ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনি টেস্ট নাটকীয় ড্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

সিডনি টেস্ট নাটকীয় ড্র

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রোমাঞ্চ মানে কি কেবলই জয়-পরাজয়? ওয়ানডে-টি২০’র ক্ষেত্রে সত্য, দীর্ঘ পরিসরে নয়। ফল না দেখা ম্যাচও যে দারুণ রোমাঞ্চ ছড়াতে পারে, ক্রিকেটবিশ্ব অনেকবার তা দেখেছে টেস্টের সৌজন্যে। স্টিভেন স্মিথের সাহসী সিদ্ধান্তের সঙ্গে ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা, সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-ভারত চার ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্ট হুট করেই হয়ে উঠল আকর্ষণীয়! পঞ্চম দিন সকালে ব্যাটিং না করে আগের ২৫১/৬- তেই দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন স্বাগতিক অসি অধিনায়ক। ৩৪৯ রানের লক্ষ্যে নামা অতিথি ভারত ৭ উইকটে ২৫২ রান করলে নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহাকে ফেরানোর পর বাকি চার উইকেট তুলে নেয়ার জন্য শেষ ১৮.৫ ওভার পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা জিততে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। কিন্তু অজিঙ্কা রাহানে (৩৮*) ও ভুবনেশ্বর কুমার (২০*) মিলে ভারতকে রোমাঞ্চকর এক ড্র এনে দেন! ১১৭ ও ৭১ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা অধিনায়ক স্মিথ। ৪ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭৬৯ রান করে অবধারতি সিরিজসেরাও তিনি। সিডনিতে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটে ৫৭২ রানে ডিক্লেয়ারের বিপরীতে ৪৭৫-এ অলআউট হয় ভারত। নাটকীয় এ ড্রয়ের ফলে ২-০তে চার টেস্টের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি নিজেদের কাছেই রেখে দিল কুলীন অসিরা। এ্যাডিলেডের প্রথম ম্যাচে ৪৮, ব্রিসবেনে ৪ উইকেটে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। অমীমাংসিত থাকে মেলবোর্নের বক্সিং ডে টেস্ট। সিডনিতে চতুর্থ ইনিংসে প্রায় সাড়ে তিন শ’ রান করে জিততে হলে ইতিহাসই গড়তে হতো সফরকারীদের। অধিনায়ক কোহলি ও ওপেনার মুরলি বিজয় যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণ সেপথেই হাঁটছিল তরুণ ভারতীয়রা! তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২২.৪ ওভারে ৭৪ রান তুলে প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেন দু’জনে। চা বিরতির আগেও যখন অবিচ্ছিন্ন বিজয়-কোহলি শেষ সেশনে জয়ের জন্য দলের প্রয়োজন তখন ১৮৯ রান। সুরেশ রায়না-ঋদ্ধিমান সাহাসহ ব্যাট করার অপেক্ষায় অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভালভাবেই রেসে ছিল ভারত। কিন্তু বিজয় ব্যক্তিগত ৮০ রানে পেসার জশ হ্যাজলউডের রাইজিং ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ব্র্যাড হ্যাডিনের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে প্রথম বড় ধাক্কা খায় সফরকারী শিবির। এরপর অনেকটা পথ হারানো ব্যাটিং! ৪৬ রানে মিচেল স্টার্কের বলে সিøপে শেন ওয়াটসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন বড় ত্রাতা অধিনায়ক কোহলি। দলীয় সংগ্রহ ২০১-২০৮ এর মধ্যে আরও দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। রানের খাতাই খুলতে পারেননি রায়না-ঋদ্ধিমান। ব্যক্তিগত ১ রানে আশ্বিনও ফিরলে সিডনি টেস্ট পুরোপুরি হেলে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। কিন্তু শেষ অবধি ক্ল্যাসিকেল অজিঙ্কা রাহানের অপরাজিত ৩৮ ও ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা ভুবনেশ্বর কুমারের ২০ রান ‘জয়সম’ এক ড্র এনে দেয় ভারতকে। অধিনায়ক হিসেবে জীবনের প্রথম মিশনেই অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য মেলে ধরেন স্টিভেন স্মিথ। সাবেক গ্রেট স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে টপকে ভারতের বিপক্ষে এক সিরিজে সর্বাধিক রানের রেকর্ড গড়েন ২৫ বছর বয়সী নিউ সাউথ ওয়েলস প্রতিভা। মাইকেল ক্লার্কের ইনজুরি দ্বিতীয় টেস্টে হুট করেই অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি দলের নেতৃত্বে বসায় তরুণ এই ক্রিকেটারকে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে হন ম্যাচ ও সিরিজসেরা। চার বা তার কম টেস্টের সিরিজে সর্বাধিক ৭৬৯ রান সংগ্রহের নতুন রেকর্ডও গড়েন তিনি। কণ্ঠে পরিপক্ব সেনাপতির সুর, ‘খুব ভাল লাগছে। ফিলিপ হিউজেসের জন্য আমরা সিরিজটি জিততে চেয়েছিলাম। সতীর্থদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় সেটি সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্য আসন্ন বিশ্বকাপে ভাল খেলতে সাহায্য করবে।’ অন্যদিকে ২-০তে হারলেও তরুণ দল নিয়ে এবার দারুণ খেলেছে সফরকারী ভারত। প্রথম ও শেষ টেস্টে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোহলি। প্রায় একই সুর তার কণ্ঠেও। ‘আমাদের দলটি তরুণ। হয়ত সিরিজ হেরেছি, কিন্তু লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়া, সেটিতে সফল। এখন লক্ষ্য ত্রিশেীয় ওয়ানডে সিরিজে ভাল করা।’ ত্রিদেশীয় সিরিজের অপর দল ইংল্যান্ড। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রথম ম্যাচ ১৮ জানুয়ারি।
×