ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি ইসলামে বিশ্বাসী নয় বলে এজতেমার মধ্যে অবরোধ ডেকেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

বিএনপি ইসলামে বিশ্বাসী নয় বলে এজতেমার মধ্যে অবরোধ ডেকেছে

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ যে দল বিশ্ব এজতেমার মধ্যে অবরোধের কর্মসূচী দেয় তারা ইসলামে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন- যারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত বিশ্ব এজতেমার মধ্য অবরোধ ডেকেছে, তারা কতটা ধর্মে বিশ্বাসী তা এ দেশের জনগণ বিচার করবে। তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। তিনি এও বলেছেন, বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার সঙ্গে জঙ্গীবাদী রাজাকার ছাড়া কেউ নেই। মোহাম্মদ নাসিম বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টাসহ আগত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজ মাঠে এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, কামাল হোসেন এমপি, খায়রুজ্জামান লিটন, বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ, নাজমুল হক প্রধান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি, আব্দুল মজিদ ম-ল এমপি, ম ম আমজাদ হোসেন মিলন এমপি, তানভীর ইমাম এমপি সেলিনা বেগম স্বপ্না এমপি, সিরাজুল ইসলাম খান, আবু ইউসুফ সূর্য, গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক আলতাফ হোসেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া অবরোধ ডেকেছেন। কোথাও অবরোধ নেই। গাড়ি চলছে। গাড়ি যদি নাই চলত তাহলে সম্মেলনে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলো কিভাবে? আপনি অবরোধের ডাক দিয়ে ঘরে বসে ঘুমান। আপনার অবরোধ গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ মানে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থতার নামে নাটক করছেন উল্লেখ করে নাসিম বলেন, ‘আপনি কি সত্যিকারের অসুস্থ? তাহলে বলুন? আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনাকে (বেগম জিয়া) কথা দিচ্ছি- প্রয়োজনে আপনার সুস্থতার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন করা হবে। কিন্তু অসুস্থতার ভান করে ঘরে ঘুমাবেন না।’ অবরোধের ডাক দিয়ে গুলশানের সুরম্য ভবনে আয়েশে দিন কাটাবেন না। জনগণকে কষ্ট দেবেন না। মাঠে তাঁর দলের কোন নেতাকর্মী নেই উল্লেখ করে তিনি আবারও বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জঙ্গীবাদী রাজাকার ছাড়া কেউ নেই। তাঁর পাশেও দলের কেউ নেই। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বিএনপিকে একটি অবৈধ রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে বলেছেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে যে দল গঠন করেছেন তাও অবৈধ। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু সংবিধান রক্ষার নির্বাচন নয়- এটা ছিল দেশের অস্তিত্ব রক্ষার নির্বাচন। এ নির্বাচন না হলে দেশ আজ পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতির শিকার হতো। ৯ বছরেরও অধিক সময়কাল পর এ সম্মেলন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিল সম্মেলনস্থল সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজ মাঠসহ পুরো শহর। লাল নীল, বেগুনীসহ রং-বেরঙের বাতি দিয়ে আলোক সজ্জায় মোড়া হয়েছিল শহরের প্রধান দুটি সড়ক এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের গোলচত্বর থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুনে সাজানো হয়েছিল সড়কের দু’পাড়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, শহীদ জাতীয় চার নেতা, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ সম্মেলনে আগত অতিথি এবং সিরাজগঞ্জের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ মরহুম নেতাদের নামানুসারে প্রায় পঞ্চাশটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। কলেজ মাঠে অত্যাধুনিক মঞ্চ তৈরি করে ১০ হাজারের বেশি লোকের বসার স্থান করা হয়েছিল। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচী উপেক্ষা করে জেলার ১২ সাংগঠনিক থানা থেকে বাসে ট্রাকে চড়ে ডেলিগেট এবং কাউন্সিলররা আসেন সম্মেলন স্থলে। উপচেপড়া জনস্রোতে কানায় কানায় ভরে ওঠে সম্মেলনস্থল। সম্মেলনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মুহুর্মহু সেøাগানে কলেজ মাঠ এবং আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং সিরাজগঞ্জের উন্নয়নকে ঘিরে এসব সেøাগান উচ্চারিত হয়। সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যারা কথা বলে স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের জন্য গণতন্ত্র থাকতে পারে না। জঙ্গীবাদের মদদদাতা বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গী দমন না করলে দেশে এখন পাকিস্তানের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করত। এ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলখানায় হত্যাকা-সহ সব হত্যাকা-ের বিচারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার কোন খুনীকে ক্ষমা করেনি। খুনীদের সঙ্গে কোন আপোস নেই। বেগম জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনার ডাকে কেন নেতারা মাঠে নামেন না। আপনি কেন একা লড়াই করছেন। একজন নেতা যদি ভুল করে তার জন্য সেই দলকে খেসারত দিতে হয়। আন্দোলন করতে চাইলে পুলিশ, ব্যারিকেড, কাঁটাতার, এগুলো তো থাকবেই। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র নাসিম বলেন, জিয়া আপনার সব শক্তি শেষ হয়ে গেছে। এখন আপনি যা করছেন তা শুধুই আর্তনাদ। আপনাকে দেখে আমার কষ্ট হয়। একজন সেনাপ্রধান তখনই মাঠে নামে, যখন যুদ্ধের মাঠে তার সব কর্মীরা মারা যায়। আপনরাও তাই হয়েছে বেগম জিয়া। কারণ আপনার পাশে একজন নেতাকেও দেখা যায় না। আন্দোলনে মাস্টার যদি কোন দল থাকে তাহলে কেবল আওয়ামী লীগই আছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় পুলিশের মার খেয়েছে কিন্তু রাস্তা ছেড়ে পালায়নি। কিন্তু আপনার কোন নেতাকর্মীকে রাস্তায় দেখা যায় না। আপনি আন্দোলন করবেন কিভাবে?
×