ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৌসুমের সব শিরোপায় চোখ শেখ রাসেলের

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

মৌসুমের সব শিরোপায় চোখ শেখ রাসেলের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেষ হয়েছে ক্লাবগুলোর চুক্তির মেয়াদ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফুটবলাররা যেমন গত মৌসুমের পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে বাড়াতে চাইছেন পারিশ্রমিকের অর্থের পরিমাণ, তেমনি পিছিয়ে নেই ক্লাব কর্তৃপক্ষও। ফুটবলারদের পারফর্মেন্স ও দলের প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে হিসেব মেলাতে শুরু করে দিয়েছে বড় ক্লাবগুলো। দলবদলের মৌসুম শুরু হতে এখনও বাকি কয়েকদিন। এরই মধ্যে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে দেশীয় ফুটবলের দলবদলের পালে। গত মৌসুমের সাফল্য বা ব্যর্থতার হিসেব কষতে শুরু করেছে ক্লাবগুলো। আসন্ন মৌসুমের জন্য শক্তিশালী দলগঠনের পরিকল্পনা করছে ক্লাবগুলো। কিন্তু বাফুফের বিদেশী ফুটবলারের সংখ্যা কমানোর ঘোষণায় নতুন করে সবকিছু পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন ক্লাব কর্মকর্তারা। ৩০ হোন্ডার গর্জন, ১০ ঘোড়ার গাড়ির টুকটুক শব্দ, ব্যান্ডপার্টির বাদ্য-বাজনা আর শ’খানেক সমর্থকদের নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভবন চত্বরটা বুধবার বিকেলে ছিল উষ্ণতায় পরিপূর্ণ। যেন হার মানল মাঘের শৈত্যপ্রবাহ। নতুন ফুটবল মৌসুমের দলবদলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটা জাঁকজমকের সঙ্গেই শেষ করল শেখ রাসেল চক্র লিমিটেড। শক্তিশালী বা ভালমানের দলগঠন করার জন্য দরকার প্রচুর অর্থ। সেটা এবার ভালই খরচ করেছে ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হওয়া ক্লাবটি। অঙ্কটা হচ্ছে ৮ কোটি টাকারও বেশি! দলে আছে জাতীয় দলে খেলছেন এমন সাত ফুটবলার। তাছাড়া আগে জাতীয় দলে খেলেছেনÑ এমন ফুটবলার আছেন আরও পাঁচ জন। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা হলেন এমিলি, মিঠুন, হেমন্ত, লিটন, মিশু, তপু ও জাহিদ। আগে জাতীয় দলে খেলেছেন মামুন খান, রেজাউল, ওয়ালী ফয়সাল, ইয়াসিন ও শাহেদ। দলে মোহামেডানের ৬, আবাহনীর ৫, মুক্তিযোদ্ধার ৩, শেখ জামালের ১, ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের ৩, চট্টগ্রাম আবাহনীর ১, টিম বিজেএমসির ১ জন করে খেলোয়াড় আছেন। এছাড়া বাকি ৮ খেলোয়াড় আছেন, যারা গত মৌসুমেও রাসেলের হয়ে খেলেছেন। বিদেশী প্লেয়ার আছেন আপাতত দুজন। একজন সার্বিয়ান ডিফেন্ডার বোজান প্যাট্রিক (২০১২-১৩ মৌসুমে রাসেলের হয়ে খেলেছেন) এবং আরেকজন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার এনকোচা কিংসলে (গত মৌসুমে খেলেছেন মুক্তিযোদ্ধায়)। এর আগে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডও দলবদল করেছে। কিন্তু রাসেলই প্রথম ক্লাব, যারা এমন জাঁকজমকভাবে দল বদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করল। শেখ রাসেলের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দ (লাভলু) বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে দলের খেলোয়াড়দের তালিকা তুলে দেন বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায়ের হাতে। