ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষের বন্ধু অবুঝ কৈতর, চমৎকার ওড়াউড়ি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

মানুষের বন্ধু অবুঝ কৈতর, চমৎকার ওড়াউড়ি

মাকসুদ আহমদ ॥ আহা রে বৃষ্টির রাত, সোহাগী লো, আমি থাকি দূর পরবাসে।/ কান্দে না তোমার বুকে একঝাঁক বুনো পাখি অবুঝ কৈতর...। আসলেই কাঁদে না। বরং মনের সুখে উড়ে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায়। মানুষের খুব কাছাকাছি থাকে নির্ভয় এ পাখি। কেমন নির্ভয়, কতটা কাছাকাছি জানার জন্য একবারটি ঘুরে আসা যেতে পারে চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকা। এখানে শুধু কবুতর আর কবুতর। আকাশে আছে। তারও বেশি ভূমিসংলগ্ন এলাকায়। দেখে মনে হয়, কবুতরের রাজ্য! এই রাজ্যে প্রতিদিনই আসছেন কবুতরপ্রেমীরা। নানা কাজে আসা মানুষজনও কবুতরের ডাক আর ডানা ঝাঁপটানোর শব্দ শুনছেন কান পেতে। এভাবে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে সদরঘাট এলাকার কবুতরপ্রধান এলাকা। তবে, এখানকার কবুতরগুলো আর সব কবুতরের মতো নয়। মানে, ঠিক সাদা রঙের নয় এরা। ছাই রং গায়ে মাখা। হ্যাঁ, জালালি কবুতর নামে পরিচিত। এমন নামকরণের ইতিহাস অনেকেরই জানা। সিলেটের আরেক নাম জালালাবাদ। ওখানেই প্রথম দেখা গিয়েছিল জাতটি। সিলেটে হজরত শাহজালাল (র:) এর আগমন ও ধর্ম প্রচারের ইতিহাস পাঠ করলে এই কবুতরের নাম পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী, ১৩০৩ সালে ভারতের দিল্লী থেকে এই কবুতরের একটি জোড়া সিলেটে আনা হয়। এখনও মাজারে এদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ধারনা করা হয়, এখান থেকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে জালালি কবুতর। এরই ধারাবাহিকতায় আসে চট্টগ্রামে। সদরঘাটের বিভিন্ন গুদামের খাবার খেয়ে বাঁচে এরা। শুধু বাঁচে কেন? বেশ আছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম, ডাল ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য প্রতিদিনই আসছে আদমনগর ঘাটে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে এ ঘাটে লাইটারেজ জাহাজ থেকে আমদানিকৃত পণ্য ট্রাকে তোলা হয়। হরতাল বা অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকলে ট্রাক বোঝাইয়ের পর আমদানিকৃত সব খাদ্যশস্য দিনের পর দিন রাস্তার ধারেই পড়ে থাকে। কর্ণফুলী নদীর ধারেই এ এলাকার অবস্থান হওয়ায় খাদ্যশস্যের যেমন আনলোডিং হচ্ছে তেমনি গুদামেরও অভাব নেই। মজুদের জন্য গড়ে তোলা কয়েক হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাচীনতম এসব গুদামকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পাকপাখালির আবাসস্থল। গত বুধবার সকালে সদরঘাটের এ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সড়ক অবরোধের কারণে শত শত ট্রাকের সারি। সদরঘাট স্ট্যান্ড রোড থেকে আদমঘাট পর্যন্ত শত শত ট্রাকের সারি পড়ে রয়েছে। এসব ট্রাকে বোঝাই করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। গুদামের আশ্রয়স্থলে থাকা পায়রার দল এসব ট্রাকের উপর ভর করেছে। ঠোঁট দিয়ে খুঁটে খুঁটে বস্তা থেকে বের করে নিচ্ছে খাবার। জালালি কবুতরের বেলায় ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে থাকায় কেউ শিকার করতে যান না। ফলে দিনের পর দিন এ জাতের পায়রার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এ এলাকায়। বছরের পর বছর ধরে এসব পায়রা গুদামের ওপর বাস করছে। মানুষের এখন বন্ধু এরা।
×