ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকের ছোবল

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

মাদকের ছোবল

ভিন্ন আবহের সাময়িক আনন্দলাভের কৌতূহল থেকে একবার মাদক গ্রহণের পর নেশার জটিল জালে জড়িয়ে পড়ছে যুব সমাজ। আর নেশার উপকরণ সুলভ হয়ে ওঠায় সেই জটাজাল ছিন্ন করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা হচ্ছে না তাদের। মাদক ব্যবসায়ীরা সুকৌশলে এই মারণবাণিজ্য চালু রেখে যুব সমাজকে খাদের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তারা গড়ে তুলছে টাকার পাহাড়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী দেশে মাদকের বাজার বার্ষিক প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ইয়াবা নামের ক্ষুদ্রকায় ট্যাবলেটের বাজারই প্রায় অর্ধেক। গত ছয় বছরে ইয়াবা আটকের পরিমাণ ৭৭ গুণ বাড়লেও প্রতিবেশী দেশ থেকে ইয়াবার চালান আসা কিছুতেই থামছে না। বলাবাহুল্য, আটকের তুলনায় ইয়াবার ব্যবহার বহুগুণ বেশি। দেশে অপর যে নেশাদ্রব্যটি ব্যাপকভাবে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে সেটির নাম ফেনসিডিল। মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে উঠেছে ইয়াবা তৈরির বহু কারখানা। মিয়ানমারে রীতিমতো এটি কুটিরশিল্প। অপরদিকে ভারতীয় সীমান্তে ফেনসিডিল তৈরির শতাধিক কারখানা গড়ে ওঠার বিষয়টিও বিভিন্ন মহলে আলোচিত। লক্ষণীয়, মিয়ানমারে ইয়াবার ব্যবহার নেই; যেমন ভারতে নেই ফেনসিডিলের চাহিদা। বাংলাদেশের মাদক ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ীই ওই দুটি দেশের সীমান্ত এলাকায় দু’ধরনের মাদক ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। মঙ্গলবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে কি করণীয় ও এর প্রতিরোধের উপায়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ও তরুণ সমাজ ধ্বংসের যে চিত্র তুলে ধরেন বক্তারা তাতে সমাজের বিবেকবান অভিভাবকদের মৌন থাকার কোন সুযোগ নেই। দেশে মাদকাসক্ত ৭০ লাখের অধিকাংশই তরুণ ও যুবা। নীল দংশনে মুমূর্ষু প্রজন্মকে রক্ষার জন্য সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। মাদকবিরোধী অনুষ্ঠান, সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় তরুণদের বেশি করে যুক্ত করা চাই। পারিবারিকভাবেও কিছু করণীয় রয়েছে। সন্তানকে সময় দেয়া, তাকে সতর্ক ও সচেতন করে তোলার কাজটি করতে হবে পরম যতেœর সঙ্গে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সদিচ্ছার পরিচয় রাখতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা করলেও অভিযুক্ত রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে পারঙ্গমতা দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডে ও সিঙ্গাপুরে মাদক ব্যবসায়ী এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মৃতু্যুদ- ঘোষণা করা হয়েছে। নিজ নিজ দেশে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো মাদক উৎপাদন বন্ধের জন্য ভারত ও মিয়ানমার সরকারকে কিভাবে অনুরোধ ও সম্মত করা যায় সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট মহলকে ভাবতে হবে। মাদকের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে না পারলে দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের এর মারণ ছোবল থেকে কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
×