ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতির আগুনে পুড়ছে পোশাক শিল্প

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

রাজনীতির আগুনে পুড়ছে পোশাক শিল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধের পাঁচ দিনে পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এমনটাই জানা যায় পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র কাছ থেকে। বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম মনে করেন, অবরোধে একদিকে যেমন রফতানির পণ্য শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিক তেমনি কমে যাচ্ছে উৎপাদনের মাত্রা। তিনি বলেন, রাজনীতির আগুনে পুড়ছে দেশের পোশাক শিল্প। রফতানির পণ্য তৈরির পরও আমরা পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক সময় শিপমেন্ট করতে পারছি না। আবার যাও শিপমেন্ট করা হচ্ছে তাতেও খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। তাছাড়া উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রেও ব্যাঘাত ঘটছে। এতে দিনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা থেকে ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে পোশাক শিল্পে। এই অবরোধ বন্ধ না হলে পোশাক শিল্প বড় ধরনের ধাক্কার মুখোমুখি হবে। শুধু পোশাক শিল্পই নয়, অন্যান্য রফতানিমুখী শিল্পও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতি (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য রফতানিমুখী শিল্পগুলো যখন আন্তর্জাতিক বাজারে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা বহির্বিশ্বের সামনে উদ্যোক্তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি করবে। এর ফলে আমরা পুনরায় ইমেজ সঙ্কটে পড়ব। যার ভয়াবহ প্রভাব ৬ মাস পরে মারাত্মক আকার ধারণ করবে। বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা তো ব্যবসা করতে পারবেন না। নারায়ণগঞ্জে কয়েকদিন আগেই ট্রাকে আগুন দেয়া হয়েছে। উৎপাদনকারীরা ট্রাকে করে পণ্য বন্দরের উদ্দেশে নিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ও বর্তমানের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে না দেয়া ও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচীর ডাক দেয় ২০ দলীয় জোট। শনিবার এ কর্মসূচীর ৫ম দিন অতিবাহিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ বাণিজ্য সংগঠনগুলো এই অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে এক বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব দলগুলোকে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানায় তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সেই সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, জানুয়ারি মাসের প্রথম ৮ দিনের মধ্যে ২ দিন অঘোষিত হরতাল ও ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ কর্মসূচী চলায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। জাতীয় অর্থনীতি বিশেষ করে পোশাকশিল্পের স্বার্থে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে হরতাল, অবরোধ পরিহার করে বিকল্পপন্থা খুঁজে বের করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় তারা। বিবৃতিতে বিজিএমইএ জানায়, তৈরি পোশাকশিল্প এখন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। রানা প্লাজা ধসের পর কারখানাগুলো কর্মপরিবেশের উন্নয়নে সংস্কার কাজ করে যাচ্ছে। এতে একটি ইতিবাচক বার্তা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের ওপর ক্রেতাদের আস্থা পুনরায় বাড়ছে এবং কারখানাগুলোও বিগত দিনগুলোর তুলনায় বেশি বেশি রফতানি অর্ডার পাওয়া শুরু করেছে।
×