ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারপতিসহ বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তা জোরদার

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

বিচারপতিসহ  বিশিষ্টজনদের  নিরাপত্তা  জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশদানকারী দুই বিচারপতির বাড়িতে বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিচারপতি ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারির আগের রাতে লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের উস্কানিমূলক বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারী টিভি চ্যানেল ইটিভি। পলাতক তারেক রহমানের এহেন বক্তব্য প্রচারের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা একটি রিট আবেদন করেন। বুধবার রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পলাতক তারেক রহমানের কোন বক্তব্য বিবৃতি সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অন্য কোন মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন প্রাথমিক আদেশ বাস্তবায়নের জন্য তথ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে বলা হয়। আদেশের পাশাপাশি এক রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। চার সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও তারেক রহমানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থানের বর্তমান অবস্থা জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তারেক রহমানের পাসপোর্টের মেয়াদ জানিয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য ৩০ দিন সময় দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারির পর বৃহস্পতিবার ভোরে বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের ফেনী সদরের ধলিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাড়িতে আগুন দেয় সন্ত্রাসীরা। তবে বাড়িতে লোক না থাকায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির জাজেস কোয়ার্টারের ৭/এ নম্বর সড়কের ৯২/বি নম্বর বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এমন ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট বিচারক ও আইনজীবীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিচারকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গীসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। এজন্য তাঁর ওপর সরকারবিরোধীদের আক্রোশ আছে। আর তারেক রহমানের বক্তব্য সংক্রান্ত রিটের আবেদনের পক্ষে তিনিও শুনানিতে ছিলেন। এজন্যও তিনি হামলাকারীদের অন্যতম টার্গেট হতে পারেন। পুলিশ নিয়মিত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। নিরাপত্তা দিচ্ছে। পাশাপাশি গোয়েন্দারা তাঁর অফিস ও বাসার ওপর নজরদারি করছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার তারেক রহমান ও ইটিভি চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে পুলিশ। মামলার অভিযোগে বলা হয়, তারেক রহমান পরিকল্পিতভাবে উসকানি ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আর এমন বক্তব্য প্রচার করে ইটিভির চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দুই বিচারকের বাড়িতে হামলার পর সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিচারপতি, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও আইনজীবীদের ঘিরে তৈরি করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। তাঁদের ওপর কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। তাঁদের সার্বিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ছায়ার মতো একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাঁদের অনুসরণ করছে। দীর্ঘ সময় এমন নিরাপত্তা থাকবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
×