ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিপজ্জনক মুহূর্তে ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

বিপজ্জনক মুহূর্তে ইউরোপ

ফ্রান্সের এক পত্রিকা অফিসে বুধবার অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে সামরিক কায়দায় হামলা চালানোর ঘটনায় ইউরোপ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। অথচ মহাদেশটির কোন কোন মহল এরই মধ্যে অভিবাসীবিরোধী অনুভূতিতে উত্তেজিত রয়েছে। ইসলামকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার জন্য পরিচিত ওই পত্রিকার অফিসে হামলা ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্টের মতো কড়া ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে পুষ্টি যোগাবে। বিশ্লেষণ নিউইয়র্ক টাইমসের লন্ডনের কিংস কলেজের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব র‌্যাডিক্যালাইজেশনের ডিরেক্টর পিটার নিউম্যান বলেন, এটি ইউরোপীয় সমাজগুলোর জন্য এক বিপজ্জনক মুহূর্ত। জিহাদী সংগঠনগুলোর সমর্থকদের মধ্যে উগ্রপন্থী মনোভাবের বিস্তার ঘটছে এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী শ্রেণী ক্রমশ নিজেদের অধিকারবঞ্চিত এবং এলিটদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বলে বোধ করছে। এতে পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। ইসলাম ও উগ্রপন্থা বিষয়ক ফরাসী প-িত অনিভিয়র রয় প্যারিস হামলাকে পরিমাণগত সেহেতু গুণগত দিক দিয়ে পরিবর্তনকারী ঘটনা বলে অভিহিত করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে হামলার লক্ষ্যস্থল এবং এতে নিহতদের সংখ্যার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সর্বাধিক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে এ হামলা চালানো হয়। তার মতে, তারা মানুষের মনে আঘাত দিতে এটি করেছিল এবং এতে তারা সফল হয়েছিল। এটি ছিল ১৯৬০-এর দশকের প্রথম দিকে আলজেরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফরাসী ভূখ-ে পরিচালিত সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এতে পত্রিকাটির শীর্ষ সম্পাদক, বিশিষ্ট কয়েকজন কার্টুনিস্ট ও পুলিশ অফিসারসহ ১২ জন নিহত হন। ওই হামলার ফলে প্যারিস যন্ত্রণাকাতর হয়ে পড়ে। আরও একটি হামলা হতে পারে বলে ব্যাপকমাত্রায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের বেষ্টনীর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দিদিয়ে কাঁতাত (৩৪) বলেন, আমরা ক্রমশ নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। যদি আজ এটি ঘটতে পারে, তবে আবারও এমনটি হয়ত আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে ঘটবে। কাঁতাত বলেন, ওই হামলা অভিবাসীবিরোধী মনোভাবকে আরও উস্কে দিতে পারে। ইউরোপে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভবাসীবিরোধী মনোভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অর্থনীতির দুরবস্থা, বেকারত্ব, অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সীমান্তের অরক্ষিত অবস্থার জন্য অংশত এটি দায়ী। অভিবাসীদের প্রতি ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি ও ন্যাশনাল ফ্রন্টের মতো প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর এবং জার্মানির পেট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান্স এ্যাগেইস্ট ইসলামাইজেশন অব দ্য ওয়েস্টের মতো স্বল্প পরিচিত দলগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করছে। শেষোক্ত দলটির উদ্যোগে সোমবার জার্মানির ড্রেসডেনে ১৮ হাজার লোক মিছিল করে। সুইডেনে সম্প্রতি মসজিদগুলোর ওপর তিনবার হামলা চালান হয়। সে দেশে অভিবাসীবিরোধী ও ইমালামপন্থী বিরোধী সুইডেনের ডেমোক্র্যাটস পার্টি সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায় শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ সমর্থন লাভ করে। শার্লি হেবদো পত্রিকাটিতে কর্কষ, কুরুচিপূর্ণ ভাষায় এবং কখনও কখনও বাণিজ্যিক স্বার্থে মহানবী মুহম্মদের (স.) ছবি প্রকাশসহ প্রতিটি ইসলামী আচরণের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করা হয়। এটি উগ্র ফরাসী ধর্মনিরপেক্ষতার এক প্রতীকে পরিণত হয়। এটি ফ্রান্সের রক্ষণশীল ইসলামের উত্থানকে এর সত্যিকারের শত্রু বলে দেখে থাকে। ফ্রান্সেই ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস বলে ধারণা করা হয়। ওই হামলা কোন কোন মুসলিমের মনে প্রতিশোধের ভয় জাগিয়ে তুলেছে। আরনদ এন গোমা (২৬) বলেন, কেউ কেউ যখন সন্ত্রাসবাদের কথা ভাবেন, তখন তাঁরা মুসলমানদের কথা ভাবেন। সামির ইলাত্রাসি (২৭) এতে সম্মতি দিয়ে বলেন, ইসলামভীতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, যখন কিছু ব্যক্তি এ ধরনের সন্ত্রাসীদের দেখতে পায়, তখন তারা তাদের অন্যান্য মুসলিমের সঙ্গে এক করে দেখে। আর ডানপন্থীরাই এ থেকে লাভবান হতে যাচ্ছে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস ডি ম্যাজিয়েরি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি গুরুতর। উদ্বিগ্ন হওয়া এবং পূর্ব সতর্কতা অবলম্বনের কারণ রয়েছে। কিন্তু ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। তবে প্রত্যেক সন্ত্রাসী হামলার ফলস্বরূপ অভিবাসীবিরোধী নীতি মূল ধারার দলগুলোর কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। যেমন-ব্রিটেনে বিরাটসংখ্যক মুসলমানের বাস ও সেখানকার ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিদায় নেয়া এবং অভিবাসনের ওপর কড়াকড়ি আরোপের আহ্বান জানিয়ে এসেছে। দলটি অভিবাসনকে ব্রিটিশ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের প্রতি বিপজ্জনক বলে দেখছে। মূল ধারার দলগুলোও অভিবাসনের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নিউম্যান বলেন, এরূপ পাল্টা ব্যবস্থার ফলে ইউরোপের মুসলিম জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা হলো সাধারণ মুসলিম যারা ইউরোপে বসবাস করার চেষ্টা করছে।
×