ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষুব্ধ খালেদা খোঁজ নিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

ক্ষুব্ধ খালেদা খোঁজ নিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে

শরীফুল ইসলাম ॥ অবরোধ কর্মসূচী সফল করতে মাঠে না থাকায় দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আপাতত কাউকে কিছু না বললেও রাজপথের আন্দোলনে শরিক না হয়ে এসব নেতারা কে, কোথায় কি করছেন সে ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন তিনি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে বলেছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা কিছু নেতার সঙ্গে আক্ষেপ করে বলেছেন, তিনি নিজে এ বয়সে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে শীতের দিনে এত কষ্ট শিকার করে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল নিলেও দলের অন্য সিনিয়র নেতারা মাঠে না নেমে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কেন নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন? এমনকি কেউ কেউ নিজের ফোনও বন্ধ রেখেছেন। আবার কেউ কেউ মাঝে মধ্যে ফোন করে নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে আন্দোলন সফল করার চেষ্টা করছেন বলে জানালেও পরে খোঁজ নিয়ে তাঁদের ওই অবস্থানে পাওয়া যাচ্ছে না। জানা যায়, অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়া তাঁর দলের সর্বস্তরের নেতাদের বলেছিলেন, এবার আর ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মতো গুলশানের বাসায় থাকবেন না তিনি। আর কোনভাবেই আন্দোলনে পিছু হটতে চান না তিনি। তাই দলের অন্য নেতাদেরও তিনি ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছিলন। আন্দোলন সফল করার কৌশল হিসেবে আগেভাগে বাসা ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নিলেও দলের অন্য সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়াকে অনুসরণ করেনি। আর সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামায় গত ৫ দিন অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও তেমন মাঠে নামেনি। এ কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের আন্দোলনের মতো এবারের আন্দোলন কর্মসূচীও বিফল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে বিএনপি হাইকমান্ড আশা করছে ১২ জানুয়ারি রাজধানীতে আওয়ামী লীগ রাজধানীতে সমাবেশ করলে বিএনপিও ওইদিন অথবা তারপর কোন একদিন সমাবেশ করতে চাইবে। এবং সমাবেশ করার অনুমতি পেলে দলের সব সিনিয়র নেতা সকল ভয়ভীতি উপক্রম করে রাজপথে নেমে আসবে এবং খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে তাঁরা। ৩ জানুয়ারি থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন দলের ভাইসচেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, প্রেস উইয়িং কর্মকর্তা সায়রুল কবির খান, সামসুদ্দিন দিদারসহ আরও ক’জন। এর বাইরে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে পলাতক থাকলেও প্রতিদিনই গুলশান এলাকায় গেরিলা স্টাইলে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় বক্তব্য মিডিয়ার কাছে তুলে ধরেন। এ ছাড়া মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, রেহানা আক্তার রানু, আশিফা আশরাফি পাপিয়া ও নীলুফার চৌধুরী মনিসহ ক’জন মহিলা দলের নেতা এবং সাংবাদিক পরিচয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়াসহ অন্যদের খোঁজখবর নিলেও দলের অন্য নেতাদের অধিকাংশই নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির মীর্জা আব্বাস সদস্য ড. আর এ গনি ধানম-ির বাসায় অবস্থান করলেও অসুস্থতার কারণে অবরোধ কর্মসূচীর খোঁজখবর রাখছেন না। দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অবরোধ চলাকালে মাঝে মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির কর্মসূচীতে যোগ দিলেও রাজপথের অবরোধ কর্মসূচী নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তবে তিনি গুলশানের বাসায়ই অবস্থান করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বনানী ডিওএইচএসের বাসায় অবস্থান করলেও অবরোধে মাঠে নামেন না। স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার এ্যালিফ্যান্ট রোডের বাসায় অবস্থান করলেও অবরোধ কর্মসূচী নিয়ে দলের কোন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের অতি নিকটে নিজ বাসায় অবস্থান করলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান অবরোধ কর্মসূচী সফলের ব্যাপারে সরাসরি কোন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। তবে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অবরোধ কর্মসূচী পালনে মাঠেতো নামছেনই না। বরং পুলিশের হাতে গ্রেফতার এড়াতে শাহজাহানপুরের বাসা ছেড়ে অজ্ঞাতস্থানে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন। দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও অবরোধ চলাকালে বাসায় অবস্থান করছেন না। এমনকি ফোনও রিসিভ করছেন না তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দলের পক্ষে সরব বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ মহাখালী ডিওএইচএসের বাসায় অবস্থান করলেও অবরোধ কর্মসূচী পালন করতে মাঠে নামছেন না। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সুপ্রিমকোর্টে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির ব্যানারে অবরোধের পক্ষে কর্মসূচীতে অংশ নিলেও রাজপথে নামছেন না। তবে তিনি অবরোধ চলাকালে ইস্কাটনের বাসাতেই অবস্থান করছেন। আর স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার অবরোধ কর্মসূচীতে মাঠে নামা দূরে থাক জরুরী প্রয়োজন না হলে উত্তরার বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। অবশ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন কারাগারে রয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং দুদকের মামলায় অভিযুক্ত ড. খন্দকার মোশারররফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে অবস্থান করছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বনানীর বাসায় অবস্থান করলেও অবরোধ কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন না। অন্য প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে মোর্শেদ খান ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী গুলশানের বাসায় অবস্থান করলেও অবরোধ কর্মসূচী থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। অপর ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ধানম-ির বাসা এবং চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বসুন্ধরার বাসায় অবস্থান করলেও অবরোধ কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন না। দলের আরেক প্রভাবশালী ভাইসচেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। দলের যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণার আগে থেকেই উধাও হয়ে গেছেন। তাঁরা এখন কোথায় আছেন কেউ বলতে পারছেন না। মহিলা দল ছাড়া বিএনপির অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও এখন পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, জনকণ্ঠকে বলেন, অবরোধ কর্মসূচীতে সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামলেও যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পুলিশ যেভাবে গ্রেফতার করছে তাতে কিভাবে মাঠে নামবে সিনিয়র নেতারা। আর দলের কোন নেতা যদি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করেন সে ব্যাপারে চেয়ারপার্সন ব্যবস্থা নিতেই পারেন।
×