ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সামরিকায়নে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

সামরিকায়নে পাকিস্তান

জঙ্গী উৎপাদন ও লালন-পালন যাঁরা করে আসছেন বলে প্রচার রয়েছে, তাঁরাই তা নিধন করার দায়িত্ব পাবার আড়ালে কত কি করেন তা বোঝা দুঃসাধ্য নয়। গণতন্ত্র আর সামরিকতন্ত্র কিংবা জঙ্গীতন্ত্র পরস্পরের হাত ধরে কখনও চলতে পারে না। বরং পরস্পরবিরোধী তারা। কিন্তু গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে যে সামরিক জান্তারা শাসন বহাল রাখতে পারেন- তার জ্বলন্ত নমুনা পাকিস্তান বার বার প্রমাণ করছে। সবশেষে তারা সংবিধান সংশোধন করে সামরিক জান্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের নির্মূল করাসহ বিচারের ব্যবস্থা নেয়ার। সিভিল প্রশাসন তথা বিচার বিভাগকে উহ্য রেখে জান্তার বিচার ব্যবস্থা চালু গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য কখনও সুফলদায়ক যে নয় তা পাকিস্তানী রাজনীতিক ও শাসকরা ভালই জানেন। সেই যে ১৯৫৮ সালে সেনাপ্রধান আইয়ুব খান ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করলেন এবং সামরিক শাসন বহাল রেখে দেশকে জান্তার অধীনে নিয়ে গেলেন, তার থেকে দেশটি আর মুক্ত হতে পারছে না। গণতন্ত্র নামক সোনার হরিণটির নাগাল আর পায়নি পাকিস্তান নামক অদ্ভুতুড়ে রাষ্ট্রটি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা বাংলাদেশ দখল করে নারকীয় গণহত্যা চালায়। তাতে তাদের নৈতিক অধঃপতন এমন নিচুমাত্রায় পৌঁছে যে, পরে তারা নিজ দেশকেই জঙ্গীবাদের আখড়ায় পরিণত করেছে, যা আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে তাদেরই বধ করছে ক্রমাগত। আফগান হতে সোভিয়েত সেনা হটাতে সেই যে মার্কিন সহায়তায় তালেবানসহ মুজাহিদদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাকিস্তানী সেনারা নাশকতা কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের দেশটাকে জঙ্গীদের আস্তানায় পরিণত করেছে, তা ডালপালা ছড়িয়ে এখন স্রষ্টাকেই ধ্বংস করতে সশস্ত্র পন্থা বেছে নিয়েছে। সবশেষ জঙ্গীরা পেশোয়ারে সেনা স্কুলে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ১৩৫ শিশুকে হত্যা করে, যা পাকিস্তানী সেনাসহ শাসকগোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। নিজেদের সৃষ্ট জঙ্গীরা নিজেদের ঘাড়ে চেপে বসায় টনক নড়েছে হয়তবা। তাই তোড়জোড় শুরু হয়েছে জঙ্গীবিরোধী তৎপরতার। যে জঙ্গীবাদের বিকাশ তারা ঘটিয়েছে দিনের পর দিন- তাকে বিলীন করা যে সহজতর তা নয়। কারণ সেনাবাহিনীতে এখনও জঙ্গী সমর্থকরা সংখ্যায় কম নয়। তালেবান, আল কায়েদা, হাক্কানী, লস্কর-ই-তৈয়বা ইত্যাদি নানা নামের বহু সংগঠন পাকিস্তানজুড়ে তৎপর। এরা বিভিন্ন দেশে জঙ্গীতন্ত্র রফতানি করে থাকে। এই জঙ্গীরা বিভিন্ন দলের সমর্থন পেয়ে আসছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো জঙ্গীদের বিচার করার পদক্ষেপ নিয়েছে সর্বসম্মতভাবে। তারা জঙ্গীদের মদদদাতা সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে জঙ্গীদের বিচার করতে। এজন্য সংবিধান সংশোধন করেছে। জারদারির পিপিপি প্রথমে বিরোধিতা করে এ কারণে যে, সামরিক আদালত গঠনে নতুন আইনে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রধানমন্ত্রী দু’জনেই কারাবন্দী হবেন। আদালতের অপব্যবহার হওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। জঙ্গীবাদে বিশ্বাসী ইমরান খানও গাঁইগুঁই ছেড়ে মেনে নিয়েছেন সেনাদের প্রস্তাব। আইনটির অপব্যবহারে যে রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ পেশাজীবীরা শিকার হবেন না, তা বলা যায় না। কারণ সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় নির্বাচনে গঠিত নওয়াজ শরীফ সরকারকে সেনাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হয়েছে। গণতন্ত্রহীন পাকিস্তানে এটাই স্বাভাবিক।
×