ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

আলিফ লায়লার সেতারের সুরে সিক্ত শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

আলিফ লায়লার সেতারের সুরে সিক্ত শ্রোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফুরিয়ে এসেছে দিনের আলো। নামছে অন্ধকার। মনের মাঝে খেলা করছে ভাবের রকমারি রং। আর সেতারের মিহি সুরে ঘটছে তার প্রকাশ। মঞ্চের ব্যাকড্রপে রাখা পর্দায় রাগের ভাবখানি প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রকলায়। আত্মার সঙ্গে সুরযন্ত্রের সংযোগে বাজিয়ে যাচ্ছেন আলিফ লায়লা। এভাবেই সেতারের সুরধ্বনির সঙ্গে চিত্রকলার প্রকাশে স্রোতাকে সিক্ত করলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রবাসী এই সেতারবাদক। বৃহস্পতিবার পৌষের সন্ধ্যায় শিল্পকলায় একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো আলিফ লায়লার সেতারসন্ধ্যা। রাগের আশ্রয়ে সুর, তাল ও লয়ের খেলায় সঙ্গীতানুরাগীদের বিমোহিত করেন এই শিল্পী। পারদীপ রাগের অবলম্বনে বাদনের সূচনা করেন। কিছুক্ষণ আলাপ পর্বের পর পৌঁছে যান বিলম্বিত তিন তালে। বিচ্ছেদের সঙ্গে মধুরতার মেলবন্ধনে মোহময় শব্দধ্বনির বিস্তারে শেষ করেন দ্রুত ত্রিতালে। এরপর পরিবেশন করেন রাগ ভৈরবী ও চারুকেশী। তাঁর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন ভারতীয় তবলাবাদক অনুব্রত চ্যাটার্জী। পুরো পরিবেশনার মাঝে সেতারের সঙ্গে তবলার সওয়াল জবাবের পর্বটিও ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। আর তাই প্রতিটি পরিবেশনার পরই উদ্দীপ্ত শ্রোতার করতালিতে মুখর হয়েছে মিলনায়তন। একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা বিভাগের পরিচালক মোঃ সোহরাব উদ্দীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরভরা এ আয়োজনটি উপভোগ করতে হাজির হয়েছিলেন চিত্রশিল্পী নিসার হোসেন, বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, নৃত্যশিল্পী মিনু হক, অভিনয় শিল্পী সারা যাকেরসহ বিশিষ্টজনরা। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, সুরের এমন আয়োজনে কেমন করে যেন মনটা ভাল হয়ে যায়। এ ধরনের সুস্থ ও সুন্দর সঙ্গীতায়োজন দেশের সংস্কৃতি বিকাশে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমাদের রয়েছে আড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংস্কৃতি। আর সেই সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত আছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনন্য সুর মহিমা। রবীন্দ্র সরোবরে প্রতিবন্ধীদের নিবেদিত কনসার্ট ॥ পুরো আয়োজনটি নিবেদিত ছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য। গানের সুরে সুরে তাঁদের প্রতি জানানো হয় মানবিক ভালবাসা। সঙ্গীতানুষ্ঠানের পর্বটি মুখ্য হলেও সুরের সঙ্গে ছিল কবিতার উচ্চারণ। সেই সূত্রে ছিল আবৃত্তি পরিবেশনা। এ ছাড়াও ছিল প্রতিবন্ধী শিল্পীদের গানের পরিবেশনা। সবুজ বৃক্ষরাজি আর টলমল জলে আবৃত ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠিত হলো কনসার্ট ফর ইনক্লুশন শীর্ষক আয়োজনটি। বৃহস্পতিবার পৌষের বিকেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ এ্যান্ড এ্যাডভোকেসি ন্যাক্সাস (বি-স্ক্যান)। উপলক্ষ ছিল প্রতিবন্ধী মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বি-স্ক্যান প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা অপরাজেয়র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদ্্যাপন। দুপুর পেরুনো বিকেলের সূচনালগ্নের রোদ ঝরে পড়েছে রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে। দর্শকের উদ্দেশে কথা বলছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী সাবরিনা সুলতানা। বলছেন তাঁর স্বপ্ন জয়ের গল্প, চার দেয়ালের বৃত্ত ভেঙ্গে বাইরে এসে অসংখ্য প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একসঙ্গে পথচলার গল্প। এভাবেই গল্প ও আড্ডার সঙ্গে গানে গানে সাজানো ছিল অনুষ্ঠানটি। ‘একীভূত সমাজের অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল জলের গান, নেফারিয়াস, সেনটিনেল, আবর্তন ও শহরতলি। প্রতিবন্ধী শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন চাঁদের কনা, স্বপ্না চাঁদনী, নজরুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন দোলন। আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী। বি-স্ক্যানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবরিনা জানান, অনেক প্রতিবন্ধীই নিজেকে সমাজের বোঝা মনে করেন এবং নিজেদের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখেন। তাদের চার দেয়াল থেকে বাইরের পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্যই মূলত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই প্রতিবন্ধীরাও সমাজের বিভিন্ন কর্মকা-ে যুক্ত থাকবে। এ জন্য সবার সহিযোগিতা চাই। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তিনি বলেন, আমরা সবাই যদি সহযোগিতা করি তবে প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতা খুব সহজেই দূর করতে পারব। তারা আমাদের মতোই সমাজে নানা কর্মকা-ে যুক্ত হতে পারবে।
×