ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দূরপাল্লার বাস, ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও লরি চলছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

দূরপাল্লার বাস, ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও লরি চলছে

আজাদ সুলায়মান ॥ অবরোধকারীদের সব ধরনের নাশকতার হুমকি উপেক্ষা করেই রাজধানী থেকে দেশব্যাপী গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি শনিবার রাজধানী থেকে প্রায় সব রুটে দূরপাল্লার বাস চালানোর উদ্যোগ নেয়। এতে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। মহাখালী, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়িয়া ও গাবতলী টার্মিনাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, এজতেমা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস মিনিবাসে টঙ্গী আসেন। সাধারণ যাত্রীরাও এ সব দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে। যাত্রী ছাড়াও চলতে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও গার্মেন্টস লরি। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলছেন, কারোর রক্তচক্ষুর ভয়ে মালিকরা ঘরে বসে থাকবে না। যারা অবরোধ ডাকে তাদের মালিকানাধীন ব্যাংক-বীমা সবই খোলা থাকে। তাহলে পরিবহন মালিকরা শুধু বসে থাকবে কেন ? গাড়ি না চালিয়ে তো বিকল্প নেই। গাড়ি গ্যারেজে থাকলেও আগুন দেয়, টার্মিনালে থাকলেও ভাংচুর করে, তাহলে আর বসে লাভ কি? চালানোই শ্রেয়। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্তত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। তাই মালিকরা গাড়ি চালানোর পক্ষেই। তিনি বলেন, সরকারী ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় শনিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। অবশ্য উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বাস চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে এসব জেলায়ও স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলবে। শনিবার সকালে মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় যাত্রীর ভিড়। এ টার্মিনাল থেকে বেশিরভাগ বাস চলে, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ গাজীপুর, ভৈরব, নরসিংদী, সিলেট, ফেনী ও চট্টগ্রামে। প্রতিটি কাউন্টারে ছিল টিকেটের লাইন। যাত্রীরা কিছুটা আতঙ্কে থাকলেও তাদের আশ্বস্ত করা হয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা বলে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ নিজে সকাল থেকে অবস্থান করেন মহাখালীতে। সবার আগে তার মালিকানাধীন এনা পরিবহনের বিলাসবহুল গাড়ি নামানো হয় রাজপথে। পাঠানো হয় বগুড়া, সিলেট ও ময়মনসিংহে। এ সময় তিনি অন্যান্য কোম্পানির মালিককেও গাড়ি রাস্তায় বের করার আহ্বান জানান। এতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস চলাচল বাড়তে থাকে। দুপুরে অনন্যা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুহিন বলেন, আগের দু’দিনের তুলনায় বাস চলাচল বেড়েছে। টার্মিনালে যাত্রী আসলেই গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে প্রায় ১৫টি বাস, ফিরেও এসেছে সমসংখ্যক। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে চলাচলকারী এসব বাস চলে মোটামুটি নির্বিঘেœ। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রাস্তায় টহল পুলিশের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। পুলিশ জানিয়েছে, মহাখালী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যস্ত রয়েছে যান চলাচলে। তবে শনিবার কয়েকটি জেলায় হরতালের কারণে ফরিদপুর ও বগুড়ায় বাস চলাচল কম ছিল। এ কারণে গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ওপারের গাড়ি চলাচল ছিল কিছুটা কম। সায়েদাবাদ থেকেও পূর্বাঞ্চলের সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস চলছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোন বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে রাতে বাস চলাচল বন্ধ রাখার পক্ষে ছিল অধিকাংশ মালিক। এদিকে বিএনপির চলমান অবরোধেও রাজধানীতে প্রতিদিন গাড়ি চলাচল রয়েছে স্বাভাবিক। বিক্ষিপ্ত হামলার পরও বাস, মিনিবাস ও প্রাইভেট গাড়ি চলছে স্বাভাবিক গতিতে। এমনকি নগরীতে দেখা দিচ্ছে যানজটের মতো চিত্রও। এতে হতাশ বিএনপি রাজধানীর বাইরের জেলাগুলো থেকে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আঘাত হানার কৌশল নেয়। এ লক্ষ্যে রেললাইন উপড়ে ফেলা, পণ্যবাহী ট্রাক ও বাসে আগুন দেয়ার মতো ভয়াবহ নাশকতায় মেতে ওঠে। জানা যায়, রাজধানীর মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারও বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির নেতৃব্ন্দৃ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে যে কোন মূল্যে দূরপাল্লার যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালুর নির্দেশ দেন। বৈঠকে তিনি দেশব্যাপী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতুল্লাহ জানান, যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যানবাহনের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের নিশ্চিয়তা দিয়েছেন সেখানে দূরপাল্লার বাস না চালানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং দেশের বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকে ফোন করে দলের নেতাকর্মীকে মাঠে নেমে ভাংচুর ও নাশকতার নির্দেশ দিচ্ছেন। তারপরও তাতে সাড়া মিলছে না। তার আহ্বানে কোন সাড়া মিলছে না। এমনকি বিএনপি সমর্থিত পরিবহন মালিক- শ্রমিকরাও এহেন নাশকতার ঘোর বিরোধী। কারণ, পরিবহন মালিক সমিতিতে বিএনপিসহ সব দলের সমর্থক রয়েছে। তারা পরিবহন ব্যবসায়ী। তারা যে কোন মূল্যে গাড়ি চালানোর পক্ষপাতি। গাড়ি বসে থাকলেই মালিক-শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাংকের লোন নিয়ে কেনা এসব গাড়ি; সুদ বাড়ে অস্বাভাবিক হারে। কাজেই এখন সব মালিকই গাড়ি চালানোর পক্ষপাতি। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো কর্মসূচী দিয়ে আর যানবাহন থামানো যাবে না। মানুষের প্রয়োজনেই গাড়ি চলছে, চলবে। এ অবরোধ আর দু’একদিনের মধ্যেই ভেস্তে যাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণায় যানবাহন মালিকরা স্বস্তি পেয়ে রাস্তায় গাড়ি নামিয়েছেন। তবে সব জায়গায় নিরাপত্তা মিলছে না। পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ডিআইজি মামুন বিষয়টি দেখভাল করছেন। যেখানেই সমস্যা হচ্ছে সেখানেই তাৎক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। তিনি জানান, দেশের সব জেলা পুলিশ সুপারের কাছে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাস মালিকদের কাছে পুলিশ সুপারদের ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। যেখানে সমস্যা হবে, পুলিশ সুপার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। অপর একটি সূত্র জানায়, যদি কোন পুলিশ সুপার এ দায়িত্বে অবহেলা করে তার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত শুক্রবার বিকেলে বাস মালিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জরুরী বৈঠক করে সারাদেশে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশনা দেন।
×