ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলতি বছরই নির্মাণ কাজ শুরু

অবশেষে সচিবালয় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে শেরেবাংলানগরে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

অবশেষে সচিবালয় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে শেরেবাংলানগরে

তপন বিশ্বাস ॥ অবশেষে শেরেবাংলানগরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সচিবালয়। বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য প্রকৌশলী লুই কানের পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা হবে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুর এই কার্যালয়। শেরেবাংলানগরে মেলার মাঠে সচিবালয়কে সরিয়ে নিতে চলতি বছরই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। বর্তমান সচিবালয়ে হবে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গর্ণপূতমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সচিবালয় দ্রুত সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কাজ শুরু করলে তা সম্পন্ন হতে প্রায় তিন বছর লাগবে। শেরেবাংলানগরে সচিবালয় সরিয়ে নেয়া হলে জাতীয় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাসভবন এবং সচিবালয় কাছাকাছি হবে। এতে রাস্তার ওপর চাপ যেমন কিছুটা কমবে। তেমনি সকল মন্ত্রণালয় পাশাপাশি হওয়ায় কর্মকর্তারা বেশি সময় কাজ করার সুযোগ পাবেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা কমিশন বা শেরেবাংলানগরে অবস্থিত অন্যান্য সচিবালয়/কার্যালয় থেকে সচিবালয়ে কোন বৈঠকে যোগদান করে অফিসে ফিরে আর কাজ করার সুযোগ থাকে না। একই সঙ্গে সচিবালয়কে সরিয়ে নেয়া হলে মতিঝিল, পল্টন এলাকাসহ পুরান ঢাকার রাস্তাঘাটের ওপর চাপ কমবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লুই কানের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সচিবালয়কে শেরেবাংলানগরে মেলার মাঠে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আগামী আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হবে। সূত্র জানায়, নতুন আধুনিক সচিবালয় গড়ে তুলতে শেরেবাংলানগরের এই মাঠে বিশাল আকৃতির চারটি কর্পোরেট ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি কর্পোরেট ভবনে থাকবে সেন্ট্রাল এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রক)। থাকবে বৃহৎ আকৃতির নিজস্ব অডিটরিয়াম। চারটি কর্পোরেট ভবনের জন্য থাকবে আন্তর্জাতিক মানের সেন্ট্রাল লাইব্রেরী। প্রতিটি ভবনে থাকবে সোলার এনার্জি অপশন। ভবনগুলোতে রুমের সংখ্যা থাকবে কম। কাঁচ বা পার্টেক্সের তৈরি বেড়া দিয়ে প্রয়োজনমতো কক্ষ তৈরি করা হবে কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক। প্রতিটি ভবনের সঙ্গে থাকবে সংযোগ বারান্দা। এছাড়া ভবনগুলোতে থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা। প্রতিটি ভবনের বেজমেন্টে রাখা হবে গাড়ি। নির্ধারিতসংখ্যক গাড়ির বেশি কোন গাড়ি সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। ভবনগুলোর বাইরে আধুনিক এই সচিবালয়ের মধ্যে কোন গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ভবনগুলোর মধ্যস্থলে থাকবে সবুজ গাছপালা দিয়ে সাজানো। চারটি ভবন ঘিরে থাকবে সুউচ্চ প্রাচীর। আধুনিক এই সচিবালয়ের সঙ্গে টানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ থাকবে গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। টানেলগুলোর মধ্যে একটি জংশনের মতো সংযোগ স্থল থাকবে। এতে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবন বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা গণভবনে যেতে পারবেন। তেমনি গণভবন থেকে বেরিয়েও তিনি এর যে কোন স্থানে যেতে পারবেন। এই টানেলে প্রবেশ থাকবে একেবারেই সীমিত। এতে প্রধানমন্ত্রীর রাজধানীর রাস্তা ব্যবহার কমে আসবে। রাস্তার ওপর চাপও কমবে। আধুনিক এই সচিবালয়কে ঘিরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গেটে থাকবে ইলেকট্রনিক এন্ট্রি ব্যবস্থা। সচিবালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য তৈরি করা হবে ইলেকট্রনিক এট্রি কার্ড। গেটে প্রবেশের জন্য নিজস্ব কার্ড পাঞ্চ করতে হবে। এতে কোন্ কর্মকর্তা কখন সচিবালয়ে ঢুকছেন আবার কখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তারও রেকর্ড থাকবে আবার দর্শনার্থীর জন্য থাকবে পৃথক ইলেকট্রনিক কার্ড। অনলাইনে দেয়া হবে এই পাস। কোন দর্শনার্থী গেটে গেলে যার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাবেন তিনি অনলাইনে পাস পাঠিয়ে দেবেন। গেটে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা তা নিশ্চিত হয়ে দর্শনার্থীকে ইলেকট্রনিক প্রবেশ কার্ড দেবেন। সেটি পাঞ্চ করে দর্শনার্থী সচিবালয়ে প্রবেশ করবেন। বর্তমান সচিবালয়ে হবে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।
×