ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ জামাল ধানমণ্ডির লক্ষ্য সুদুরপ্রসারী

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

শেখ জামাল ধানমণ্ডির লক্ষ্য সুদুরপ্রসারী

রুমেল খান ॥ গত মৌসুমে বেশ জাঁকজমক সহকারে দল বদল করেছিল শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড। ১০ কোটি টাকা দিয়ে দল গড়েছিল তারা। দলে ছিল জাতীয় দলের ১১ ফুটবলার। রেকর্ড ৬০ লাখ টাকায় হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড সনি নর্দেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামকে দেয়া হয় ৩৭ লাখ টাকা, যা ছিল দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়ার রেকর্ড। রেজাল্ট? ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন, ভারতের আইফএ শিল্ডে রানার্সআপ এবং ভুটানের কিংস কাপে চ্যাম্পিয়ন (২০১১ সালে নেপালের সাফাল পোখারা গোল্ডকাপ জেতার পর এটা তাদের বিদেশ থেকে জেতা দ্বিতীয় সাফল্য) ... সব মিলিয়ে ৩টিতে চ্যাম্পিয়ন ও ১টিতে রানার্সআপ ... নিঃসন্দেহে নজরকাড়া সাফল্য। শুধু তাই নয়, জামালের এমন সাফল্যের কারণেই তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলার আগ্রহ প্রকাশ করে দক্ষিণ কোরিয়ার শক্তিশালী ফুটবল ক্লাব বুসান আই পার্ক। ঢাকায় এসে তারা জামালকে ২-০ গোলে হারিয়ে গেলেও জামালের আক্রমণাত্মক খেলা সবার প্রশংসা কুড়ায়। মোট কথা, বাংলাদেশের মধ্যে তো বটেই, জামালকে এখন অনেক ফুটবলবোদ্ধাই রায় দিচ্ছেন ‘দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবল ক্লাব’ হিসেবে। তা, নতুন ফুটবল মৌসুমে সেই ক্লাবটির সর্বশেষ অবস্থাটা কেমন? ‘আমরা বরাবরের মতোই এবারও মৌসুমের সব শিরোপা জেতার লক্ষ্যেই দলগঠন করেছি।’ জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে এমনটাই বলেন ক্লাবটির ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলাল। তিনি আভাস দেন, এবার জামালের দলবদলের খরচ আগের মৌসুমকেও ছাড়িয়ে গেছে। সেটা কত? ‘আনুমানিক ১২-১৩ কোটি টাকা তো বটেই।’ গত মৌসুমে যা ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। ৭ জানুয়ারি বাফুফে ভবনে এসে দল বদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আরেক ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড। তাদের দল বদলের খরচ ৮ কোটি টাকারও বেশি। দলে আছে জাতীয় দলের সাত ফুটবলার। তারা ঘোষণা দেয়, এবারের প্রিমিয়ার লীগে তারা আবাহনী ও জামালের সঙ্গে টক্কর দেবে! এ ব্যাপারে হেলালের দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। মাঠেই ফয়সালা হবে, কে সেরা। আমরা কেমন দল, সেটা সম্প্রতি একাধিকবার প্রমাণ করেছি। দলের প্রতিটি পজিশনেই আমাদের আছে ২-৩ জন করে ব্যাক আপ প্লেয়ার, যা অন্য কোন ক্লাবের নেই। তারপরও বলব, আমরা সব ক্লাবকেই সমীহ করি, সবাইকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি।’ যদিও রাসেলের আগেই জামাল প্রথম দল হিসেবে দল বদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল, কিন্তু রাসেলের মতো হোন্ডা, ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ডপার্টি ও সমর্থকদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে কেন দল বদল করেনি। হেলালের ব্যাখ্যা, ‘কিংস কাপ জিতে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই আমরা ক্লাবের সবাই দারুণ ক্লান্ত ছিলাম। তাছাড়া তখন ১১ ডিসেম্বরই ছিল দলবদলের শেষ তারিখ। তাই আমরা তাড়াহুড়ো করে ৫ তারিখেই বাফুফের কাছে দলের প্লেয়ারদের নামের তালিকা জমা দিয়ে দিই (পরে অবশ্য দুই দফা তারিখ বেড়েছে দল বদলের। শেষ তরিখ ৩১ জানুয়ারি) তাই সেভাবে জাঁকজমকভাবে দল বদল করা হয়নি। তাছাড়া আমরা মনে করি, মাঠে খেলে বিজয়ী হয়েই জাঁকজমকভাবে উৎসব করা ভাল। দল বদলের আগে এমন কিছু না করলেও চলে।’ দল বদলের সময় যে ২৩ জনের নাম জমা দিয়েছিল জামাল, সে তালিকার সর্বশেষ অবস্থা কী? ‘হেলাল জানান, ‘আগামী ১০-১২ তারিখের মধ্যে স্ট্রাইকার পজিশনের ৩-৪ বিদেশী প্লেয়ার আসবে সার্বিয়া ও নাইজিরিয়া থেকে। ট্রায়াল দিয়েই এখান থেকে আমরা দুই জনকে রাখব। আর আমাদের দুই পুরনো প্লেয়ার হাইতির ওয়েডসন এবং নাইজিরিয়ার এমেকা তো আছেই। ইতোমধ্যেই ফেনী সকার থেকে নেয়া হয়েছে ল্যান্ডিংকে। আমরা চেষ্টা করব যে নতুন দুজন বিদেশী প্লেয়ার নেব, তারা যেন ওয়েডসন-এমেকার চেয়েও মানসম্পন্ন হয়।’ উল্লেখ্য, বাফুফের নতুন বাইলজে আছে, এই মৌসুমের লীগে সর্বোচ্চ পাঁচ বিদেশীকে নিবন্ধন করানো যাবে, তবে ম্যাচে খেলানো যাবে সর্বোচ্চ তিনজনকে। শেখ জামাল থেকে এবার শেখ রাসেলে যোগ দেয়া রাইটব্যাক ইয়াসিন খানকে নিয়ে বিতর্ক আছে। মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই শেখ রাসেলের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইয়াসিনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি এখন ফয়সালা করবে বাফুফে। এ প্রসঙ্গে হেলালের ভাষ্য, ‘আমরা বাফুফের কাছে ইয়াসিনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি। বরং জানিয়েছি, ইয়াসিন নিজে তার এমন কাজের ভুল বুঝতে পেরে আমাদের কাছে সরি বলেছে। আমরা তাকে ক্ষমাও করে দিয়েছি। ভুলটা অবশ্যই শেখ রাসেলের। ইয়াসিনের বয়স কম। সে ভুল করতেই পারে। কিন্তু মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তারা একজন প্লেয়ারের কাছ থেকে কিভাবে সই নিয়ে অগ্রিম টাকা দেয়?’ প্রিমিয়ার লীগ শেষ হওয়ার পর যখন বহুল আলোচিত ‘সুপার কাপ’-এর আসর হওয়ার কথা ছিল, এটা সেই সময়ের (গত বছরের জুলাই-আগস্ট) ঘটনা। ইয়াসিন তখনও শেখ জামালের ক্যাম্পেই ছিলেন। কেননা, তখন সুপার কাপ হবে ধরে নিয়ে জামাল তার প্লেয়ারদের ক্যাম্পে রেখেছিল (যদিও পরে অবশ্য আর অনুষ্ঠিত হয়নি সুপার কাপ)। গত মৌসুমে জামালের অধিনায়ক ছিলেন মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম। এবার অধিনায়ক করা হয়েছে সেন্টারব্যাক নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে। এ প্রসঙ্গে হেলাল বলেন, ‘অবশ্যই মামুনুল খুবই ভাল প্লেয়ার। জাতীয় দলেরও অধিনায়ক। আইএসএলে কলকাতায় খেলতে গেছে প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার হিসেবে। এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। ওকে গত মৌসুমে আমরা দলভুক্ত করি একেবারে শেষ মুহূর্তে। যদিও এর আগেই ঠিক করা ছিল নাসিরকে অধিনায়ক করা হবে। তারপরও মামুনুলকেই অধিনায়ক করা হয়। মৌসুমের শেষদিকে ইনজুরি ও আইএসএলের কারণে জামালের কিছু ম্যাচে খেলতে পারেনি সে। কিংস কাপে তার অনুপস্থিতিতে চমৎকার অধিনায়কত্ব করে নাসির। নিজের যোগ্যতাবলেই এবারের মৌসুমের জন্য অধিনায়ক হয়েছে সে। আসলে এটা ওর প্রাপ্যই ছিল। তিন বছর ধরে দলের সঙ্গে আছে ও।’অধিনায়কত্ব বদলে দলের ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নে হেলাল দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেন, ‘প্রশ্নই আসে না। শেখ জামাল ক্লাবের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, ক্লাবের কড়া নিয়ম-শৃঙ্খলা। যা ম্যানেজার হিসেবে তদারকি করি আমিই।
×