ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফ্রান্সে জাতীয় শোক, ফের হামলায় নারী পুলিশ নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

ফ্রান্সে জাতীয় শোক, ফের হামলায় নারী পুলিশ নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্যারিসের রম্যসাময়িকী শার্লি হেবদো কার্যালয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই বৃহস্পতিবার শহরটির দক্ষিণে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক নারী পুলিশ নিহত ও অপর এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। তবে শার্লি হেবদো কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে এ ঘটনার যোগসূত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওদিকে শার্লি হেবদো কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত ২ সন্দেহভাজনকে প্যারিসের উত্তরে সশস্ত্র অবস্থায় দেখা গেছে। তাদের আটকে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কড়া নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারের হামলার পরই ওই বন্দুকধারী পালিয়ে যায়। এই বন্দুকধারী উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের অধিবাসীর মতো দেখতে আবার একই দিন লিও শহরের এক মসজিদের কাছের রেস্তোরাঁয় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। বুধবারের হামলা ঘটনায় জাতীয় শোক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এক মিনিট নিরবতা পালন করেছে ফরাসিরা। ঘণ্টা বাজিয়ে হাজার হাজার লোক বৃহস্পতিবার শার্লি হেবদো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। অনেকে হাতে শোক ব্যানার বহন করে। তাতে লেখা ছিল আই এ্যাম শার্লি (আমিই শার্লি)। এ সময় অনেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে। শার্লি হেবদো কার্যালয়ে হামলা ঘটনায় জড়িতদের আটকে ফ্রান্সজুড়ে হাজার হাজার পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের উত্তরের লিল্লে শহরের এক মুসলিম স্কুলের শিক্ষার্থীরাও শোক পালন করে। এ সময় তারা কাগজে লিখে দেখায়, এতে আমার নাম নেই। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও নিহতদের স্মরণে সমাবেশ হয়েছে লন্ডনের ট্রাগালফার স্কয়ার, মাদ্রিদ, বার্লিন এবং ব্রাসেলসেও। তবে বুধবারের ওই হামলার দায় এখনও কেউ স্বীকার করেনি। ওদিকে বৃহস্পতিবারের ওই কাপুরোষোচিত হামলায় ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন দুজনের অবস্থান নিশ্চিত করেছে ফরাসি পুলিশ। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আটক করা যায়নি। দেশটির আইসনি অঞ্চলের ভিলারস কোতরেতের রাস্তার পাশের এক স্টপেজে তারা ফের হামলা চালিয়ে খাবার ও গাড়ির জ্বালানি নিয়ে যায়। এ সময় তাদের হাতে কালাশনিকভ ও রকেট লঞ্চার ছিল বলে ওই স্টপেজের ম্যানেজার গণমাধ্যমকে জানান। ওদিকে সন্ত্রাসী হামলায় সম্পাদক ও পাঁচ কার্টুনিস্টসহ ১২ জন নিহত হলেও মনোবল দমেনি সাপ্তাহিকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আগামী বুধবার ফের পত্রিকাটি বাজারে আসছে বলে জানানো হয়েছে। পত্রিকাটির কলামিস্ট প্যাট্রিক পেলক্স জানিয়েছেন, বোকার মতো কাজ করলে জয় আসবে না। পত্রিকাটির বাকি কর্মীরা শীঘ্রই বৈঠকে বসবে। তবে এ ঘটনাটি খুই বেদনাদায়ক। পত্রিকাটির আগামী সংখ্যা এটির বাইরের কোনও কার্যালয় থেকে ছাপানো হবে বলে জানান তিনি। বুধবারের হামলায় অংশ নেয়া তিনজনের মধ্যে সন্দেহভাজন ও কনিষ্ঠ হামলাকারী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে খবরে বলা হয়েছে। বাকি সন্দেহভাজন দুই ভাই সাঈদ কুয়াচি (৩৪) ও শরিফ কুয়াচিকে (৩২) খুঁজছে পুলিশ। ইতোমধ্যে সন্দেভাজন অভিযুক্তদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস বলেছেন, আর কয়েক ঘণ্টা পরই আমরা ভাল কোনও খবর পেতে যাচ্ছি। আর এখন নতুন কোনও হামলা ঠেকানোই আমাদের প্রধান কাজ। ওদিকে প্যারিসে হামলার ঘটনার নিন্দা জানাতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ ঘটনার নিন্দা জানাতে বলা হয়েছে। ধর্ম সংক্রান্ত বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় দীর্ঘদিন ধরেই চরমপন্থীদের নিশানায় ছিল ফরাসি রম্য সাপ্তাহিকীটি। প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা ॥ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পত্রিকা অফিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের জনগণ ও সরকারের প্রতি গভীর সংহতি প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় দুই পুলিশসহ ১২ জন নিহত ও অনেকের আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক বার্তায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসীরা যে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের হোক না কেন, এই সন্ত্রাসীদের সভ্য সমাজে কোন স্থান নেই। প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাতও কামনা করেন।
×