিবে না, অদূর ভবিষ্যতে কলঙ্কের কালিমা লেপন করে দিয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
×