ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুধবার বললেন বাংলাদেশের কোচ

দ্বিতীয় পর্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন হাতুরাসিংহে

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

দ্বিতীয় পর্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন হাতুরাসিংহে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দল ঘোষণার জন্য বুধবারই ছিল শেষদিন। দুই দিন আগেই বাংলাদেশ দল ঘোষণা করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে দল নিয়ে ঠিকই শেষদিনে নিজের অভিব্যক্ত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। বলে দিয়েছেন যে দল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে তিনি খুশি। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘যে দলটি গঠন করা হয়েছে তা নিয়ে আমি খুশি।’ তবে নিজের পছন্দের ক্রিকেটার যে পুরোপুরি মিলেনি, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে দল হয়েছে সেই দল নিয়েই এখন ভাবছেন হাতুরাসিংহে। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন দেখছেন। বলে দিয়েছেন, ‘দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে চাই।’ মাশরাফি বিন মর্তুজা গত বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও মানসিক জোরের ওপর বিশ্বাস রেখে দেশের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপ খেলতে চেয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু এ পেসারকে নির্বাচকরা দলে রাখেননি। এবার অধিনায়ক হয়েই বিশ্বকাপ খেলবেন মাশরাফি। তার ডেপুটি থাকবেন সাকিব আল হাসান। মাশরাফির কাঁধে নেতৃত্ব দিয়েই ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দল থেকে সেরা ১৫ সদস্যকে বেছে নেয়া হয়েছে। দলে ওপেনার তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মাশরাফি বিন মুুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক, নাসির হোসেন, আল আমিন হোসেন, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম ও সৌম্য সরকার আছেন। অবশেষে নাসির হোসেন প্রিমিয়ার লীগে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে একটি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৪ ম্যাচে ৪৯৫ রান করে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেয়ে গেছেন। কিন্তু লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনের কোন স্থানই হয়নি। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাকেরও চূড়ান্ত দলে জায়গা হয়নি। এরপরও খুশি কোচ। বলেছেন, ‘যখন দল নির্বাচন করা হয়, আমার পরামর্শ নেয়া হয়েছে। আমি খুশি। কোচ হিসেবে যাদের চাওয়া হবে সবাইকেই একসঙ্গে মিলবে না। এখানে আলোচনার ব্যাপার আছে। যদি ১২ থেকে ১৩ জন পছন্দের ক্রিকেটার মিলে তাহলে খুশি হওয়া যায়। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা করাও যায় ভাল মতো। আমাদের খুব ভাল একটি দলই হয়েছে। যেখানে সবদিকেই সমন্বয় আছে।’ দল গঠন করা হলেও ইনজুরি নিয়ে ভাবনা এখনও রয়েই গেছে। তামিম, মুশফিকের ইনজুরিই সামনে চলে আসছে। কিন্তু কোচ এ নিয়ে একেবারেই ভীত নন, ‘এটা ভয়ের কোন বিষয় নয়। কিছু সময় ভালভাবে কাজ করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ফিজিও ট্রেইনারের পরামর্শ ও পর্যালোচনার মধ্যে থাকলেই হয়ে যাবে। এখনও এক মাস বাকি।’ এ দল নিয়ে কতদূর যাওয়া যাবে? এমন প্রশ্নে হাতুরাসিংহে বলেছেন, ‘আমি সব পথেই এগিয়ে যেতে পছন্দ করি। বাস্তবতাও সামনে থাকে। তবে প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা। এ জন্য সবাইকেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ সৌম্য সরকার সুযোগ পেয়ে গেছেন। কিন্তু এ পেস অলরাউন্ডারের ভূমিকাটা কী হবে? কোচ বললেন, ‘আমি দেখেছি সৌম্য ১-৭ নম্বর পর্যন্ত যে কোন স্থানে খেলতে পারে। সঙ্গে বোলিংটা তো আছে। আমি তাকে প্রথমেই ব্যাট করতে দেখতে চাই। এরপর বোলিংয়ে যদি কিছু করতে পারে সেটা বোনাসই মিলবে। তার কাছ থেকে ১০ ওভার বোলিং আশা করছি না।’ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দল ঘোষণার দিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন জুবায়ের হোসেনকে নিয়ে একটু ভাবনা করা হয়েছে, তা কী সত্যি? কোচকে প্রশ্ন করতেই জবাব দেন, ‘জুবায়ের এ দলে থাকলে ভাল লাগত। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে লেগ স্পিনার অনেক কাজের। আমার চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে তাই দেখেছি। যে কোন স্থানেই লেগ স্পিনার তৈরির কদর রয়েছে। কারণ, লেগ স্পিনাররা উইকেট নেয়। কিন্তু এখন এটিই সত্য, সে দলে নেই।’ হাতুরাসিংহেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় জুবায়ের না থাকায় অখুশি আপনি? জবাব দেন, ‘দলে সাকিব আল হাসান আছে। সেও বাঁহাতি স্পিনার। বেশি বাঁহাতি স্পিনার হয়ে যাওয়াটাও ঠিক নয়। নির্বাচকরা ভাল দলই গঠন করেছেন।’ বিশ্বকাপ শুরু হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের খেলা শুরু ১৮ ফেব্রুয়ারি। হাতে আছে এক মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে দল যাবে এই মাসের শেষদিকে। তখন অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দল পাবে দুই সপ্তাহ। তা কী প্রস্তুতির জন্য কম সময় নয়? হাতুরাসিংহে বলছেন, ‘দুই সপ্তাহ সময় হিসেব করলে হবে না। আমি ব্রিসবেনে প্রস্তুতি ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবছি। ১২-১৪ দিন আরও আমাদের হাতে আছে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যে কোন এশিয়ার দলকেই সমস্যায় পড়তে হবে।’ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও বাংলাদেশের ম্যাচ রয়েছে। হাতুরাসিংহেরও জন্ম শ্রীলঙ্কায়। সেই ম্যাচটি নিয়ে কোচও অপেক্ষমান, ‘সত্যি বলতে আমি অপেক্ষায় আছি। আমি বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছি। শুধু শ্রীলঙ্কার খেলা নিয়েই নয়, আমি বড় দলগুলোকে হারানোর দিকে নজর দৃষ্টি। এটা আমাদের জন্য সুযোগ। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা আমার জন্য বিশেষ ম্যাচই। এ ম্যাচে ভালভাবেই গেম প্ল্যান করতে হবে। আমি জিততে চাই।’ দলে অভিজ্ঞ স্পিনার রাজ্জাক নেই। রাজ্জাককে নিয়েও এখন নয়, দল নিয়ে বিশ্বকাপে কতটা ভাল করা যায় তা নিয়েই ভাবছেন হাতুরাসিংহে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটকে রাজ্জাক অনেক কিছুই দিয়েছে। কিন্তু জিম্বাবুইয়ে সিরিজের আগে ইনজুরিতে পড়ে যায়। এ সময়ে অন্য ক্রিকেটাররা অনেক বেশি ভাল খেলে ফেলে। আমি জানি না রাজ্জাকের ভবিষ্যত কী। কারও ভবিষ্যত নিয়েই বলতে পারব না। আমি মনে করি এখনও রাজ্জাক ভাল ক্রিকেটার।’ সবকিছুর উর্ধেই হাতুরাসিংহে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে চান। আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড, এ দুই দুর্বল দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো দল আছে। যেভাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা যায়, সেই চেষ্টাই করতে চান কোচ হাতুরাসিংহে।
×