ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে কিছু বলা যাবে না-আপীল বেঞ্চ ॥ ফের শুনানি রবিবার

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে কিছু বলা যাবে না-আপীল বেঞ্চ ॥ ফের শুনানি রবিবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহের পদমর্যাদা নির্ণয়ে ১৯৮৬ সালে জারি করা পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীল মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগেই গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রীমকোর্ট। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ফটোসেশন কম করেন। তাতে দেশের জন্য মঙ্গল হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে সাংবাদিকদের কিছু বলা যাবে না। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংক্রান্ত আপীল মামলাটি অধিকতর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার আপীল বিভাগের কার্যতালিকায় আসার পর শুনানিতে প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপীল বেঞ্চ এসব কথা বলেন। পরে অধিকতর শুনানি রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এর আগে গত মঙ্গলবার ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের আপীল নিষ্পত্তি করে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন সুপ্রীমকোর্ট। কিন্তু আইনজীবীর বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আপীলটি অধিকতর শুনানির জন্য অবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় আসে। বৃহস্পতিবার শুনানিতে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, আমরা মামলাটি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে নিষ্পত্তি করেছি। কিন্তু পর্যবেক্ষণে কি আছে তা বলিনি। আপনারা বিস্তারিত কিভাবে বললেন? আমরা মিডিয়ায় আপনাদের ছবিসহ বিস্তারিত দেখতে পেলাম। আপনারা কি রায়ের কোন অনুলিপি পেয়েছেন? জবাবে রিটকারীদের আইনজীবী মোঃ আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন আদালত বলেন, সংক্ষিপ্ত রায়ে আমরা চারটি শব্দ উল্লেখ করেছি। এর বাইরে একটি শব্দও উল্লেখ করিনি। আমরা মৌখিক কোন আদেশও দেইনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের ভুল হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, এরপর থেকে আপনারা যদি জনস্বার্থে কোন মামলা করেন এবং রায়ের আগেই মিডিয়ায় প্রচার করে দেন তাহলে ধরে নেব আপনারা শুধু প্রচারের জন্যই মামলা করেন। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ফটোসেশন কম করেন। তাতে দেশের জন্য মঙ্গল হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে কিছুই বলা যাবে না। কোন কোন সময় আমরা সংক্ষিপ্ত আদেশ দেই। তবে যে সব বিষয়ে অপব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলোতে পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়ে দেই বলেও উল্লেখ করেন আদালত। এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী আবদুর রব চৌধুরী হাইকোর্টের রায় থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনান। তিনি দাঁড়িয়েই আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যেভাবে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে তা সরকারের জন্য বিব্রতকর। এ সময় তিনি হাইকোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, হাইকোর্ট থেকে আটদফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপর নতুন করে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা প্রকাশ করার জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়। এ সময় আদালত বলেন, আমরা ওটা দেখব বলেছি। এরপর আদালত এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য শুনতে চান। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সকলকেই নিয়ে আমাদের থাকতে হবে। এ সময় আদালত মামলার বিষয় নিয়ে শুনানি করতে বলেন। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার প্রস্তুতি নেই। এজন্য সময় দরকার। এরপর এ্যাডভোকেট মোঃ আসাদুজ্জামান শুনানি করেন। অতঃপর আদালত রবিবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। ফিরে দেখা ॥ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে তৎকালীন মহাসচিব ও জেলা জজ মোঃ আতাউর রহমান ২০০৬ সালে হাইকোর্টে ১৯৮৬ সালের পদমর্যাদাক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র্রের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ নিয়ে তিনটি অঙ্গ রয়েছে। শাসন বিভাগ পদমর্যাদাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদসহ সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। এছাড়া আইন বিভাগে থাকবেন সংসদের স্পীকার ও সংসদ সদস্যগণ। অন্য দিকে বিচার বিভাগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক ভাগে থাকবেন উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ এবং অপরভাগে অধঃস্তন আদালতের বিচারপতিরা। কিন্তু ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সংবিধানের বর্ণিত এই বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এতে সংবিধানের মূল চেতনা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাই ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বাতিলের জন্য রিটে বলা হয়। ওই রিটে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০০৬ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করে রায় দেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরদিন আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। দীর্ঘদিন পর শুনানি শেষে আপীল বিভাগ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
×