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেলের মন্টেনিগ্রোর কোচ ড্রাগান ডুকানোভিচ, বাফুফের পেশাদার লীগ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমসহ শেখ রাসেলের ফুটবলাররা। রাসেলের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দ বলেন, ‘গত মৌসুমে আমরা ভাল দলগঠন করতে না পারায় ভাল রেজাল্ট আসেনি (প্রিমিয়ার লীগে ১০ দলের মধ্যে ষষ্ঠ)। সেটা মাথায় রেখেই এবার চেষ্টা করেছি ভাল-শক্তিশালী দলগঠন করার। আশা করি এ মৌসুমে আমরা ভাল করব এবং ভাল মানের খেলা উপহার দেব। এবার আরও যে তিন বিদেশী প্লেয়ার আনব, কথা দিচ্ছি এমন ভাল মানের প্লেয়ার এর আগে বাংলাদেশ আগে কখনই আসেনি।’ বাদল রায় বলেন, ‘রাসেলকে অভিনন্দন তারা আজ অনেক সুন্দর ও জাঁকজমকভাবে দল বদল করায়। রাসেল অতীতে অনেক শিরোপা জিতেছে। আশা করি তারা এবার ও ভবিষ্যতে আরও অনেক শিরোপা জিতে অতীতের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করবে।’ রাসেলের কোচ ড্রাগান বলেন, ‘সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা। নতুন বছরে রাসেলের কোচ হিসেবে আমার কাজ হবে দলকে শিরোপা জেতাতে সাহায্য করা। গত মৌসুমে রাসেল ঘরোয়া আসরে কোন শিরোপা না জিতলেও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপের বাছাইপর্বে তারা আমার কোচিংয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আশা করি এ মৌসুমে আমরা একাধিক শিরোপা জিতব। গতবারের চেয়ে এবার আমাদের দলটি আরও ভাল হয়েছে। এবার আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবে শেখ জামাল এবং আবাহনী।’ দলের তিন ফুটবলার জাহিদ হোসেন, ইয়াসিন খান ও শাহেদুল আলমকে নিয়ে সমস্যা আছে। শেষের দুজন যথাক্রমে শেখ জামাল ও আবাহনীর কাছ থেকেও দলবদলের নিমিত্তে অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। আর জাহিদ কদিন আগে তাঁর গত মৌসুমের ক্লাব মোহামেডানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাফুফে ডিসিপ্লিনারি কমিটি দ্বারা মোহামেডান থেকে গত মৌসুমে পাওয়া মোট পারিশ্রমিকের অর্ধেক ফেরত দেয়া, অন্যথায় ঘরোয়া লীগে কোন ক্লাবের হয়ে এক বছরের জন্য খেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। এই তিনজনের বিষয়গুলো অচিরেই সুরাহা হয়ে যাবে এবং জাহিদের যেকোন অবস্থাতেই তিনি রাসেলের তালিকাভুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকবেন বলে জানায় রাসেল কর্তৃপক্ষ। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর দায়িত্ব নিয়েছেন রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যানের। এ উপলক্ষে আগামী ৯ জানুয়ারি ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এই সম্মেলনে রাসেলের প্লেয়াররা ক্লাবের জার্সি পরে আবারও হাজির হবেন এবং এখানেই ঘোষণা করা হবে রাসেলের নতুন অধিনায়কের নাম। গত মৌসুমে অধিনায়ক ছিলেন ফরোয়ার্ড মিঠুন চৌধুরী। দলবদল শেষে তাঁকে দেখা গেল কোচ ড্রাগানের সঙ্গে খোশ-মেজাজে এবং আলিঙ্গনবদ্ধ অবস্থায়। এ সময় মজা করে মিঠুন বলেন, ‘কোচ আমাকে যেহেতু অনেক পছন্দ করেন, কাজেই আমি আশা করতেই পারি এবারও তিনি আমাকেই ক্যাপ্টেন বানাবেন। না বানালেও ক্ষতি নেই!’ শেখ রাসেল স্কোয়াড ॥ গোলরক্ষক : মামুন খান, রাসেল মাহমুদ লিটন, মাসুদ রানা, রাকিবুল ইসলাম রনি; রক্ষণভাগ : বোজান প্যাট্রিক, আসাদুজ্জামান বাবলু, মোহাম্মদ রকি, আমিনুল ইসলাম, ওয়ালী ফয়সাল, রেজাউল করিম, ইয়াসিন খান, তপু বর্মণ, নজরুল ইসলাম, সোহেল রানা, আব্দুল হামিদ শেখ ভাষানী, মুরাদ হাসান; মধ্যমাঠ : রুম্মান হোসেন, শেখ মোঃ আশরাফ হোসেন, জাহিদ হোসেন, জামাল হোসেন, শাহেদুল আলম, ফজলে রাব্বি, আতিকুর রহমান মিশু, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, মোখলেছুর রহমান, আবু সুফিয়ান ইউসুফ শিফাত; আক্রমণভাগ : জাহিদ হাসান এমিলি, মিঠুন চৌধুরী ও এনকোচা কিংসলে।
×