ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পথে পথে বাধার শিকার লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান

‘ওরা ইসলামের রক্ষক নয় বরং শত্রু’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

‘ওরা ইসলামের রক্ষক নয় বরং শত্রু’

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ লাখো মুসলমান ইসলামী উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব এজতেমায় শরিক হতে এসে পথে পথে বাধার শিকার হচ্ছেন। বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েও বিফল হচ্ছেন আলেমরা। পবিত্র হজের পর মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর জমায়েত বিশ্ব এজতেমাকে ‘পিকনিক’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী ডক্টর তুহিন মালিক। অন্যদিকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিশ্ব ইজতেমার জন্য অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারের দাবি নাচক করে দিয়েছেন দলটির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিশ্ব এজতেমার মধ্যেও সারাদেশে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, বিশ্ব এজতেমা শুরুর আগে এভাবে অতীতে আর কোনদিন অবরোধ ডাকেনি কোন রাজনৈতিক দল। জানা যায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তবলীগ জামাতের সদস্যরা তাকে এজতেমার দাওয়াত দিয়ে সুষ্ঠুভাবে এজতেমা পালনের সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ জানাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালেয়ে যান। কিন্তু বেগম জিয়া তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তবলীগ জামাতের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করলে সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুরোধ শুনতে হবে এমন মনোভাব থেকে বেগম জিয়াকে তাঁদের সঙ্গে দেখা না করার পরামর্শ দেন দলের কিছু প্রবীণ আইনজীবী। তবলীগ জামাতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারও কারও সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে অবরোধ প্রত্যাহার বা শিথিল করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এজতেমা হলেও তাদের কিছু করার নেই, আন্দোলন চলবেই। এমনকি এজতেমার বাসগুলো অবরোধের আওতামুক্ত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলেও তাও মানতে চাচ্ছে না বিএনপি। তারা তারেক রহমানের দোহাই দিয়ে বলছেন, তাদের পক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সকে অনুরোধ করা সম্ভব নয়। তারেক রহমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে বিএনপির ওইসব নেতা তবলীগ জামাতের প্রতিনিধিদের বলছেন, তারেক রহমানের নির্দেশই বিএনপিতে শেষ কথা। এই নির্দেশনা বদলের ক্ষমতা বেগম জিয়ারও নেই। তবলীগ জামাতের একাধিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, এটা অনাচার। এভাবে যারা ইসলামী দাওয়াতী জলসাকে ব্যর্থ করে দেয় তারা ইসলামের রক্ষক নয় বরং শত্রু। সরকারে যাওয়া না যাওয়ার সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই। এটা কোটি কোটি মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িত। ধর্মপ্রাণ মানুষ একত্রে মিলিত হয়ে শুধু আল্লাহ এবং রসূলের আলোচনা করেন। কিন্তু এতে তাদের বাধা দেয়ার অর্থ ইসলামকে বাধা দেয়া। তারা কি সরকার উৎখাতের সঙ্গে দেশ থেকে ইসলাম তুলে দিতে চায় এমন প্রশ্নও করেন নেতৃবৃন্দ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তবলীগ জামাতের এক নেতা বলেন, আমরা আশঙ্কায় আছি এখন তারা ধর্মপ্রাণ শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর হামলা না করে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পুরোজাতির জন্যই তা কলঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে বিএনপিপন্থী কথিত সংবিধান বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি একুশে টেলিভিশনের টকশোতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। জামায়াত-শিবিরের ‘বাঁশের কেল্লা’য়ও ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে তবলীগ জামাত ও বিশ্ব এজতেমা বিরোধী মন্তব্য। বাঁশের কেল্লায় তুহিন মালিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, বিশ্ব এজতেমা তুরাগপারের পিকনিক। এদিকে তুহিন মালিকের এজতেমা বিরোধী অবস্থানে ফুঁসে উঠেছে তৌহিদী জনতা। এজতেমার মাঝেও বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তুহিন মালিক বলেছেন, ‘বিশ্ব এজতেমার জন্য আন্দোলন কর্মসূচী স্থগিত করা কোনক্রমেই ঠিক হবে না। ফেরাউনকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে তুরাগপারে পিকনিক করলে ইসলামের দুই পয়সার উপকার হবে না বরং ফেরাউনের অবস্থান সুসংহত হবে। এদিকে বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ৫ জানুয়ারি ব্যর্থ হওয়ার পর এখন তারা বিশ্ব এজতেমাকে টার্গেট করেছে। এজতেমায় জমায়েত ভ-ুল করে দিলে এর দায় গিয়ে পড়বে সরকারের ওপর। এর মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ বিএনপির পক্ষ নেবে বলে তারা ধরেই নিয়েছে। এজন্য এজমেতায় কৌশলে বাধা দেয়ার অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। দলটির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার সকালে বারিধারার একটি বাসায় একদল সাংবাদিকের কাছে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। টঙ্গীর তুরাগতীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ সম্মেলন বিশ্ব এজতেমা শুরু হতে যাওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান রয়েছে। এ বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রিজভী বলেন, সারাদেশে সরকারের দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। গতকালও তিন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন তাদের নিষ্ঠুর নির্যাতনে সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা আহত হচ্ছেন। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করা না হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি মেনে না নেয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমার বিষয়টি বিবেচনা করে বিএনপির লাগাতার অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এই আহ্বান জানানো হয়। ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গবর্নরসের সদস্য শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ধর্মকে আপনার দুনিয়াবি হানাহানি ও সঙ্কীর্ণতার উর্ধে রাখুন। মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্র না বানিয়ে ইবাদত-বন্দেগী ও দ্বীনের খেদমত করার সুযোগ দিন। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আশা করি আপনারা আজকের মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার করবেন। টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার আগে এই অবরোধে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি টঙ্গীমুখী মুসল্লিরাও বিপাকে পড়েছেন। ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশী মুসল্লিরা বেনাপোলে এলেও বাস না থাকায় টঙ্গী যেতে সমস্যায় পড়ছেন বলে খবর এসেছে।
×