ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পখাতে নতুন ৮৯ হাজার কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

শিল্পখাতে নতুন ৮৯ হাজার কর্মসংস্থান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে ভাল বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলা করে দেশের শিল্পখাতকে কাক্সিক্ষত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ৩২ শতাংশে এবং শিল্প শ্রম শক্তির পরিমাণ ২০ শতাংশে উন্নতি হয়েছে। ২০১৪ সালে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তা দৃশ্যমান উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান এ বছরও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। শনিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে ‘বর্তমান সরকারের এক বছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অর্জন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সংবিধান সমুন্নত রাখতে এ নির্বাচন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, গত বছরের শুরুতেও রাজনৈতিক সমস্যা ছিল। সে সময় রাজনৈতিক অবস্থা অনেক অস্থিতিশীল ছিল। সে তুলনায় এ বছর রাজনৈতিক অবস্থা বেশ স্থিতিশীল। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তা দৃশ্যমান। এ বছরও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এক বছরে শিল্পমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও অর্জন তুলে ধরে বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেও শিল্পখাত কাক্সিক্ষত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ৩২ শতাংশে এবং শিল্প শ্রম শক্তির পরিমাণ ২০ শতাংশে উন্নতি হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে শিল্পনীতি ২০১৫ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৪ সালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে (বিসিক) ৮৯ হাজার ৩৭৫ জনের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। বছরটিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ১৬ হাজার ৭৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে যে বিনিয়োগ হয়েছে তার ২ হাজার ৮১২ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব তহবিল থেকে। বাকি টাকার মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ সংশ্লিষ্ট ইক্যুইটি এবং ৯ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ। এ বিনিয়োগের ফলে শুধু বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ২৩ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিসিকের ৭৪টি শিল্পনগরীতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রায় ১৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ বিনিয়োগের ফলে ২০১৪ সালে কারখানাগুলোতে প্রায় ৪২ হাজার ৫০৯ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে রফতানি হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী। যা মোট রফতানি আয়ের ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মন্ত্রী জানান, সরকার দায়িত্ব নিয়ে ২০১৪ সালে ইরি-বোরোর পিক সিজন সুষ্ঠুভাবে সার ব্যবস্থাপনা করেছে। সার পরিবহন, বিপণন ও বিতরণে দেশের কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। কৃষকদের সুলভ মূল্যে সার দিতে ইউরিয়া সারের মূল্য ২০ টাকা থেকে কমিয়ে প্রতি কেজি ১৬ টাকা করা হয়েছে। ডিএপি সারের মূল্য ২৭ টাকা থেকে ২৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে দেশে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমু বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেনি এ ধরনের ৫৭টি প্লট বাতিল করা হয়েছে। বাকি প্লটগুলোও চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। বাতিল করা প্লাটগুলোর মধ্যে ২৭টি প্লট ২০ জন নতুন উদ্যোক্তাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিল্পমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বন্ধ কারখানা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিগগির চট্টগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স (সিসিসি) পুনরায় চালু করা হবে। খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলস্ এবং খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস্ পুনরায় চালু করতে কারখানা দু’টি পরিদর্শন করেছি। সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করায় মিল দু’টি স্থানীয় কাঁচামাল থেকে চালানো সম্ভব না। তাই নতুন প্রযুক্তিতে এগুলো পুনরায় চালুর ব্যাপারে বিদেশী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়া ঢাকা লেদার কোম্পানি লিমিটেড পুনরায় চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্চে। তিনি জানান, রাজধানী থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিইটিপি ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সকল কাজ শেষ করা হয়েছে। সিইটিপির ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে বাকি ৪০ শতাংশ চলতি বছরের মার্চের মধ্যে শেষ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমুর হোসেন আমু ২০১৪ সালের শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও অর্জন তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণ, চিনিশিল্প লাভজনক করার উদ্যোগ, আখের দাম বাড়ানো, চিনিকলে বিদ্যুত উৎপাদন, ‘র’ সুগার থেকে রিফাইন্ড সুগার উৎপাদন, চিনিকলে প্রেসমাড ও ডিস্টিলারি স্পেন্ট ওয়াশ থেকে বায়ো-ফার্টিলাইজার বা জেবসার উৎপাদন, রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন, শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সংবাদপত্রকে শিল্প ঘোষণা, ৫৪ শিল্প উদ্যোক্তাকে সিআইপি (শিল্প) কার্ড প্রদান, জাতীয় মেধাসম্পদ নীতি তৈরির উদ্যোগ, স্বয়ংক্রিয় ট্রেডমার্ক নিবন্ধন সেবা চালু, বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টাইম চালু, ভ্রাম্যমাণ ক্যালিব্রেশন সেবা, বেকারদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ৪ হাজার ৬১টি বয়লার পরিদর্শন ও চালনার অনুমতি, ৩১৭টি নতুন বয়লার রেজিস্ট্রেশন দেয়া, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) থেকে ৮২৪ জনকে প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন, কন্টেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ফরহাদ উদ্দিন, বেগম পরাগ, সুষেণ চন্দ্র দাস এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন সব কর্পোরেশন/সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রধানরা।
×