ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ভোগ উপেক্ষা করে মুসল্লিরা তুরাগ প্রান্তরে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

দুর্ভোগ উপেক্ষা করে মুসল্লিরা তুরাগ প্রান্তরে

ফিরোজ মান্না/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নূরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ ধর্মকে নির্ভর করে যাদের রাজনীতি সেই ধর্ম ব্যবসায়ীদের ডাকা টানা অবরোধে বিশ্ব এজতেমায় এবার ধর্ম প্রাণ মুসল্লিদের স্রোত অনেকটাই থেমে গেছে। পুলিশ ও র‌্যাব পাহারায় কিছু বাস-লঞ্চ চালু করা হলেও গতবারের তুলনায় এবার এজতেমায় মুসল্লিদের উপস্থিতি অনেক কম। বিদেশী মুসল্লিরাও এবার এজতেমায় যোগ দিতে পারছেন না। বিশেষ করে ভারত থেকে আসা মুসল্লিরা সীমান্ত এলাকায় এসে বসে আছেন পরিবহনের আশায়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ হরতালে কোন পরিবহন দিনের বেলায় মহাসড়কে চলছে না। ফলে নির্বিঘেœ মুসল্লিরা এজতেমা স্থল চুঙ্গিতে আসতে পারছেন না। ধর্মের দোহাই দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে রাজনীতির বৈতরণী পার হয়ে আসছে। আজ সেই বিএনপি-জামায়াতই আজ ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্ব এজতেমার মুরব্বিরা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বুধবার সাক্ষাত করে অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানান। এতে বেগম খালেদা জিয়া কোন কর্ণপাত করেননি। তাঁকে বিশ্ব এজতেমায় যাওয়ার জন্যও মুরব্বিরা দাওয়াত করেন। তিনি মুরব্বিদের দাওয়াতও গ্রহণ করেননি। ধর্মের পথে এমন অন্তরায় তৈরি করে ২০ দলীয় জোট অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা অব্যাহত রেখেছে। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমানদের জমায়েত তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমা ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের কারণে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন হাজারো মুসল্লি। রাস্তাঘাটে যানবাহন স্বল্পতার কারণে মুসল্লিরা বিকল্পভাবে এজতেমাস্থলে আসছেন। চরম দুর্ভোগ সত্ত্বেও সকল বাধা উপেক্ষা করে তবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা বিশ্ব এজতেমা ময়দানে আসছেন। এদিকে, বিশ্ব এজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবরোধ ও হরতাল তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গবর্নরস। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বোর্ড অব গবর্নরসের সদস্য ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, লাগাতার অবরোধ এবং কয়েকটি জেলায় হরতালের ফলে মুসল্লিরা আতঙ্কে ভুগছেন। প্রয়োজনীয় যানবাহনের অভাবে তাঁরা এজতেমাস্থলে যেতে পারছেন না। বেনাপোলসহ অন্য স্থলবন্দরেও অনেক মুসল্লি­আটকা পড়েছেন তাই মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গবর্নরের সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোঃ, আব্দুল্লাহ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোঃ আফজাল উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ‘বিশ্ব এজতেমা’ উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তুরাগ নদে নৌ টহল ছাড়াও আকাশ পথে টহল দেবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। এ ছাড়া ময়দানজুড়ে থাকছে গোয়েন্দারা। স্থাপন করা হয়েছে একাধিক কন্ট্রোল রুম। ময়দানের আশপাশের সব বস্তি, হোটেল, রেস্ট হাউসসহ সন্দেহভাজন জায়গায় নিয়মিত তল্লাশি অব্যাহত থাকবে। আজ থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিগত বছরের মতো এবারও তাবলীগ জামাতের ৪৯তম ‘বিশ্ব এজতেমা’ শুরু হচ্ছে। আজ থেকে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের এজতেমা চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় ধাপে এজতেমা শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করছেন। এজতেমা উপলক্ষে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ উর্ধতন পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা এজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেছেন। র‌্যাব মহাপরিচালক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এজতেমা ময়দানকে ৪টি ভাগে ভাগ করে চব্বিশ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এজতেমা ময়দান ও তৎসংলগ্ন এলাকাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। নজরদারির জন্য পুরো ময়দান ঘিরে থাকছে র‌্যাবের ৯টি অবজারভেশন পোস্ট। ময়দানের আশপাশের এলাকায় সন্দেহজনক সকল হোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস, বস্তি ও অন্যান্য সন্দেহভাজন স্থানে তল্লাশি চলছে। এজতেমাস্থলের অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে ও বিশেষ পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি ও মোটরসাইকেলযোগে টহল দেয়া হচ্ছে। নৌটহলের পাশাপাশি র‌্যাবের একটি চৌকস দল হেলিকপ্টারযোগে এজতেমা ময়দানকে ঘিরে পর্যায়ক্রমে টহল দেবে। পুরো ময়দানের ওপর নজরদারি করা হবে। এজতেমাস্থলের পাশেই একাধিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ সিসিটিভি লাগানো হয়েছে ময়দানসহ আশপাশের এলাকায়। এজতেমায় আগতদের জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বক্ষণিক থাকছে র‌্যাবের মেডিক্যাল টিম। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের অন্যত্র নিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকছে র‌্যাবের এ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়া র‌্যাবের তরফ থেকে মুসল্লিদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজতেমায় আগত মহিলা মুসল্লিদের সহায়তায় থাকছে র‌্যাবের মহিলা সদস্য। বিদেশী অতিথিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাবের ব¤¦ ডিসপোজাল স্কোয়াড, স্ট্রাইকিং ফোর্স সর্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এজতেমা ময়দানের প্রবেশের অবৈধ পথ বন্ধ করা হয়েছে। প্রবেশ পথগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি, টহল জোরদার, সন্দেহভাজন সকল স্থান, ব্যক্তি, মালামালসহ বিছানাপত্র তল্লাশি করা হচ্ছে। আখেরি মোনাজাতের দিনেও থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। আখেরি মোনাজাতের পর র‌্যাবের গাড়ি দিয়ে আশপাশের বাস টার্মিনাল এলাকায় বিনা পয়সায় মুসল্লিদের সামর্থ্যানুযায়ী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে যানবাহন সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা আটকা পড়েছেন। ফলে এজতেমা ময়দানে এজতেমা শুরুর আগের দিন মুসল্লিদের যে ভিড় হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। অবরোধের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষজনও। এ বিশ্ব এজতেমায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ তবলীগ অনুসারী মুসল্লিদের ও সাধারণ মানুষ যোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার লাগাতার অবরোধের কারণে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মুসল্লিদের নিবিঘেœ বিশ্ব এজতেমা আশার। অবরোধের বাধা সত্ত্বেও মুসল্লিরা হেঁটেই রওনা হয়েছেন টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দানের দিকে। আজ শুক্রবার থেকে রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বিশ্ব তবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। আগামী ১১ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে এবং মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৮ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব এজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। আজ প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর আনুষ্ঠানিক আয়োজনের মাধ্যমে তবলীগের বুজুর্গ মুরব্বিরা এর সূচনা করার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবারই বিশ্ব এজতেমার বিশাল ময়দানে লাখো মুসল্লি জমায়েত হওয়ায় বাদ মাগরিব থেকেই মুসল্লিদের মাঝে হেদায়েতী বয়ান শুরু হয়েছে।
×