ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আহমদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরীর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অভিমত

জোট আমলেই প্রশাসনে রাজনীতিকরণ শুরু হয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

জোট আমলেই প্রশাসনে রাজনীতিকরণ শুরু হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত আমলে প্রশাসনে রাজনীতিকরণ শুরু হয় বলে মত দিয়েছেন সাবেক আমলাগণ। তাদের মতে, এর অন্যতম শিকার হন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আহমদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরী। চৌকস ও মেধাবী এই সিএসপি অফিসারের অপরাধ ছিল এর আগের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ১৯৭১ ব্যাচের সিএসপি অফিসার আহমদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরীর ‘কালের নিরন্তর যাত্রা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তাঁরা এমন মতামত দেন। বক্তারা বলেন, তাঁরা যখন প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তখন প্রশাসন ছিল দলীয় প্রভাবমুক্ত। তখন কোন রাজনৈতিক নেতা প্রভাব বিস্তার করার কথা ভাবতেন না। প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেতেন। এখন একজন জেলা প্রশাসককে অঙ্গ সংগঠনের পাতি কর্মীরাও ধমকায়। তাঁরা বলেন, সরকারের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসনকে একদিকে জনমুখী হওয়া দরকার। অন্যদিকে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রশাসন কি ‘স্পয়েল সিস্টেম’ এ চলবে নাকি যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে। সচিব নিয়োগ কি মেধার ভিত্তিতে হবে; নাকি তারা ‘হায়ার’ করে আনবেন। আমেরিকায় আছে একটা সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রশাসনে নিজেদের লোক নিয়ে আসে। তবে ব্রিটেন বা অন্য কোন পার্লামেন্টারি সরকার ব্যবস্থার দেশে তা নেই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোঃ আবু হেনা বলেন, মাহমুদুর রাজা চৌধুরী ছিলেন একজন ‘আউট স্ট্যান্ডিং’ প্রতিভাবান অফিসার। তাঁর লেখা বইটি একটি সুখপাঠ্য বই। এখানে আত্মকথনের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে দেশের মানুষ, সমাজ, প্রশাসনের অবক্ষয়। মাঠ প্রশাসনের আগে যে চিত্র ছিল, এখন তা নেই, আমলাতন্ত্রেও নেই। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনকে জনমুখী হওয়া দরকার। প্রশাসনে যে ধরনের অবক্ষয় শুরু হয়েছে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রশাসন কি ‘স্পয়েল সিস্টেম’ এ চলবে নাকি যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে। সচিব নিয়োগ প্রক্রিয়া কি মেধার ভিত্তিতে হবে, না তারা ‘হায়ার’ করে আনবেন। সিএসপি অফিসার হিসেবে মাহমুদুর রাজা চৌধুরীকে বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে হয়েছে। একজন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাঁকে অতিরিক্ত সচিব পদ থেকে বিদায় নিতে হয়। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব পালন করতাম প্রশাসনে তখন কোন রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না। এখন রাজনৈতিক প্রভাব তো আছে, একজন জেলা প্রশাসককে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ কর্মীরাও ধমকায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, এই গ্রন্থে তার বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিকথা এসেছে। তিনি একজন অসাধারণ কর্তকর্তা ছিলেন। দেশের প্রশাসনে এখন যে রাজনীতিকরণ শুরু হয়েছে, তার কারণেই মাহমুদ রাজা সর্বোচ্চ পদে যেতে পারেননি। তা নিয়ে তার কোন আক্ষেপ নেই। তবে, এটা তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। সেই সময় থেকে (বিএনপি-জামায়াত) প্রশাসনে রাজনীতিকরণ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রে যারা থাকি তারা মনে করি অনেক কিছু করেছি। আবার যদি বিশ্লেষণ করি মনে হয় অনেক কিছুই করতে পারিনি। তবে মাহমুদুর রাজার কর্মজীবন বিশ্লেষণ করলে দেখি তিনি অনেক কিছু করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে অনেক সময় কাজ করেছেন। এটাই তার পদোন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে উঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি পারিবারিক প্রবন্ধ। পরিবারকে কেন্দ্র করে। এটা কোন আত্মজীবনী নয়। তবে তার নিজের চোখে যা ধরা পড়েছে তা তুলে ধরেছেন। এই বইটি সমাজ নিরক্ষণ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, লেখক এখানে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কেন আমরা এত গর্ব করি। তবে এখন তার অনেক কিছুর স্খলন হয়েছে। তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে থেকে যেতেন বিশ্ববিদ্যালয় একজন গুণী শিক্ষক পেত। তবে তিনি প্রশাসনকেও অনেক কিছু দিয়েছেন। অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজের ছোটবেলার স্মৃতিকথার মধ্য দিয়ে পরিবারের শৃঙ্খলার কথা তুলে ধরেছেন। যেখানে মূল্যবোধের চর্চা ছিল। নগরজীবনে যা হারিয়ে গেছে। যা তরুণ প্রজন্মের জানা উচিত বলে তিনি মত দেন। লেখক তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই বইয়ের প্রচ্ছদটি এঁকেছিলেন সদ্য প্রয়াত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর ২/৩ দিন আগে এই কাজ শেষ করেন। সম্ভবত এটি তাঁর আঁকা শেষ প্রচ্ছদ। মাহমুদুর রাজা চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় দিয়েছেন প্রশাসন ও সরকারকে। এখন দেখছেন প্রশাসনের ভিন্নরূপ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে তা তিনি এই বইয়ে তুলে ধরেছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, তা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হতে পারে। তিনি বলেন, প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করার সময় ডায়েরিতে কিছু নোট রেখেছিলেন, যার সহায়তায় গত ১৬ মাসে তিনি এই বই লেখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইটির প্রকাশক পালক পাবলিশার্সের প্রকাশক ফোরকান আহমদ।
×