ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর সিদ্ধান্ত আসছে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

কঠোর সিদ্ধান্ত আসছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নাশকতা দমনে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। জনসমর্থনহীন শুধুমাত্র সন্ত্রাসনির্ভর বিরোধীপক্ষের আন্দোলন ঠেকাতে এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় রাজপথে অগ্নিসংযোগকারী, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারী কিংবা নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের প্রয়োজনে দেখামাত্র গুলি করার মতো নির্দেশও আসতে পারে। এমনকি আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গীবাদী তৎপরতা অব্যাহত রাখলে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি শীঘ্রই দরকার হলে খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করবে সরকার। একইসঙ্গে সারাদেশেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের তাৎক্ষণিক কঠিন বিচারের কথাও ভাবছে সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো থেকে সরকারের এমন কঠোর মনোভাবের কথা জানা গেছে। দশম জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় বিএনপির ৫ জানুয়ারির সমাবেশ করতে না দেয়া, সরকার উৎখাতের গোপন ষড়যন্ত্র শক্তহাতে মোকাবেলা, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে না দেয়া এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতাদের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযানে ইতোমধ্যে সরকারের কঠোর মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫টি দিন দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচীতে রাজপথে দলের নেতাকর্মীদের দেখা না মিললেও চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতামূলক কর্মকা- সরকারের হাইকমান্ডকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ইতোমধ্যে গণভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় তাঁর আরও কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সূত্র জানায়, অবরোধের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতাকে জঙ্গীবাদী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে যত বড়ই নেতা হোন না কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। একইসঙ্গে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নাশকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দেখামাত্র যে কোন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর মনোভাবের কথা ইতোমধ্যে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, জনসমর্থন নিয়ে নয়, শুধুমাত্র সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী স্টাইলে নাশকতা চালিয়ে দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিয়ে নিজেদের নেতাকর্মীকেও পাশে না পেয়ে এখন স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের ঘাতকদের মদদদাতা জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকার অনেক সহ্য করেছে, কিন্তু আর নয়। আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই আর ছাড় দেয়া হবে না। কঠোরহস্তে এসব সন্ত্রাসীদের দমন করতে প্রয়োজনে যেকোন পদক্ষেপ নিতেও সরকার পিছু পা হবে না। কারণ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকার। তাই রাজধানীসহ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা যা প্রয়োজন তার সবটুকুই প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হবে। সরকার ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনে সরকারবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশাঁ আগে থেকেই গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারায় সরকার বড় ধরনের সঙ্কটের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনায় ছিল ৫ জানুয়ারি সমাবেশের নামে জাতীয় প্রেসক্লাব কিংবা পল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় গড়া ‘জনতার মঞ্চে’র আদলে আরেকটি মঞ্চ সৃষ্টি করবে। আর পুরো এই ষড়যন্ত্রের ছক এঁকেছিলেন লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। সূত্র জানায়, দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে দীর্ঘসময় অবস্থান নিয়ে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা থেকেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলেন এবং গোপনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু হেফাজতী কায়দায় জনসভা এবং রাজপথে দীর্ঘসময় অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের কাছে আগেই খবর ছিল। আর সেই গোপন খবর থেকেই ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ এবং খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয় থেকে পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। আর জাতীয় প্রেসক্লাবে গোপনে অবস্থান নিয়েও কোন নেতাকর্মীকে পাশে না পাওয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শেষ পর্যন্ত অনেকটা অসহায়ের মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা দিতে বাধ্য হতে হয়। সরকারের সূত্র মতে, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপির গোপন ষড়যন্ত্রে আরও বেশকিছু পরিকল্পনা ছিল বলেও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের লেবাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজপথে টানা অবস্থান নিতে পারলে জামায়াতে ইসলামী সহায়তায় দেশব্যাপী নাশকতা এবং কিছু উগ্র ডানপন্থী সংগঠনের তৎপরতায় সরকারকে অস্থিতিশীল করার চিন্তা ছিল। পাশাপাশি কিছু পেশাজীবী সংগঠন এবং সরকারের মধ্যে থাকা বিএনপির সমর্থকদের দিয়ে ধর্মঘট ডাকা হতো। এক পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও রাজপথে বের করে আনারও পরিকল্পনা ছিল। সূত্রটি জানায়, এসব পরিকল্পনা থেকেই বিএনপির উগ্রপন্থী অংশটি নেতা-কর্মীদের ওইদিন লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জনসভায় আসতে বলা হয়েছিল। রাজপথে টানা অবস্থান নিয়ে সশস্ত্র মিছিল এবং হেফাজতী কায়দায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা বা দখলের পরিকল্পনাও ছিল বিএনপির। একইদিন সরকারী দল আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব থাকায় ৫ জানুয়ারি সরকারী দলের সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে লাশের ওপর দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিন্তা-ভাবনাও ছিল দলের। জনগণের আস্থা অর্জন নয়, সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত জোট। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের এমন গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবেই খালেদা জিয়া নির্ধারিত কর্মসূচীর দুইদিন আগে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। তার আগে গুলশান ও নয়াপল্টনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এনে রাখা হয়। যে কারণে তাঁকে বাসভবনে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান। সেই থেকে শনিবার পর্যন্ত গুলশানের কার্যালয়ে স্বেচ্ছা বন্দী হয়েই রয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির আগাম পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে খবর থাকায় দলটিকে জনসভার অনুমতি দেয়া বিপজ্জনক ছিল বলেই সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রটি মনে করেন। এদিকে, বিএনপির ডাকা গত ৫ দিনের অবরোধ কর্মসূচী পর্যালোচনা করে সরকারের সামনে একটি পরিষ্কার চিত্রও উঠে এসেছে। অবরোধ কর্মসূচী ডেকেই বিএনপি-জামায়াতের সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতারা চলে গেছেন আত্মগোপনে। খালেদা জিয়া স্বয়ং রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানালেও একজন নেতাও রাজপথে নামার হতাশা থেকেই দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে শুধুমাত্র মানুষের মনে ভয়-ভীতি ছড়িয়ে দিতে জোটের সব ক্যাডার, সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় পুরো দেশেই জীবন-যাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও সড়ক-মহাসড়কে যাতে যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজি করে মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। সূত্র জানায়, এসব পর্যালোচনা থেকেই সরকার আরও হার্ডলাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজশাহীতে ২০১৩ সালের মতো অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যার প্রচেষ্টায় ক্ষুব্ধ করে তুলেছে পুলিশ প্রশাসনকেও। গুলি করার নির্দেশ না থাকায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা প্রকাশ্য নাশকতা করে চলে যেতে দেখলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছুই করতে পারছে না। জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অসহায়ত্বের কথাও সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে কিছুদিনের জন্য গ্রেফতার করা হলে সার্বিক পরিস্থিতি দ্রুতই সরকারের অনুকূলে আসবে বলেও মতামত দেন তারা। তাদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হলে দেশের কোথাও বিএনপি-জামায়াতের নামধারী সন্ত্রাসী-জঙ্গীরা নাশকতা চালানোর সাহস দেখাতে পারবে না। আর যেহেতু বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নির্ভর এই আন্দোলনে দেশের জনগণের ন্যূনতম সমর্থন নেই, তাই গুলি করার নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সন্ত্রাসী ক্যাডারা গর্তে লুকিয়ে যাবে। এতে দ্রুতই দেশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে এমন বাস্তব অবস্থা থেকেই আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ প্রদানের কথা ভাবছে সরকারের হাইকমান্ড। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আন্দোলনের নামে ‘চোরাগোপ্তা’ হামলা বন্ধ না করলে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে জনগণই তাদের প্রতিহত করবে। যারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নাশকতা চালায় তারা কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী হতে পারে না। এরা সবাই সন্ত্রাসী। আর সন্ত্রাসীদের দমনে সরকার যত কঠোর হতে হয়, তা হবে।
×